ফ্রান্সের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের চারটির কাছ থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেল। স্বীকৃতি না দেওয়া একমাত্র দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য এই স্বীকৃতির মাধ্যমে হামাসকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে তিনি গাজায় সংঘাত দ্রুত বন্ধ হোক, সেটাও চান।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দেওয়া বক্তব্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি ও গাজা সংঘাত নিয়ে ওই মন্তব্য করেন। এর আগের দিন ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের আগে এক বিশেষ সম্মেলনে ফ্রান্সসহ নতুন ছয় দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। ওই সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছিল সৌদি আরব ও ফ্রান্স।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় টানা নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। একে জাতিগত নিধন বলে জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসরায়েলের এই হত্যাযজ্ঞের মধ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল।
এরপর ২২ সেপ্টেম্বর সোমবার ফ্রান্স ছাড়াও অ্যান্ডোরা, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, মাল্টা ও মোনাকো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনি মুক্তিসংগ্রামের নেতা ইয়াসির আরাফাত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে এ নিয়ে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যদেশের মধ্যে ১৫৭টি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিল। সেই হিসাবে বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি দেশ এই স্বীকৃতি দিল। ফিলিস্তিনিদের প্রতি বিশ্বের এমন সমর্থনের পরও গতকাল গাজাজুড়ে অন্তত ৩৮ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। উপত্যকাটির উত্তরে গাজা নগরীর আরও ভেতরে প্রবেশ করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর প্রায় দুই বছরে সেখানে ৬৫ হাজার ৩৮২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ফিলিস্তিনি।
রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের অধিকার, পুরস্কার নয়
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যদেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। এগুলোর কোনো একটি দেশ কোনো প্রস্তাবের বিষয়ে ভেটো (নারাজি) দিলে সেটি নাকচ হয়ে যায়। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের আগে নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আরও দুই সদস্য রাশিয়া ও চীন ১৯৮৮ সালে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তি হয়। এর মাধ্যমে যে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তার ভিত্তি ছিল এই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। যদিও ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের অনাগ্রহের কারণে এ উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। সোমবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ‘আমরা এখানে একত্র হয়েছি, কারণ সময় এসে গেছে। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সম্ভাবনা টিকিয়ে রাখতে ক্ষমতার মধ্যে থাকা সবকিছু করা আমাদের দায়িত্ব।’
সম্মেলনের আরেক আয়োজক দেশ সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমান উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর পক্ষে সম্মেলনে যোগ দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান। ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে স্বাগত জানান তিনি। ফয়সাল বিন ফারহান বলেন, একমাত্র দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারেননি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। তবে ভার্চুয়্যালি যুক্ত হয়ে তিনি বিশ্বের বাকি দেশগুলোকেও ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান। আর সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘একটি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদের অধিকার, কোনো পুরস্কার নয়।’
নিউইয়র্কের এই সম্মেলনে ২১ সেপ্টেম্বর রোববার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশ যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন গত বছর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া তিন দেশ স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ডের নেতারা।
