২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৭:২৩ অপরাহ্ন


ভুল পথেই বিএনপির সরকারবিরোধী রাজনীতি
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৭-২০২২
ভুল পথেই বিএনপির সরকারবিরোধী রাজনীতি


মনে করার যথেষ্ট অবকাশ আছে, বর্জনের রাজনীতির কৌশলে সরকার, কিন্তু বিরোধীদল কিছুই অর্জন করতে পারেনি,ভবিষ্যতেও কিছু পাবে বলে মনে হচ্ছেনা। ২০০৭ থেকে অদ্যাবধি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দল, বর্জনের রাজনীতির কারণে এখন দারুণভাবে কোণঠাসা। তবে নিজেদের অস্তিত্বের কারণে কৌশল পরিবর্তন করে তাদের মূল রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসা সুবিবেচনার কাজ হবে। ২০১৪ নির্বাচন বর্জন করে কি পেয়েছে বিএনপি? একটানা তিন টার্ম ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। কোণঠাসা বিএনপি। প্রতিদিন কিছু মিডিয়া আস্ফালন ছাড়া কিছুই দৃশ্যমান নেই। জানতে ইচ্ছে করে বিএনপি নেতারা কি ভুলে গেছেন,কীভাবে রাজনীতিতে আবির্ভাব তাদের? কীভাবে ২০০১-২০০৬ হাওয়া ভবনের লুটপাট, অত্যাচার, বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করেছিল? দেশ জোড়া সন্ত্রাস, গ্রেনেড বিস্ফোরণ, এসএম কিবরিয়া হত্যা,আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা, আওয়ামী লীগের জনসভায় শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর গ্রেনেড হামলা। আইভি রহমানসহ শতাধিক মানুষের মৃত্যু এবং জজ মিয়া নাটক সাজানো এগুলো মানুষের স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি। 

২০০৯-২০২২ বাংলাদেশ পাল্টে গেছে। কারো ভালো লাগুক আর নাইবা লাগুক, দেশ এখন উন্নয়নের মহাযজ্ঞে।খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক। দুর্নীতি করে সরকারঘনিষ্ঠ কিছু মানুষবিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাচার করেছে। এখানে ওখানে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হচ্ছে। সেগুলো নিয়ে বিএনপি রাজপথে কি কোনো জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পেরেছে? পার্টি চেয়ারম্যান দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি, মারাত্মক অসুস্থ, দণ্ডিত ভাইস চেয়ারম্যান বিদেশে। ফলে মাঠে বা নির্বাচনের মাঠে যেয়ে তারা যে জনগণকে বোঝাবেন সে সুযোগ তো নেই। অন্য যারা রয়েছেন, তাদের কথার ওপর জনগণ কতটা আস্থা রাখবে? তাদের কথা বিশ্বাস করবেন। তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতির ওপর গুরুত্ব দেবেন। এগুলো অনেক ভাবনার ও পর্যালোচনার বিষয়। 

তাছাড়া অতীতেও কি এমন করেছে বিএনপি জনগণের জন্য, যে জনগণ ওদের ভোট নিয়ে নির্বাচিত করবে? ওদের দেশ নিয়ে কি বিকল্প ভাবনা আছে? কী প্ল্যান দিচ্ছে বা দিয়েছে, ক্ষমতায় গেলে তারা সেটা করে দেখাবে বা করবে। শুধুই আওয়ামী লীগ এটা ভুল করছে, ওটা ভুল করছে। এটা দুর্নীতি করছে, ওটা দুর্নীতি করছে। মানুষ এগুলো কত শুনবে। কটাইবা বিশ্বাস করবে। তাছাড়া মানুষ চোখের সামনে যখন বিভিন্ন উন্নয়ন ও তার সুফল দেখবে তখন যেটুকু ভুলত্রুটির কথা বলছেন তারা, সেটুকু তো ভুলেই যাবেন। বাংলাদেশের মানুষ আবেগপ্রবণ। মানুষ তাদের প্রাপ্ত সুফলটাই দেখে। তাছাড়া বর্তমান সরকার যে মেগা প্রজেক্ট করছে। একইসঙ্গে আরো বেশ কিছু প্রজেক্ট নিয়ে পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে সেখানে বিএনপির এমন কোন নেতা রয়েছেন যিনি ভোটের ময়দানে নতুন কিছু মেগা প্রজেক্ট করার পরিকল্পনা দিয়ে দেশ এগিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে পারবেন? মানুষ বাস্তবতা ও কথার ফুলঝুড়ি সবই বোঝেন। রাজনৈতিক নেতারা কী বললেন, না বললেন তার অধিকাংশ সারমর্মটা তারা বোঝেন না এটা ভাবা ভুল। ফলে এখানে বিএনপি অনেক পিছিয়ে। 

নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটির সঙ্গে আলোচনা বর্জন করলো, নির্বাচিত কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গেল না। এমনকি পদ্মা সেতুর মতো বিশাল জাতীয় অর্জনকে হেয় করার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েও ইতিহাসের অংশ হলো না। বর্জন করলেই কি কোনো শক্তি ওদের ক্ষমতায় বসাবে? আন্দোলন করে সরকার হটানোর কোনো ক্ষমতা নেই ওদের। সরকার পরিকল্পিত উপায়ে এগিয়ে চলেছে। স্বাভাবিক ধারায় রাজনীতিতে ফিরে এসে জনগণের সামনে ওদের পরিকল্পনা খোলাসা না করলে আগামীতে ওদের অস্তিত্ব বিলীন হতে পারে। পদ্মা সেতুর সুফল বাস্তবায়ন এমনিতেই সরকারপ্রধানের জনপ্রিয়তা দেশে বিদেশে অনেক সুসংহত করেছে। এই বছর শেষদিকে কর্তফুলী টানেল চালু হবে, মেট্রোরেলের একটি অংশ চালু হবে। অন্তত ৬টি মেগা প্রকল্প অগ্রবর্তী পর্যায়ে রয়েছে।পদ্মা সেতু বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিএনপি দক্ষিণ অঞ্চলের ৩ কোটি মানুষের বিরাগভাজন হয়েছে। যত দিন যাবে, মানসিকতা পরিবর্তন না করলে বিরোধীদলটি আরো জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। জানি দলে এখনো কিছু ভালো মানুষ আছে।  দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলে একটি রাজনৈতিক দল এমনিতেই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। নেতৃত্বের সংকটে আছে বিএনপি। নীতি বা আদর্শের সঙ্গে দেশের উন্নয়নের কৌশল সমন্বিত করে ভোটারদের সামনে উপস্থাপন না করলে শুধু মিডিয়া আস্ফালন করে কিছু হবে না।

জনঘনিষ্ঠ অনেক বিষয় নিয়ে দেশে আন্দোলন করার প্রচুর সুযোগ থাকলেও বিএনপি সেগুলো নিয়ে কিছুই করেনি,করছেও না।  দল হিসেবে তৃণ মূলে এখনো আওয়ামী লীগ অনেক সুসংগঠিত। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় অনেক দুর্নীতিপরায়ণ অনুপ্রবেশ করেছে। শুদ্ধি অভিযান করে হাইব্রিড মুক্ত হয়ে আগামী নির্বাচন করলে কোনোভাবে আওয়ামী লীগকে হারানো সহজ হবেনা। তবে বিরোধীদলগুলো সমন্বিতভাবে পরিষ্কার প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছে উপস্থাপন করে ব্যাপক জনসংযোগ করলে পার্লামেন্টে শক্তিশালী বিরোধীদলের অবস্থান নিতে পারবে। 

এটি এখন নিশ্চিত, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে হবে। সরকারপ্রধানের ভারসাম্য বিদেশ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা শক্তি কি বললো, না বললো যায় আসে না। বাংলাদেশের জনসাধারণ অনেক সচেতন। গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ এখন ভালো-মন্দ বুঝতে শিখেছে। বর্তমান সরকার আরো উদার হয়ে অযথা বাগাড়ম্বর পরিহার করে দুর্নীতি নির্মূলের পথে এগোনো এখন শুভ হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, পদ্মা সেতুর সুফল বাস্তবায়ন এমনিতেই সরকারের বাহুতে অনেক শক্তি সঞ্চার করেছে।


শেয়ার করুন