যেখানে ষড়যন্ত্রের ছায়া সেখানেই প্রতিরোধ


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 01-10-2025

যেখানে ষড়যন্ত্রের ছায়া সেখানেই প্রতিরোধ

আমরা বারবার সংগ্রাম করেছি, আন্দোলন করেছি, জীবন দিয়েছি। কিন্তু শাসকশ্রেণির ব্যর্থতার কারণে আমরা সফল হয়নি। এবারও জুলাই আন্দোলনের এক বছর যেতে না যেতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, যেখানেই ষড়যন্ত্রের ছায়া দেখা যাবে, সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বাংলাদেশে আমরা কাউকে কেয়ার করি না। আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নয়ত করতে জানি না। ভারতকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যদি মালদ্বীপ চলতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবো না। বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীকে নাকি বিরোধীদল থেকে দেওয়া হবে না, জাতীয় পার্টিকে বিরোধীদল করা হয়। কিন্তু তার দেখছে পাচ্ছে না নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি, যা আমরা দেখছি ডাকসু এবং জাকসুতে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এস্টোরিয়ার একটি অভিজাত অডিটোরিয়ামে কোব আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এ সব কথা বলেন। 

কোয়ালিশন অব বাংলাদেশি-আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের (কোবা) সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র ড. নকিবুর রহমান, লংআইল্যান্ড ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. শওকত আলী, এখন সময়ের সম্পাদক কাজী শামসুল হক, স্পোর্টস অ্যালায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মনির আহমেদ, আমেরিকার খেলাফত মজলিসের সভাপতি মুফতি লুৎফর রহমান কাশেমি, কুমিল্লা সমিতির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক কামাল, হাজি মফিজুল ইসলাম, বিশিষ্ট আইনজীবী মশিউর রহমান, জাগপার সভাপতি রহমতুল্লাহ, রেদওয়ান ফয়সাল, কায়কোবাদ প্রমুখ। 

ফাইন্যান্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. নকিবুর রহমান বলেন, জামায়াতের পরিচয়ে এভাবে বক্তব্য দিতে পরবো আমি কখনো মনে করিনি। আল্লাহ আমাদের প্রচেষ্টা কবুল করেছেন। আমরা মানুষের কাছে যেতে পারছি। মানুষ আস্থা রেখছে। ডাকসু নির্বাচনে নারীরা আমাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। অহংকারী হওয়া যাবে না। আল্লাহ কাছে সাহায্য চাইতে হবে। তিনি আরো বলেন, জুলাই আন্দোলনে প্রবাসে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা কাজ করেছে। আন্দোলনের কারণে বাংলাদেশে তাদের পরিবারকে অনেক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। 

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আজকের সমাবেশ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। প্রবাসে এতো বড় সমাবেশ আমাকে আনন্দিত করেছে। আমাদের এই উপমহাদেশে মুসলমানরা কখনো পরাজয় মেনে নেয়নি। এ সময় হাজী শরীয়ত উল্লাহ এবং তিতুমীরের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমরা তাদের উত্তরসূরি। ঘোষণা পত্রে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন সংযুক্ত করা হয়নি, এবারের আন্দোলনেও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমরা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছি, একটি মানচিত্র, এক পতাকা পেয়েছি, স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতা পেলেও তার সুফল পাইনি। আমরা বারবার আন্দোলন করেছি, রক্ত দিয়েছি কিন্তু নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছি। জুলাই আন্দোলনের ইতিহাস সারা বিশ্বে একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে, এটি একটি বিস্ফোরণে নাম। সবার অংশগ্রহণে এরকম বিপ্লব কমই হয়েছে। আমরা যার পদত্যাগ চেয়েছিলাম, সে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এক বছর যেতে না যেতেই আজকে সেই চেতনা বিবর্ণ। আবার ষড়যন্ত্র, আবার ক্ষমতার লড়াই। আমরা বারবার প্রতারিত হতে চাই না, আরো ১৫ বছর লড়াই করতে চাই না। সেখানেই ষড়যন্ত্রের ছায়া সেখানে আমাদের প্রতিরোধ। তিনি আরো বলেন, আমরা সোনার বাংলার স্লোগান শুনেছি, সবুজ বাংলার স্লোগান শুনেছি। আমরা ছয় দফা, ১৯ এবং ১৮ দফা দেখেছি। এগুলো কোনো মুক্তি বা কল্যাণ আনতে পারেনি। স শাসক শোষকে পরিণত হয়েছে। আমরা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছি। তিনি বলেন, অনেককেই বলতে শুনি, জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের দালাল, আওয়ামী লীগ ভারতের দালাল, বিএনপি আমেরিকার দালাল, বামরা চীন ও রাশিয়ার দালাল। কিন্তু কেউ বাংলাদেশের দালাল হতে পারিনি। এর থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে আমরা কাউকে কেয়ার করি না, আল্লাহ ছাড়া আমরা কারো কাছে মাথা নত করতে জানি না। অনেকের ধারণা ভারত ছাড়া দেশ চলবে না। আমরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চাই। ভারতকে আমাদের যেভাবে প্রয়োজন, ভারতের আমাদের প্রয়োজন। সুতরাং আমাদের সেভাবে চলতে হবে। মালদ্বীপের মতো দেশ যদি চলতে পারে, আমরা কেন পারবো না। এ সময় তিনি রাসুল (সা.)-এর রাষ্ট্র কাঠামো উল্লেখ করে বলেন, আমাদের তা দেখিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে মুসলিম-অমুসলিম সব দেশের সম্পর্ক থাকবে। 

