নিউইয়র্কে শিশু-কিশোরদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আসছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 17-09-2025

নিউইয়র্কে শিশু-কিশোরদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আসছে কঠোর নিয়ন্ত্রণ

নিউইয়র্ক স্টেটে শিশু ও কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক নজিরবিহীন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদমিক ফিড ও রাতের নোটিফিকেশনে শিশুদের প্রবেশ সীমিত করতে গত ১৫ সেপ্টেম্বর সোমবার ‘সেফ ফর কিডস অ্যাক্ট’ কার্যকর করতে অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিকেয়া জেমস খসড়া বিধান প্রকাশ করেছেন। নতুন বিধান অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের অভিভাবক বা গার্ডিয়ান অনুমতি ছাড়া অ্যালগরিদমিক ফিড এবং রাতের নোটিফিকেশন ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা থাকবে, যাতে সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তিমূলক বৈশিষ্ট্য থেকে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।

নিউইয়র্ক শিশুদের অনলাইন আসক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য সংকটকে একটি জনস্বাস্থ্য ইস্যু হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই আইন প্রথম গৃহীত হয় ২০২৪ সালের জুনে, যখন গভর্নর ক্যাথি হোচুল বিলটিতে স্বাক্ষর করেন। আইনটি যুক্তরাষ্ট্রে নজিরবিহীন হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তিমূলক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। তবে আইন প্রণয়নের সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, যেমন বয়স যাচাই, অভিভাবকের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া এবং তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার। সোমবার প্রকাশিত খসড়া বিধান সেই প্রশ্নগুলোর সমাধান করেছে এবং কার্যকর কাঠামো নির্ধারণ করেছে।

প্রস্তাবিত বিধান অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে শিশু ব্যবহারকারীর বয়স যাচাইয়ের জন্য কার্যকর ও পরীক্ষিত পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। শুধু সাধারণভাবে ‘আপনি কি ১৮ বছরের বেশি?’ প্রশ্ন করে যাচাই করার সুযোগ নেই। বরং সরকার প্রদত্ত পরিচয়পত্র ব্যবহার, ছবি বা ভিডিও আপলোড করা, ফোন নম্বর ও ইমেইল দ্বারা ক্রস-চেকের মতো পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। গোপনীয়তা রক্ষায় কোম্পানিগুলোকে অন্তত একটি বিকল্প ব্যবস্থা দিতে হবে, যাতে ব্যবহারকারী আইডি জমা না দিয়েও বয়স প্রমাণ করতে পারেন। এ ছাড়াও যাচাইয়ের জন্য সংগ্রহ করা তথ্য ব্যবহার শেষে অবিলম্বে মুছে ফেলতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো শিশু ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়া সরাসরি তাদের অভিভাবকের কাছে গিয়ে অনুমতি চাইতে পারবে না। প্রথমে শিশুর সম্মতি নিতে হবে, তারপরই অভিভাবকের কাছে আবেদন করা যাবে। নতুন বিধান সব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রযোজ্য হবে না। এর আওতায় আসবে কেবল সেসব কোম্পানি যেখানে ব্যবহারকারীরা নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে এবং অন্তত ২০ শতাংশ সময় ফিডে কাটায়। অর্থাৎ টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকের আওতায় পড়বে, কিন্তু গুডরিডসের মতো তুলনামূলক কম ব্যবহারকেন্দ্রিক প্ল্যাটফর্ম অন্তর্ভুক্ত হবে না।

অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিকেয়া জেমস বলেছেন, শিশু ও কিশোররা সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তিমূলক বৈশিষ্ট্যের কারণে উদ্বেগ ও বিষণ্নতার উচ্চহারে ভুগছে। তিনি বলেন, এ বিধান কার্যকর হলে সোশ্যাল মিডিয়া শিশু ও পরিবারের জন্য অনেক বেশি নিরাপদ হয়ে উঠবে। বিভিন্ন গবেষণায়ও দেখা গেছে, অ্যালগরিদমভিত্তিক ফিড ব্যবহারকারীদের দীর্ঘসময় ধরে স্ক্রল করতে প্রলুব্ধ করে, যা ঘুমের ব্যাঘাত, পড়াশোনার ক্ষতি ও মানসিক অস্থিরতা বাড়ায়। বিশেষ করে রাতের নোটিফিকেশন শিশুদের ঘুম কমিয়ে দেয়, যা সরাসরি বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও আত্মবিশ্বাসহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

আইনটি শিশু অধিকার ও মানসিক স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর দ্বারা সমর্থিত। তারা বলেছে, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মুনাফা বাড়ানোর জন্য সচেতনভাবে এমন অ্যালগরিদম ডিজাইন করছে যা শিশুদের দীর্ঘ সময় ধরে প্ল্যাটফর্মে রাখে। তবে গোপনীয়তা রক্ষাকারী সংগঠনগুলো এই খসড়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য জমা দেওয়া শিশু ও অভিভাবকের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। যদিও বিধানে বলা হয়েছে তথ্য সংগ্রহের পরপরই মুছে ফেলতে হবে, তবুও ডাটা ফাঁস বা অপব্যবহারের আশঙ্কা পুরোপুরি দূর হয়নি।

খসড়াটি জনমতের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জনগণ, বিশেষজ্ঞ ও সংগঠনগুলো মতামত জমা দিতে পারবে। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতরের হাতে থাকবে আরো এক বছর, যার মধ্যে চূড়ান্ত বিধান তৈরি করা হবে। আইন কার্যকর হওয়ার আগে থাকবে আরো ১৮০ দিনের সময়সীমা। অর্থাৎ ২০২৭ সালের মাঝামাঝি থেকে নিউইয়র্কবাসীরা নতুন নিয়মের বাস্তব প্রভাব দেখতে পাবে।

সেফ ফর কিডস অ্যাক্ট যুক্তরাষ্ট্রে একেবারে প্রথম ধরনের আইন। অন্য অঙ্গরাজ্যে কিছু আইন থাকলেও সেগুলো সাধারণত বয়স যাচাই বা প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধ। নিউইয়র্কের আইন শিশুদের অ্যালগরিদমভিত্তিক ফিড ও রাতের নোটিফিকেশন ব্যবহারে সরাসরি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। ফলে নিউইয়র্ক কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার হিসেবে কাজ করবে। বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তারা আগে বলেছে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ উদ্ভাবনকে ব্যাহত করতে পারে। সমালোচকরা বলছেন, কোম্পানিগুলো মূলত নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। কারণ অ্যালগরিদমের লক্ষ্য ব্যবহারকারীকে বেশি সময় ধরে প্ল্যাটফর্মে রাখা, যাতে বিজ্ঞাপন থেকে মুনাফা বাড়ানো যায়।

শেষে বলা যায়, নিউইয়র্কে সেফ ফর কিডস অ্যাক্ট কার্যকর হলে শিশুদের জন্য এক নতুন সুরক্ষার বলয় তৈরি হবে। যদিও গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে এবং বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া দীর্ঘ, তবে আইনটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে শিশুদের নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্য প্রযুক্তি কোম্পানির মুনাফার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গভর্নর হোচুল ও অ্যাটর্নি জেনারেল জেমসের নেতৃত্বে নিউইয়র্ক এদিকেই এগোচ্ছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)