গভীর সংকট এড়ানোর প্রাধিকার আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 17-09-2025

গভীর সংকট এড়ানোর প্রাধিকার আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন

অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত জাতীয় নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে সরকারের অন্তর্নিহিত রূপ ততই প্রকাশিত হচ্ছে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বের স্বৈরাচারী সরকার পতনের নেপথ্যে মার্কিন কৌশল এবং মৌলবাদীদের কথিত মেটিকুলাস পরিকল্পনার স্বরূপ উদ্ভাসিত হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র ফ্রন্ট তথা ইসলামী ছাত্র শিবিরের বিপুল বিজয় অর্জন প্রমাণ করে তরুণ সমাজ জামায়াত, শিবির নিয়ে ন্যারেটিভ বাতিল করেছে। ক্যাম্পাস জুড়ে বিগত আমলে ছাত্র লীগ, ছাত্র দল এবং জাতীয় ছাত্র সমাজের দলবাজী, গলাবাজি, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজ পরিষ্কার অবস্থান ঘোষণা করেছে। জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের সম্ভাবনা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন তুলনীয় নয়। তবুও এর প্রভাব একেবারে বাতিল করা যাবে না। আওয়ামী লীগের মত তৃণমূলে সুসংগঠিত একটি দলকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পরিকল্পনায় আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন প্রত্যাশী রাজনৈতিক দলের স্বপ্ন ভঙ্গের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। বিদ্যমান অবস্থা উন্নত না হলে দেশে গৃহযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়বে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতীর ক্রম অবনতি দেশকে সংঘাতের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। 

অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান একাধিকবার ফেব্রুয়ারি ২০২৬ প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও নির্বাচন কমিশন এখনো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট পথ নকশা ঘোষণা করেনি। সরকার সমর্থিত ছাত্রদের দল এনসিপি ক্রমান্বয়ে বিতর্কিত এবং দুর্বল হয়ে পড়ছে। অনেকেই এটিকে জামায়াতের প্রক্সি দল বলার চেষ্টা করছে। ওদিকে আবার জামায়াত ১৯৭১র ভূমিকার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পরিকল্পনা করছে। একথা অনস্বীকার্য জামায়াত একটি ধর্মভিত্তিক দল। বিগত ৫৪ বছর অস্তিত্বের সংগ্রাম করে সুকৌশলে কখনো আওয়ামী লীগ, কখনোবা বিএনপির আড়ালে থেকে নিজেদের সুসংগঠিত করেছে। দেশের সকল স্তরে জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষের সংখ্যা এখন বিপুল। জুলাই- আগস্ট ২০২৪ র পরিবর্তনে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে জামায়াত সন্দেহ নেই। আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরের শাসন আমলে কোনঠাসা অবস্থানে থেকেও জামায়াত সুকৌশলে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। সরকার পরিবর্তনের পর জামায়াত নেতৃত্বের ভূমিকা অত্যন্ত পরিছন্ন এবং সুনির্দিষ্ট। ওপর দিকে আওয়ামী লীগের অবর্তমানে প্রধান রাজনৈতিক দল চাঁদাবাজি, দখলবাজি এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা বাণিজ্য করে নিজেদের অবস্থান বিতর্কিত করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতকে পাশে পাচ্ছে না। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের বাইরে থাকলে তাদের সমর্থন জামায়াতের পক্ষে গেলে অবাক হবে না। আর যদি রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে জামায়াত ১৯৭১ এর স্বাধীনতা বিরোধী অবস্থানের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে কিন্তু নির্বাচনের প্রেক্ষাপট পাল্টে যেতে পারে।

বর্তমান অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষিত নির্বাচন সময়সীমা থেকে পিছিয়ে আসার সময় সুযোগ নেই। তবে প্রধান সংকট আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নয়ন। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্র নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। তৃণমূল পর্যায়ে পুলিশ, বিজেবি, র‌্যাব, সেনাবাহিনীর অবস্থান সুনির্দিষ্ট করে সরকারকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য। পাশাপাশি ২০২৪ হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা চলমান রেখে সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। রাজনীতিসম্মত সংস্কারগুলো সম্পাদন করে অবশিষ্ট সংস্কার নির্বাচিত সরকারের উপর ছেড়ে দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কোন অধিকার নেই দেশে বিরাজমান কনস্টিটিউশন পরিপন্থী কোন সংস্কার চাপিয়ে দেয়ার। জনগণের সার্বভৌম অধিকারকে সম্মান জানিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের উচিত হবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ন্যূনতম বিষয়াদিতে জাতীয় ঐক্য এই মুহূর্তে অপরিহার্য। সেই সাথে প্রাধিকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)