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে নাকি বিরোধীদল করতে দেওয়া হবে না, জাতীয় পার্টিকে বিরোধীদল বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু লাভ হবে না। ডাকসু তার প্রমাণ। নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। আল্লাহ সব ষড়যন্ত্র ধ্বংস করে দেবেন। তরুণরা আজ জেগে উঠেছে। 

র‌্যাবের হাতে আটকের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, তারা আমাদের অনেক টর্চার করেছে। কোনো লাভ হয়নি। আমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করি না। কোনো কিছুর বিনিময়ে আমাদের আল্লাহ রাস্তা থেকে এক পা-ও পিছু হটাতে পারবে না। 

তিনি আরো বলেন, রাসুল (সা.) খাবার না পেয়ে পেটে পাথর বেঁধেছিলেন। পেটে ক্ষুধা নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। আবুবকর (রা.) এবং ওমর (রা.) উদাহরণ টেনে বলেন, আমরা তাদের বংশধর। এটি আমাদের অহংকার। 

তিনি বলেন, জামায়াতই প্রথম প্রবাসীদের ভোটাধিকার দাবি করেন। কিছু দাবি আদায় হয়েছে। বাকি দাবিও আদায় হবে। প্রবাসীদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট ব্যুরো করতে হবে। স্বাধীনতার প্রশ্নে কারো সঙ্গে আপস করবো না। ভারত যদি কখনো আমাদের ওপর হামলা করে, তখন আমরা প্রথম প্রতিহত করবো। আওয়ামী লীগ তো তাদের প্রতিহত করবে না। 

তিনি বলেন, সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনকে যদি ধন্যবাদ জানাই, তাহলে তাকে খাটো করা হবে। তাদের অনেক ভূমিকা রয়েছে। তারা কোনো কিছু পাওয়ার জন্য করেনি। দেশের জন্য করেছে। 

তিনি আরো বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। বাংলাদেশ মানুষ আরেকটি কারচুপির নির্বাচন চায় না। হাসিনা মার্কা নির্বাচন চায় না। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের মানুষ তা মানবে না। এটি রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। অবাধ নির্বাচন করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো বসতে হবে। কেউ যদি কারচুপি করে, তাহলে তা শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারচুপি হলে আবারও রাস্তায় নামবো। আমি ডামি আর রাতের ভোট দিনে করতে দেবো না। মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে এটি বুঝতে ভুল করলে তার চওড়া মূল্য দিতে হবে। 

ডা. তাহের বলেন, ‘অনেকে বলে জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতের হামলার আশঙ্কা রয়েছে। আমি বলেছি দোয়া করতেছি এরা যেন ঢুকে পড়ে। ভারত ঢুকলেই আমাদের সেই বদনাম যাবে, যা ১৯৭১ সালে চাপানো হয়েছিল। তখন আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করার একটা সুযোগ পাব।’ এ জামায়াত নেতা বলেন, ‘পাশের দেশের লোক ঢুকলে আওয়ামী লীগ কখনো তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তো করবেই না, বরং সহযোগিতা করবে। তাহলে যুদ্ধ করলে সংগঠিত শক্তি হলাম আমরা। তখন আমরা হবো খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা।’

তিনি বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে মুসলিম বিশ্বের জাকাত বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। 

ডা. তাহের বলেন, যদি সরকারি উদ্যোগে ঢু সংগ্রহ করা যায়, তাহলে তিন-চার বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব। শুধু দেশের ভেতরের জাকাত নয়, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিপুল পরিমাণ জাকাত আদায় হয়, সে অর্থ বাংলাদেশে আনার প্রচেষ্টা চালানো হবে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকার একটি শক্তিশালী তহবিল গড়ে তোলা সম্ভব হবে। 

অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমিরকে কোবার পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা এবং সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। 

অনুষ্ঠানে পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)