মিনেসোটার মিনিয়াপোলিস ও ব্লুমিংটনে ২০২৩ সালে টানা দুদিনে দুটি মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অভিযুক্ত জ্যাকি রহম লিটল (৩৮) ১৭ সেপ্টেম্বর অগ্নিসংযোগ ও ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংসের অভিযোগে ফেডারেল কোর্টে দোষ স্বীকার করেছেন। এ অপরাধকে ঘৃণাজনিত অপরাধ বা ‘হেইট ক্রাইম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘটনা দুটি ঘটে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে। প্রথম ঘটনা ঘটে ২৩ এপ্রিল, যখন মিনিয়াপোলিসের ইস্ট ২৪ স্ট্রিটে সোমালি মলে অবস্থিত মসজিদ ওমর ইসলামিক সেন্টারের বাথরুমে লিটল একটি কার্ডবোর্ড বাক্সে আগুন ধরান। তিনি চেয়েছিলেন আগুন মসজিদজুড়ে ছড়িয়ে পড়ুক, কিন্তু মুসল্লিরা তাৎক্ষণিকভাবে আগুন দেখতে পেয়ে নেভাতে সক্ষম হন। ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে মসজিদ রক্ষা পায়।
এরপরের দিন ২৪ এপ্রিল ২০২৩ লিটল গ্যাসোলিন ভর্তি একটি ক্যান নিয়ে প্রবেশ করেন মিনিয়াপোলিসের ব্লুমিংটন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত মসজিদ আল-রাহমা, যা মার্সি সেন্টার নামেও পরিচিত। তিনি ভবনের তৃতীয় তলায় আগুন ধরান। এ সময় মসজিদের দেওয়াল, ছাদ, আসবাবপত্র এবং শিশুশিক্ষা বিভাগের কক্ষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। ঘটনার সময় প্রায় ৫০ জন শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে অবস্থান করছিল। দ্রুত পদক্ষেপে তাদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়। মুসলিম কমিউনিটির নেতারা তখন মসজিদে উপস্থিত ছিলেন এবং আগের দিনের অগ্নিসংযোগ নিয়ে বৈঠক করছিলেন। আগুন দেখতে পেয়ে একজন উপস্থিত ব্যক্তি দৌড়ে পাশের দমকল বিভাগে খবর দেন, ফলে অল্প সময়ের মধ্যে দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
আদালতে শুনানির সময় মিনেসোটা ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক অ্যান মন্টগোমারি জানান, মানসিক চিকিৎসার পর লিটলকে বিচার উপযোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আদালত বারবার জানতে চেয়েছে লিটল মানসিকভাবে সচেতন কি না। জবাবে লিটল জানান, তিনি স্থিতিশীল আছেন এবং সবকিছু বুঝতে পারছেন। লিটলের আইনজীবী জেমস বেকার আদালতে বলেন, তার মক্কেলের শিজোফ্রেনিয়া রোগই এসব ঘটনার পেছনে কাজ করেছে। তবে চিকিৎসা নেওয়ার পর বর্তমানে তার মধ্যে মুসলিমদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ নেই।
মামলায় লিটলের বিরুদ্ধে কমপক্ষে পাঁচ বছরের বাধ্যতামূলক সাজা রয়েছে। তবে প্রসিকিউশনের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী তাকে ৬৩ থেকে ৭৮ মাস (সাড়ে ছয় বছরের মতো) কারাদণ্ড ভোগ করতে হতে পারে। একই সঙ্গে মসজিদ আল-রাহমা ও এর বীমা কোম্পানিকে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও আসতে পারে। চূড়ান্ত সাজা ঘোষণার তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০২৬ নির্ধারণ করেছেন বিচারক মন্টগোমারি।
অগ্নিকাণ্ডে মসজিদ আল-রাহমা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবনের তৃতীয় তলা, শিশু শিক্ষাকেন্দ্র, ছাদ ও একাধিক কক্ষ আগুনে পুড়ে যায়। মসজিদ পরিচালনা কমিটি জানায়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের পর মুসলিম কমিউনিটি, স্থানীয় বাসিন্দা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মসজিদের পাশে দাঁড়ায় এবং সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে অর্থ সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। ইতিমধ্যেই দাতব্য সংস্থা ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় মসজিদ আংশিকভাবে চালু হয়েছে। শিশুদের জন্য বিকল্প কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং নিয়মিত নামাজের জন্য নিচতলা ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে পূর্ণ সংস্কারের জন্য এখনো বড় অঙ্কের অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। কমিউনিটি নেতারা জানিয়েছেন, এই মসজিদ শুধু নামাজের জায়গা নয়, বরং এটি আমাদের সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।
এ অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে দেখা যায়, লিটল ইচ্ছাকৃতভাবে মসজিদকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিলেন এবং এটি ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধ। এফবিআই এ ঘটনাকে ঘৃণাজনিত অপরাধের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং এফবিআই মসজিদগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে। বাড়ানো হয়েছে টহল, স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মিনেসোটা গভর্নরের কার্যালয় জানিয়েছে, রাজ্যের সব নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা শূন্য সহনশীলতার নীতি অনুসরণ করছে। এছাড়াও স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে, যাতে যে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানানো যায়। পুলিশ বিভাগ বলেছে, এ ধরনের হামলা শুধু মুসলিম কমিউনিটির ওপর নয়, গোটা মিনেসোটার বহুত্ববাদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত।