২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১০:৩০:৪৬ অপরাহ্ন


পদ্মায় কী ফেঁসে যাচ্ছেন ড.ইউনুস
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৬-২০২২
পদ্মায় কী ফেঁসে যাচ্ছেন ড.ইউনুস


পদ্মা সেতু নিয়ে শেষ পর্যন্ত ফেঁসে যাচ্ছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মাদ ইউনুস। দীর্ঘদিন থেকেই পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া অর্থায়ন দুর্নিতির অভিযোগ এনে বন্ধ করা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রচন্ড ক্ষোভ বিরাজ করছিল। অভিযোগ ওঠে বিশ্বব্যাংককে ওই দুর্নিতির অভিযোগ আনতে তদবির করেছিলেন ড. মুহাম্মাদ ইউনুস এবং পরে তার সঙ্গে যোগ দেন অন্যান্যরা। ফলে বিশ্বব্যাংক চলে যায়। এতে করে নিজেদের অর্থায়নে নির্মিত হলো পদ্মা সেতু। যা যানচলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় ২৫ জুন শনিবার। 

এখনও এ সেতুর রেল প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়নি। সেতুর রেল যোগাযোগও চালু হয়নি। এমনি মুহূর্তে আবারও পুরানো বিষয় টেনে আনা হয়েছে। পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনের প্রাক্কালে গত ১৮ মে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে, ইমেরিটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য, আরও উচ্চ মানের। কিন্তু সেখানে সে থাকবে না। তার এমডিই থাকতে হবে।

কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।’‘ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। কিন্তু কোর্ট তো তার বয়স ১০ বছর কমিয়ে দিতে পারবে না। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। বয়সটা কমাবে কীভাবে। মামলায় সে হেরে যায়। কিন্তু প্রতিহিংসাঢ প্রতিশোধ নেয় ড. ইউনূস। আমরা যেটা শুনেছি, ড. ইউনূস ও মাহফুজ আনাম- তারা আমেরিকায় চলে যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ইমেইল পাঠায়। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিস্টার জোয়েলিক তার শেষ কর্মদিবসে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।’ 

একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আর খালেদা জিয়া বলেছিল- জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে। ওখানে চললে নাকি ভেঙে পড়বে। তার সঙ্গে তার দোসররাও বলছে। এখন তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে টুস করে ফেলে দেওয়া উচিত। আর যিনি একটা এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করেছে, তাকেও পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবানি দিয়ে উঠিয়ে নেওয়া উচিত। আবার মরে যেন না যায়। একটু পদ্মা নদীতে চুবানি দিয়ে আবার সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত। তাহলেই যদি এদের শিক্ষা হয়।’ সেটা নিয়ে বিএনপি ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক বাহাস হয়েছে। তবে এ রেশ শেষ হয়নি।  

এবার নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ২৮ জুন মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। 

বাসস জানায়- আদেশে ৩০ দিনের মধ্যে কমিশন গঠন করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ বিষযে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৮ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৭ জুন সোমবার বিষয়টি শুনানিকালে আদালত পদ্মা সেতু নিয়ে বিরোধিতাকারীদের খুঁজে বের করতে হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। শুনানিকালে আদালত বলেন, পদ্মা সেতু জাতীয় সম্পদ, জাতীয় উন্নয়ন। আমাদের অহংকার। জাতীয় স্বার্থে পদ্মা সেতুর বিরোধিতাকারীরা উন্নয়নের বিরুদ্ধে। এ ধরনের জাতীয় স্বার্থ ও উন্নয়নের বিরুদ্ধে যাঁরা জড়িত থাকেন, তারা জাতির ও দেশের শত্রু। তাদের খুঁজে বের করতে হবে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন ও দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানিতে ছিলেন।

পদ্মা সেতু নির্মাণ চুক্তি নিয়ে দুর্নীতির মিথ্যা গল্প সৃষ্টির নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠন বিষয়ে জারি করা রুল শুনানির জন্য গত ২৭ জুন দিন ধার্য ছিল। সে অনুযায়ী সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার আদেশ দেন আদালত।

এর আগে বাংলাদেশের একটি জাতীয় পত্রিকা, দৈনিক ইনকিলাব ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির সংখ্যায়- ‘ইউনূসের বিচার দাবি : আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো একাট্টা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরদিন ওই প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদের কথা উল্লেখ করে এ রুল জারি করেন হাইকোর্ট। 

রুলে প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করতে ‘ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৬৫ (৩ ধারা)’ অনুসারে কমিশন গঠন এবং দোষীদের কেন বিচারের আওতায় আনতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না-তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত রুল জারি করেন হাইকোর্ট। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, আইন ও যোগাযোগ সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান এবং আইজিপি’কে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। পাশাপাশি এ কমিটি বা কমিশন গঠনের বিষয়ে কি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়। 

পরে এই বছরের ২০ মার্চ রুলের জবাব ও প্রতিবেদন দিতে আট সপ্তাহের সময় চেয়ে আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে একই বছরের ৭ মে পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে কয়েক দফা সময়ের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে কমিশন গঠনের জন্য ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর একজন সদস্যের নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তিনি হলেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (কারিগরি) মো. কামরুজ্জামান। পরবর্তীতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হওয়ার রুলটি আর শুনানিতে ওঠেনি।

ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মাসেতু নির্মাণে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার ঘটনা গোটা বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে ওই ঘটনা ফলাও করে প্রচার করায় বাংলাদেশ এবং বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। সাড়ে তিন বছর আগের ওই ঘটনার পর বিশ্বব্যাংকের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি কিছু ব্যক্তিত্বের দৌড়ঝাপ, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের ক্রিয়াকর্ম ও মিডিয়ার অতি উৎসাহ পদ্মা সেতু ইস্যুতে সরকারতে বিপাকে ফেলে দেয়। যা ছিল সরকারের জন্য চরম অবমাননাকর। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। 

নানা ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেশব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশে গত ২৫ জুন শনিবার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৬ জুন  সকাল থেকে পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে।


শেয়ার করুন