নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টা ও সফরসঙ্গীদের হেনস্তার খবর আগেরই ছিল। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ঘোষণা করে কঠোর প্রতিবাদের। বিশেষ আয়োজনে প্রফেসর ইউনূস অন্য পথ দিয়ে চলে গেলে তাকে হেনস্তা করা সম্ভব হয়নি কিন্তু তার সফরসঙ্গী বিশেষ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও এনসিপির দুই নেতা-নেত্রী আখতার হোসেন ও তাসনিম জারাকে হেনস্তা করা হয়েছে। মির্জা ফখরুল অনেক সিনিয়র নেতা তাকে নিউইয়র্কের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নাম ধরে ডেকে ডেকে গালমন্দ করেছে, রাজাকার বলেছে। আর আখতারের ওপর ডিম মেরে মব তৈরি করে ওই আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতাকর্মী। তাছাড়া তাসনিম জারাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, প্রধান উপদেষ্টাকে নিরাপত্তা দিতে নিয়ে যাওয়া হলেও সফরসঙ্গীদের নিরাপত্তাদানের কোনো উদ্যোগ নেয়নি নিউইয়র্কের বাংলাদেশ মিশন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট। সেই সাথে বাংলাদেশ দূতাবাসও কোন দায়িত্ব পালন করেনি। অথচ এই অপ্রীতিকর ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার হুমকি আগেই দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের হুমকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই দেখেছেন।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড়। প্রশ্ন উঠেছে, প্রধান উপদেষ্টার প্রোটোকল মেইনটেনকারীদের ক্ষেত্রেও। প্রধান উপদেষ্টা দাওয়াত দিয়ে সফরসঙ্গী করে নিয়ে এসেছেন। তাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তারই। কিন্তু এ ব্যাপারে কোথায় গাফিলতি ছিল সেটা খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি উঠেছে। কিছুদিন আগে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেট অফিসের দরজার ভেঙ্গে ফেলা হয়, হামলার শিকার হন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তার কিছু দিনপর ওয়াশিংটনেও তার গাড়ি বহর ফলো করা হয়। তারপরেও ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্স্যুলেট কেন চুপ ছিলো? বিশেষ করে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ব্যর্থতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অভিযোগ রয়েছে- ইচ্ছে করেই স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে যোগসাজসে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার ১ বছরের মধ্যেও এই সব সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পতিত সরকারের কর্মকর্তাদের।
সরায়নি। আওয়ামী দোসররা এখনো দৌর্দণ্ড প্রতাপে মিশন, কন্স্যুলেট ও দূতাবাসে রয়েছে। আবার ফটোকল দেয়ার জন্য নেপাল থেকে আওয়ামী ক্যাডারকে হায়ার করে আনা হয়েছে। তাতেই বুঝা যায়, মিশন প্রধান পরিকল্পনা করেই এটা ঘটিয়েছেন। অনেকেই বলেছেন, প্রতি বছর ভিআইপিদের গেইট থেকেই গাড়িতে তুলে নেয়া হয়। কিন্তু পরিকল্পনার অংশ হিসাবেই এবার লম্বা পথ হাঁটিয়ে নেয়া হয়েছে। যাতে আওয়ামী লীগের গুন্ডারা গুন্ডামি করতে পারে। অভিযোগ রয়েছে, পরিকল্পনার অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে বিষয়টি লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এয়ারপোর্টে যদি বিএনপির নেতৃবৃন্দ থাকতো তাহলে মির্জা ফখরুলসহ অন্যান্য নেতাদের হেনস্তা হতে হতো না। দাবি উঠেছে, যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার। সেই মিশন, কন্স্যুলেট এবং দূতাবাসে শুদ্ধি অভিযান চালানো।
এদিকে যেহেতু আওয়ামী লীগ আগ থেকেই এমন মব তৈরির প্লান কষে এবং সেটা ব্যাপকভাবে ছড়িয়েও পড়েছিল, তাহলে কেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি জেকেএফ বিমান বন্দরে দলের মহাসচিবকে সুরক্ষা দিতে উপস্থিত ছিল না। এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কে তাদের ৮ নম্বর টার্মিনালে আটকিয়ে রেখেছিলো। মির্জা ফখরুল ইসলামের সাথে তো হুমায়ুন কবীর ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে তিনিও কেন বিষয়টি স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে জানালেন না। বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতারা এয়ারপোর্টে ছিলেন, কিন্তু তাদের ৮ নম্বর পার্কিং লটে রেখে দেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন। মূলত আনোয়ার হোসেন খোকনের কারণেই বিএনপির নেতারা ৪ নম্বর টার্মিনালে যেতে পারেননি। এজন্য আনোয়ার হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।
