১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:৪৩:১০ অপরাহ্ন


টেষ্ট ক্রিকেটে ব্যার্থতা দিনান্তর
টেষ্ট ক্রিকেট সাংস্কৃতি না থাকা মানেই কী অপসাংস্কৃতি?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৭-২০২২
টেষ্ট ক্রিকেট সাংস্কৃতি না থাকা মানেই কী অপসাংস্কৃতি?


বাংলাদেশ টেষ্ট দলের দ্বায়িত্ব নিয়েও অব্যাহত টেষ্ট সিরিজ পরাজয়ের ধারা রুখতে পারেননি বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ওয়েস্টইন্ডিজে রীতিমত দলের ভরাডুবি। ম্যাচ বা সিরিজের ব্যার্থতার দায়ভার ক্যাপ্টেনেরও। সাকিবও সে দায় এড়াতে পারেন না। কিন্তু সিরিজ শেষে তার কিছু বক্তব্য বাংলাদেদেশের ক্রিকেট সাংস্কৃতির সঙ্গে কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাকিব আল হাসান বলছেন, ‘বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট সংস্কৃতিটাই তৈরী হয় নেই।’ টেষ্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ২২ বছরে এসে এমন কথা কোনো দ্বায়িত্বশীল খেলোয়াড়ের মুখে কতটা হতাশাজনক বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেট প্রেমীর জন্য? এর দায়ভার কার? 

বিসিবি’র টানা এক যুগের বেশী সময় ধরে সভাপতির পদ অলংকৃত করে দ্বায়িত্ব নিয়ে প্রভাব বিস্তার করে চলা নাজমুল হাসান পাপন এম পি। তার তাহলে এ এক যুগে কী কর্ম্ম ছিল? তিন ফরমেটের ক্রিকেট। ওয়ানডেতে ২০১৫ সনের পর থেকে কিছুটা আস্থাশীল হয়েছে। টি-২০ ক্রিকেটে যাচ্ছেতা। টেষ্টও সে কাতারে। অথচ টেষ্টে এখণ যে অভিযোগ উঠছে, সেটার জন্য সভাপতিও দায়ী কি-না, এর উত্তর পাঠকদের কাছে। আমার মনে হয় যার অন্যতম দায়িত্বই সকল পর্যায়ে ক্রিকেট সংস্কৃতি বিস্তারের পরিবেশ গড়ে তোলা। ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো কালচার। যাদের নেই , তাদের বলে আনকালচার্ড ( দেশীয় বাংলায় খাত )। ২২ বছরে ১৩৪ টেস্ট খেলে দ্রুততম টেস্ট পরজয়ের সেঞ্চুরির কালিমা মাখা বাংলাদেশ ক্রিকেটে কি নেই - কি আছে এ প্রশ্ন করা উচিত? ওরা পেসি বাউন্সি উইকেটে খেলতে পারে না, স্লো , লো টার্নিং উইকেটে ধসে পরে, দেশের মাটিতে পারে না, যে কোনো সফরে এখনো নাদান টেস্ট ক্রিকেটে। কয়টা ব্যাটসম্যানের ৪০+ ব্যাটিং গড় আছে? সাকিবের নিজের ক্রিকেট টেস্ট মেজাজের নয়। বর্তমান যারা খেলছে, ব্যাটসম্যান হিসাবে মুশফিক , মাহমুদুল্লাহ ছাড়া কারো টেস্ট খেলার মানসিকতাই গড়ে উঠে নি। বাংলাদেশ আশরাফুল, নাঈম ইসলাম , ইমরুল কায়েসকে ব্রাত্য করে রেখেছে।  

দেখলাম গুরুত্বপূর্ণ মানুষটি ভারত ক্রিকেটের টেস্ট অর্জন নিয়ে কথা বলছে ? বলছে নিউজিল্যণ্ড নিয়েও? ভারত ক্রিকেট খেলা সবচেয়ে জনবহুল দেশ , নিউজিল্যাণ্ড সবচেয়ে ছোট দেশ। অন্ধজনে জানে টেস্ট ক্রিকেটে কোথায় এখন ভারত । কোথায় নিউজিল্যাণ্ড? 