তবে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, জার্মানি ও ইতালির কোনো প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দেননি। ইউরোপের প্রভাবশালী দেশ জার্মানি ও ইতালি জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা নেই তাদের।
জাতিসংঘে ট্রাম্পের ভাষণ: যুদ্ধ, অভিবাসন ও জলবায়ু নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে গত ২৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক কঠোর সমালোচনামূলক ভাষণ দেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিশ্বে চলমান যুদ্ধ ও অভিবাসন সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং কেবলমাত্র “শক্তিশালী ভাষার বিবৃতি” দিয়েই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ট্রাম্প বলেন, তারা শুধু একটি শক্তিশালী ভাষার চিঠি লেখে, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করে না। তিনি দাবি করেন, নিজের নেতৃত্বে গত সাত মাসে তিনি সাতটি যুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছেন, অথচ জাতিসংঘ এ ক্ষেত্রে কোনো সহযোগিতা দেয়নি। তার ভাষণে তিনি বলেন, আমি এই কাজে সত্যিই ভালো। অথচ তোমাদের দেশগুলো ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে সংঘাত এখনো জ্বলছে, অথচ জাতিসংঘের কার্যকর ভূমিকা নেই। গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে বৈশ্বিক সহযোগিতা আহ্বান করলেও তিনি সতর্ক করে দেন যে, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মতে, এটি হামাসের জন্য পুরস্কার ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, বন্দি ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্তি না দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেওয়া হবে অন্যায় ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত।
ভাষণের বড় একটি অংশজুড়ে ছিল অভিবাসন প্রসঙ্গ। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জাতিসংঘ অবৈধ অভিবাসন রোধে কোনো বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, অভিবাসন এখন বৈশ্বিক নিরাপত্তার অন্যতম বড় হুমকি। লক্ষ লক্ষ মানুষ বিপজ্জনক যাত্রায় প্রাণ হারাচ্ছে, আর আপনারা শুধু রিপোর্ট লিখছেন। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রশাসনে দুই মিলিয়নের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে, যা দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনীতিকে সুরক্ষিত করেছে। তিনি অন্যান্য দেশকেও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান এবং বলেন, সীমান্ত সুরক্ষিত না হলে যুদ্ধ ও সংঘাত বন্ধ হলেও স্থিতিশীলতা ফিরবে না। ইউরোপীয় দেশগুলোকে তিনি তীব্র সমালোচনা করে বলেন, অভিবাসন নীতির কারণে আপনার দেশগুলো ধ্বংসের মুখে। আপনারা সীমান্ত খুলে দিয়ে শুধু অপরাধ, সন্ত্রাস আর দারিদ্র্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।
ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলোকে “প্রতারণা” আখ্যা দিয়ে বলেন, এসব চুক্তি উন্নত দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে অথচ উন্নয়নশীল দেশগুলো নিয়ম ভঙ্গ করে যাচ্ছে। তার মতে, সবুজ শক্তি প্রকল্পের কারণে ইউরোপীয় অনেক দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। তিনি বলেন, জলবায়ু নিয়ে এই ভণ্ডামি আসলে মুক্ত বিশ্বের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে, অথচ নিয়ম ভাঙা দেশগুলো অগ্রসর হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আন্তর্জাতিক জলবায়ু উদ্যোগে যোগ দেওয়া মানে নিজেদের সমাজ ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া।
বাণিজ্য ও শুল্কনীতি প্রসঙ্গে ট্রাম্প পুনর্ব্যক্ত করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু কিংবা প্রতিপক্ষ সব দেশকেই শুল্ক দিয়ে জবাব দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা তাদের পাল্টা আঘাত করছি। বিশেষভাবে ব্রাজিল প্রসঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করলেই দেশটি সমৃদ্ধ হতে পারবে। একই সঙ্গে ভারত ও চীনের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গ্যাস কিনে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে। ইউরোপীয় নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাশিয়ার জ্বালানি কেনা বন্ধ করতে হবে, নইলে সবই সময় নষ্ট।