ওই ঘটনার পর নিউইয়র্কের পুলিশ হাজির হলেও তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আগেই সব ঘটে গেছে। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনকে আটক করেছে পুলিশ। মিজানুর রহমান চৌধুরী নামের ওই ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে পুলিশ তাদের আওতায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গেছে। পুলিশ অন্যদেরও আটকের চেষ্টা করছে। বিষয়টি এমন এক সময় করেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করছে এবং ব্যাপক ধরপাকড় করছে।
জেএফকে বিমানবন্দরে এনসিপির আখতার হোসেনকে ডিম নিক্ষেপকারী যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মী মিজানকে গ্রেফতার করেছে নিউইয়র্ক পুলিশ। মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে জ্যাকসন হাইটস এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে বলে জানিয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।
এদিকে জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তীব্র চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশসহ অনেক দেশ স্বল্পোন্নত মর্যাদা থেকে গ্র্যাজুয়েশন হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ১৩ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া, বারবার জলবায়ু গত ধাক্কা মোকাবিলা এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা সামাল দেওয়া।
এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের বাজেট হ্রাস করা বা সরকারি উন্নয়ন সহায়তা সংকুচিত করা হিতে বিপরীত হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। এর পরিবর্তে, বিশ্বকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক সহায়তা সম্প্রসারণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং উচ্চতর দুর্বলতার মুখোমুখি দেশগুলোর জন্য ন্যায়সংগত রূপান্তর নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘের সামাজিক ব্যবসা, যুব ও প্রযুক্তি বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে মূল বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায় জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এ বছর প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছয় রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। তাদের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা থেকে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যোগ দেন।
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য দেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত : প্রধান উপদেষ্টা
দীর্ঘসময় বিমানযাত্রা শেষে নিউইয়র্কে অবতরণের পর বিশ্রাম না নিয়েই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। স্থানীয় সময় গত ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত এবং ভারতের জন্য মনোনীত রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোরের সঙ্গে এক বৈঠককালে তিনি বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনের জন্য দেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
বৈঠকে সার্জিও গোর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বৈঠকে বাণিজ্য, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা, সার্ক পুনরুজ্জীবন, রোহিঙ্গা সংকট এবং ঢাকাকে লক্ষ্য করে পরিচালিত ভ্রান্ত তথ্য প্রচারসহ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টর প্রেস উইং সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজারে বসবাসরত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে মার্কিন কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের জন্য জীবনরক্ষাকারী সহায়তা বজায় রাখার আশ্বাস দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সার্ক প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকার এ সংস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনীতির সঙ্গে সংযুক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নকে বহুগুণে এগিয়ে নিতে পারে। এ জন্য বাংলাদেশ আসিয়ানে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এছাড়া তিনি নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুততর করতে পারব।’ বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টা সার্জিও গোরকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
সফরের প্রথম দিন সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বেলজিয়ামের রানি মথিল্ড প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। একই দিনে তার সঙ্গে বৈঠক করেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্থানীয় সময় ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সফরের দ্বিতীয় দিনে কমপক্ষে ১০টি কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী পর্ব, একাধিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং বৈশ্বিক পর্যায়ের অনুষ্ঠান।