পাকিস্তানের কথা কেন তুলনায় আসে না? প্রতিটি প্রথম সিরিজেই টেস্ট জিতেছে আব্দুল হাফিজ কার্ডারের দলটি। আফগানিস্তানের কত দিন লেগেছে টেস্ট ক্রিকেট জয় করতে ? ভাঙা গড়ার মাঝ দিয়েও ভারত পাকিস্তান , শ্রীলংকান ক্রিকেট বিশ্বকে টেক্কা দিচ্ছে। অথচ উপমহাদেশের ওই দেশগুলোর সাথেই বাংলাদেশ। ওই ক্রিকেট কালচার বাংলাদেশেও। এখানেও ক্রিকেট কালচার পূর্বপাকিস্তান থাকার সময় থেকেই। এখণ কথা উঠছে কালচার নিয়ে। অবশ্যই ওদের সঙ্গে ব্যাবধান ক্রিকেট সংস্কৃতির ,শুধু টেস্ট ক্রিকেট সংস্কৃতি কেন?

পাকিস্তান সময়ে ঢাকা ক্রিকেট সমাজকে সবচেয়ে সমজদার বলতে শুনেছি সব সফরকারী দলের মুখে।  ১৯৭৭ বিশ্ব কাপে অংশ নেয়া বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট কালচার নিয়ে উচ্ছসিত প্রশংসা করেছে বিলেতি পত্রিকা গুলো। কিন্তু ১৯৯০ দশক থেকে কালচার ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে। অসময়ের সন্তান হিসাবে বাংলাদেশ  দল ক্রিকেট দূতিয়ালি করে টেস্ট ক্রিকেটে জন্ম নিয়েছে। আজ টেস্ট ক্রিকেটে যে পরিণতি- তার যে দায়িত্ব ২০০০ থেকে থাকা সকল বিসিবি পরিষদ কে নিতে হবে। সব চেয়ে বেশি দায়িত্ব  প্রায় এক দশক দায়িত্বে থাকা বর্তমান বিসিবি পরিষদের। 

আজ যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটে ভারতের মতো সৌরভ, দ্রাবিড় , লক্ষ্মণ , থাকতো , পাকিস্তানের রমিজ রাজা , ওয়েস্ট ইন্ডিজের ডেসমন্ড হাইন্স এর মত লিজেন্ড ক্রিকেটারদের হাতে থাকতো- তাহলে বোধহয় এমন হতো না। তবে বাংলাদেশেও সে মানের না হলেও কাছাকাছিতে থাকারা রয়েছেন। যেমনটা সৈয়দ আশরাফুল হক, রকিবুল হাসান, শফিকুল হক হীরা , খালেদ ওমর রুমি,জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা , গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল সহ অনেকেই আছেন। যাদের হাতে ক্রিকেট নিরাপদ- ক্রিকেটের উন্নতি অনেকটাই নিশ্চিত। তার পরেও কেন  ক্রমাগত ব্যর্থ মানুষগুলো বিসিবিতে জমিদারি ? অনেকের ক্রিকেট খেলারই রেকর্ড নেই। টেষ্ট ক্রিকেট সেটা তো অনেক দুরের কথা। ভারতের বিদ্রোহী লীগ আইসিএলে খেলে নিষিদ্ধ হওয়া হাবিবুল বাসার কেন বিকল্পহীন ক্রিকেট নির্বাচক? মিনহাজুল আবেদীন নান্নু টেষ্ট খেলেছেন কি? হ্যা তার অনেক যোগ্যতা। কিন্তু মাঠে নেমে টেষ্ট খেলা আর না খেলে যোগ্য এর মধ্যে বিস্তর তফাৎ।  বাকি যারা আছেন তারা ক্রিকেট আয়োজক এবং প্রশাসক হিসাবে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। 

বাংলাদেশে ক্রিকেট তৃণমূলে সংগঠিত না। বিভাগীয় ক্রিকেট সংগঠন কার্যকরী হচ্ছে না। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ছাড়া আধুনিক সুবিধা গড়ে উঠে নি। নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটের আদলে তৃণমূল ক্রিকেট বিকাশের অবকাঠামো নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেট হয় দায় সারা ভাবে। তাই তৃণমুলে কাঁচা সোনা থাকলেও জহুরীদের পরিচর্যায় বিকশিত হবার পরিবেশ নেই। সুযোগ পেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটার যে ভালো করতে পারে তার প্রমান কিন্তু বর্তমানে পেস বোলারদের উন্নয়ন। 

 অনেকেই লিখছেন, অনেকেই বলছেন , কিন্তু শুনছে না কেউ। ক্রিকেটে বাংলাদেশ চলছে রিক্সায়। যেখানে বাকি ক্রিকেট বিশ্ব ছুটছে বুলেট ট্রেনে। গাড়িয়াল ভাইরা গান গাইছে আপন মনে, অণ্যদিকে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ জ্বলে পুড়ে অঙ্গার। 


শেয়ার করুন