ট্রাম্প তার বক্তৃতায় জাতিসংঘকে সরাসরি কটাক্ষ করেন। তিনি উল্লেখ করে বলেন, আমি কখনো জাতিসংঘ থেকে কোনো ফোন কল পাইনি শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত করতে সাহায্য করার জন্য। যা পেয়েছি তা হলো একটি এসকেলেটর যা মাঝপথে থেমে গিয়েছিল, আর একটি টেলিপ্রম্পটার যা কাজ করেনি। এর মাধ্যমে তিনি সংগঠনের অকার্যকারিতা ও প্রযুক্তিগত বিশৃঙ্খলাকেও বিদ্রূপ করেন।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র শক্তি যাকে সবাই শেষ পর্যন্ত ডাকে। প্রত্যেক দেশ এখনো আমাদের কাছেই আসে সমাধান চাইতে। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য বা অন্য কোনো দেশ এই সংঘাত শেষ করার মূল ভূমিকায় থাকবে না। ভবিষ্যতের সব সমাধান যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমেই আসবে। তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোকে রাশিয়া-বিরোধী অবস্থানে আরও শক্ত হতে আহ্বান জানান এবং ভারত ও চীনের ওপর বিশাল শুল্ক আরোপে ইউরোপীয় সহযোগিতা চান।
ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘে অনুদান কমিয়ে দিয়েছে এবং দীর্ঘদিন রাষ্ট্রদূতের পদ শূন্য রেখেছিল। এর মধ্যেই তিনি দাবি করেন, জাতিসংঘের উচিত হবে আবার শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা অগ্রসর করার মূল উদ্দেশ্যে ফিরে যাওয়া। ভাষণের পর তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এবং ইউক্রেন, আর্জেন্টিনা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়া কাতার, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, পাকিস্তান, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানের নেতাদের সঙ্গে বহুপাক্ষিক আলোচনায় অংশ নেবেন। ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে ট্রাম্প স্বীকার করেন যে, এ সংঘাত সমাপ্ত করতে তার প্রচেষ্টা এখনো সফল হয়নি। তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আলাস্কায় বৈঠকের পরও পুতিন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে হোয়াইট হাউসে আলোচনা চলছে, যদিও এতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ট্রাম্পের এই ভাষণ আবারও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তিনি বৈশ্বিক নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রকে একক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। যুদ্ধ, অভিবাসন, জলবায়ু ও বাণিজ্য ইস্যুতে তার আক্রমণাত্মক অবস্থান যেমন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে, তেমনি সমর্থক মহলে এটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তি সঞ্চারেও সহায়ক হতে পারে।
লন্ডনে শরিয়াহ আইন নিয়ে ট্রাম্পের দাবি ভিত্তিহীন
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ৮০তম বার্ষিকীতে, নিউইয়র্কে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লন্ডনের মুসলিম মেয়র সাদিক খানকে আক্রমণ করে দাবি করেছেন, শহরটি নাকি শরিয়াহ আইন চালুর পথে এগোচ্ছে। তিনি বলেন, “লন্ডনে একটি ভয়ঙ্কর মেয়র আছেন, শহরটি বদলে গেছে, এখন তারা শরিয়াহ আইন চালু করতে চায়।” তবে তিনি এই বক্তব্যের জন্য কোনো প্রমাণ বা সূত্র উপস্থাপন করেননি।লন্ডনের মেয়রের মুখপাত্র মন্তব্যকে “অশোভন ও সাম্প্রদায়িক” বলে আখ্যা দিয়ে বলেন, “আমরা এই ভিত্তিহীন বক্তব্যকে কোনো মর্যাদা দিতে চাই না। লন্ডন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শহর, যা মার্কিন শহরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ।”
নাগরিক অধিকার সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস এই বক্তব্যকে ভিত্তিহীন ও ইসলামবিদ্বেষী ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়েছে। কেয়ার -এর মতে, এ ধরনের ভয়ভীতি সৃষ্টিকারী প্রচারণা আসল ইস্যু থেকে পশ্চিমা জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল মাত্র। বাস্তবতায়, সরকারগুলো গাজায় চলমান গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিয়ে জনগণের করের অর্থ ব্যয় করছে এবং একই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বাকস্বাধীনতার উপর দমননীতি চালাচ্ছে।
কেয়ার এক বিবৃতিতে আরও জানায়, সম্প্রতি ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভয় উসকে দেওয়া পশ্চিমা বিশ্বে গাজা গণহত্যা থেকে মনোযোগ সরানোর সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এই কৌশলের ফলেই টেক্সাস থেকে যুক্তরাজ্য পর্যন্ত ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণা নতুন করে উসকে উঠেছে। সংগঠনটি সতর্ক করে বলেছে, এসব ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য শুধু বিভ্রান্তি তৈরি করে না, বরং বাস্তবে সহিংসতা উসকে দেয়। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে হত্যাযজ্ঞ, নরওয়ের গণহত্যা এবং যুক্তরাজ্যের মসজিদে চলমান হামলা। কেয়ার -এর মতে, আমেরিকা থেকে যুক্তরাজ্য পর্যন্ত মানুষ আর এসব ভিত্তিহীন প্রচারণায় বিভ্রান্ত হচ্ছে না। তারা চায় তাদের সরকার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেন্সরশিপ, বাকস্বাধীনতা দমন এবং গণহত্যা অর্থায়ন এসব বন্ধ করুক।