প্রধান উপদেষ্টা দিন শুরু করেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত সংবর্ধনায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এরপর সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনের উদ্বোধনী সেশনে যোগ দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১২টায় তিনি অংশ নেন ‘ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট (এফ৪ডি): ১৩তম বার্ষিক অফিশিয়াল ফার্স্ট লেডিস লাঞ্চ’-এ।
বিকালে তার কর্মসূচির মধ্যে ছিল ২টা ৪৫ মিনিটে ‘সামাজিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে অর্থায়ন: সরকারি ও বেসরকারি খাতের নেতাদের বৈঠক’ শীর্ষক এক আলোচনায় যোগদান। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প আয়োজিত এক সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ।
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে সফরকালে প্রধান উপদেষ্টা ম্যানহাটনে হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে অবস্থান করছেন। এটিই তার অস্থায়ী আবাসস্থল।
ডিম নিক্ষেপের বিষয়ে এবার মুখ খুললেন তাসনিম জারা
নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করেছে বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। ডিম নিক্ষেপের বিষয়ে মুখ খুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাতে দেওয়া এক স্ট্যাটেসে তিনি বলেন, গালি কখনো সত্যকে ঢাকতে পারে না।
জারার পোস্টটি যুগান্তরের পাঠকদের জন্য হুবহু দেওয়া হলো-
‘ওনারা ভেবেছিল ডিম ছুঁড়ে, গালি দিয়ে আমাদের ছোট করবে। কিন্তু গালি কখনো সত্যকে ঢাকতে পারে না। ভদ্রতা হারানো মানে পরাজয় মেনে নেওয়া।
ওনারা অপমানের রাজনীতি করুক। আমরা মর্যাদার রাজনীতি গড়ব। মর্যাদা মানে শুধু নেতাদের সম্মান দেওয়া নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের সম্মান নিশ্চিত করা। যেমন-
- একজন নাগরিক ঘুস না দিয়েও সরকারি অফিসে সম্মান পাবেন।
- একজন রোগী হাসপাতালে ভিআইপি না হয়েও সেবা পাবেন।
- রাজনীতিবিদরা প্রভু না হয়ে সেবক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।
- একজন নারী রাস্তায়, বাসে, বা অনলাইনে হেনস্তার শিকার হবেন না।
- একজন ছাত্র মিছিলে গেলে গুলি খাবেন না।
- একজন নাগরিক মন্ত্রী-এমপিদের সমালোচনা করতে পারবেন কোন ভয় ছাড়া।
আমাদের মর্যাদার রাজনীতি মানে হলো: বাংলাদেশে আর কাউকে ভয় দেখিয়ে, ঘুস খাইয়ে, অপমান করে চুপ করানো যাবে না।’
নিউইয়র্ক বিমানবন্দরের ঘটনায় সরকারের গভীর দুঃখ প্রকাশ
নিউইয়র্কের জে এফ কে বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই ঘটনায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত হামলার শিকার হয়েছেন। ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সহযোগী ও সমর্থকেরা এ হামলা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, এই নিন্দনীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার শাসনামলে গড়ে ওঠা বিধ্বংসী ও সহিংস রাজনৈতিক সংস্কৃতির এক স্পষ্ট ও মর্মান্তিক চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। এই বিধ্বংসী রাজনৈতিক সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সফরে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের সম্ভাব্য নিরাপত্তাঝুঁকির বিষয়টি আঁচ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একাধিক পূর্ব সতর্কতামূলক নিরাপত্তাব্যবস্থা সমন্বয় করেছিল। জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর প্রতিনিধিদলকে প্রথমে নির্দিষ্ট ভিভিআইপি গেট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বিশেষভাবে সুরক্ষিত পরিবহন ইউনিটে ওঠানো হয়। তবে অপ্রত্যাশিত ও শেষ মুহূর্তের ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে প্রতিনিধিদলকে পথ পরিবর্তন করে বিকল্প নির্গমনপথ দিয়ে বের হতে হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ভিভিআইপি প্রবেশাধিকার ও নিরাপত্তা-সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হলেও দুঃখজনকভাবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে প্রতিনিধিদলের ওই সদস্যরা ঝুঁকির মুখে পড়েন। অনিচ্ছাকৃতভাবে এ ঘটনা ঘটেছে।
নিউইয়র্কের বিমানবন্দরের ঘটনা নিয়ে ফেসবুকে মির্জা ফখরুলের প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়ার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি এ ঘটনার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই প্রতিক্রিয়া জানান।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেন। মির্জা ফখরুল তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে যা ঘটেছে, তা আবারও প্রমাণ করল, আওয়ামী লীগ তাদের অন্যায়ের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করে না।’
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে আখতার হোসেন সেখানে পৌঁছান। বিমানবন্দরের ৪ নম্বর টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার সময় স্থানীয় সময় ২২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিকেল পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আখতার হোসেনের সঙ্গে হাঁটছিলেন সফরসঙ্গী হিসেবে আসা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা এ সময় তাসনিম জারাকে লক্ষ্য করে কটূক্তি করেন। তাঁরা সেখানে বিক্ষোভ করেন।
মির্জা ফখরুল তাঁর পোস্টে আরও লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ আজ পর্যন্ত যা করেছে, সবকিছুর বিচার আইনের মাধ্যমে হবে। দল ও দেশের স্বার্থে ধৈর্য ধরুন।’
সন্ত্রাস করে হাসিনার বিচার বাধাগ্রস্ত করা যাবে না: আখতার হোসেন
সন্ত্রাস করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার বাধাগ্রস্ত করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। বিমানবন্দর থেকে শহরের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে পৌঁছে এক বিক্ষোভ শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এর আগে স্থানীয় সময় ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দরে পৌঁছালে আখতারের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হিসেবে নিউ ইয়র্কে যান তিনি। সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের (বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) নেতা-কর্মীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে ডিম নিক্ষেপ ও হেনস্তা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিমানবন্দর থেকে শহরের গ্রান্ড হায়াত হোটেলের সামনেও জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। একই সময়ে সেখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাকর্মীরাও জড়ো হয়ে শেখ হাসিনার বিচারের দাবি করে স্লোগান দেন।
এ সময় আকতার হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনার গুলি আমাদের দমাতে পারেনি, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিবাদের হামলা আমাদের দমাতে পারবে না। বাংলাদেশের মাটিতে স্বৈরাচার ও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনার বিচার অবশ্যই হবে।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বৈশ্বিক সংঘাতের অবিরাম ছায়া বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ট্র্যাজেডি নয়-এগুলো সীমান্ত পেরিয়ে ঢেউ তোলে, অর্থনীতিকে ব্যাহত করে, খাদ্যনিরাপত্তাকে বিপন্ন করে এবং মানব জীবনকে ধ্বংস করে। এ ধরনের আন্তঃসংযুক্ত সঙ্কটের মুখে, আমরা পুরোনো সমাধানের আশ্রয় নিতে পারি না। আমাদের এখন যা দরকার তা হলো বহুপাক্ষিক কূটনীতি এবং গভীর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নবায়ন করা।’ তিনি বলেন, ‘আমি যখন প্রথম এই অনুষ্ঠানে যোগ দিই, তখন আমি কেবল ড. ইউনূস হিসেবে এসেছিলাম। গত বছর বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমবারের মতো আমাকে স্বাগত জানানো হয়েছিল এবং আজ আমি আবারও সে ভূমিকায় আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমি যে উপাধি রাখি না কেন, আমার লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। সেটি হলো এমন একটি বিশ্ব তৈরি করা যেখানে সুযোগ, মর্যাদা এবং স্থায়িত্ব সবার নাগালের মধ্যে থাকবে।”
ড. ইউনূস বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের দাবানল পৃথিবীকে পুড়িয়ে দেয়। বৈষম্যের ব্যবধান আরো গভীর হয়। সংঘাত ছড়িয়ে পয়ে এবং ন্যায়বিচার ও শান্তির জন্য সংগ্রাম আমাদের মানবতার পরীক্ষা করে। এ সংকটগুলো বিচ্ছিন্ন নয়। তারা একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে- একটি ভঙ্গুর টেপেস্ট্রির সুতো, একে অপরের দিকে টানছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই এমন একটি অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে হবে যা মানুষের কল্যাণ, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং পরিবেশগত তত্ত্বাবধানকে সম্পদের সংকীর্ণ সঞ্চয়ের ওপরে রাখে। এটি কোনও ইউটোপিয়ান আদর্শ নয়। এটি একটি প্রয়োজন বিবর্তন। আর এ নতুন অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সামাজিক ব্যবসা।’
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ অফিসার দিদারে বাসায় যান। সেখানে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন এবং বিছু সময় কাটান।