অভিবাসীদের জন্য সতর্কবার্তা : যুক্তরাষ্ট্রে নথি, অধিকার ও আইনি প্রস্তুতির অপরিহার্যতা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 02-10-2025

অভিবাসীদের জন্য সতর্কবার্তা : যুক্তরাষ্ট্রে নথি, অধিকার ও আইনি প্রস্তুতির অপরিহার্যতা

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের জন্য চলমান রাজনৈতিক ও আইনি পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল ও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মাসগুলোতে দেশে অভিবাসন নীতি আরও কড়া হয়েছে, যা অভিবাসীদের জীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। বড় আকারের ডিপোর্টেশন পরিকল্পনা, অভিবাসীদের স্থিতি বাতিলের নীতি এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর উপস্থিতি বৃদ্ধির ফলে অভিবাসীদের মধ্যে ভয় বেড়েছে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, প্রশাসনের কাছে তারা কেবল সংখ্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন, অথচ তারা মানুষ তারা মা, বাবা, ছেলে, মেয়ে, সহকর্মী ও বন্ধু। 

ননপার্টিসান মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল টার্মে প্রায় ২০ লাখ অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে ২০২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন অভিবাসী প্রত্যাবর্তন করেছেন, যার বড় অংশই প্যান্ডেমিক-কালীন টাইটেল ৪২ আদেশের অধীনে প্রায় ৩০ লাখ ব্যক্তির রিমুভাল। বারাক ওবামার আট বছরের প্রেসিডেন্সিতে মোট ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডিপোর্টেশন হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন এ রেকর্ডকেও চ্যালেঞ্জ করছে। প্রথম আট মাসেই প্রায় ২০ লাখ অভিবাসীকে ডিপোর্ট করা হয়েছে, যা তার প্রথম মেয়াদের তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ বেশি। এই দ্রুত ডিপোর্টেশন তার ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ ডিপোর্টেশন অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। অধিকারকর্মীরা বলছেন, অনেকেই ভয়ের কারণে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে গেছেন, যদিও বাস্তবে তাদের বেশিরভাগই জোরপূর্বক পরিস্থিতির শিকার। 

এমন পরিস্থিতিতে অভিবাসীদের জন্য সতর্ক থাকা এবং সঠিক নথি সঙ্গে রাখা আগের চেয়ে বেশি জরুরি। ফেডারেল এজেন্টরা বিভিন্ন শহরে অভিযান চালাচ্ছেন এবং প্রায়ই জাতি, ভাষা, কর্মসংস্থান বা চেহারার ভিত্তিতে মানুষকে আটক করছেন। আইনি সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে আইনি ঝুঁকি, আটক ও সম্ভাব্য নির্বাসনের আশঙ্কা বহুগুণ বেড়ে যায়। অভিবাসন আইনজীবী জোসে পেরেজের মতে, স্থায়ী বাসিন্দাদের সর্বদা গ্রিনকার্ড সঙ্গে রাখা উচিত। এটি বৈধ প্রবেশ, বসবাসের অনুমতি ও সুবিধার প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে এটি কর্মসংস্থান অনুমোদন ও স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করে। 

গ্রিনকার্ড : স্থায়ী বাসিন্দাদের সর্বদা গ্রিনকার্ড সঙ্গে রাখা উচিত। এটি বৈধ প্রবেশ, বসবাসের অনুমতি এবং সুবিধার প্রমাণ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এটি কর্মসংস্থানের অনুমোদন এবং স্কুলে ভর্তি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। 

ওয়ার্ক অথোরাইজেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স : যাদের স্থায়ী বাসিন্দার অনুমোদন এখনো মেলেনি, তাদের অবশ্যই কাজের অনুমতি, নিউইয়র্ক স্টেট ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অন্য যে কোনো ছবি ও জন্মতারিখ সহ নথি রাখতে হবে। 

জন্ম সনদ : জন্ম সনদ ব্যক্তির পরিচয়, বয়স ও জন্মস্থান নিশ্চিত করতে অপরিহার্য। বর্তমানে ফেডারেল এজেন্টরা অভিবাসী চিহ্নিত করার জন্য জাতি, ভাষা বা কর্মসংস্থান বিবেচনা করতে পারে। তাই নিজের পরিচয় প্রমাণ করা আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 

মার্কিন পাসপোর্ট : মার্কিন নাগরিকদের প্রতিটি পরিবারের সদস্যের কাছে বৈধ পাসপোর্ট থাকা উচিত। এটি আইনি প্রবেশ, নাগরিকত্ব, পরিচয় এবং দেশের মধ্যে থাকার প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। 

অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি : বিবাহ সনদ, সামাজিক নিরাপত্তা কার্ড, আইটিআইএন নম্বর, জরুরি যোগাযোগের তালিকা এবং পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। এছাড়া ব্যক্তিগত ও শিশুদের স্বাস্থ্য তথ্য, মেডিকেল কন্ডিশন, অ্যালার্জি, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যবীমা-সংক্রান্ত তথ্যও সঙ্গে রাখা উচিত। 

আইনি সেবা ও অধিকার : প্রত্যেক নাগরিকের আইনি প্রতিরক্ষা অধিকার আছে। যে কোনো আটক ব্যক্তির আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার অধিকার রয়েছে, যদিও সরকার আইনজীবী সরবরাহ করার বাধ্যবাধকতা রাখে না। নিউ ইয়র্কের অভিবাসী সম্প্রদায়ে আইনজীবীর অভাব, বিশেষ করে স্প্যানিশ ভাষাভাষী অভিবাসীদের জন্য আইনি সহায়তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। 

প্রস্তুতির গুরুত্ব : অভিবাসন নীতি ও প্রশাসন পরিবর্তনের এই সময়ে আইন বিশেষজ্ঞরা অভিবাসীদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেন। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, অভিবাসন সংস্কারের প্রয়োজন আছে। প্রতিটি পরিবারকে সঠিক নথি এবং আইনি অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অত্যন্ত জরুরি। এ প্রস্তুতি তালিকা অনুসরণ করে অভিবাসীরা আইনি ঝুঁকি কমাতে, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবেন। 

প্রযুক্তি ও ডিজিটাল নথির ব্যবহার : বিশেষজ্ঞরা অনলাইনে নিরাপদ নথি সংরক্ষণের পরামর্শ দেন। গুরুত্বপূর্ণ নথি যেমন জন্মসনদ, পাসপোর্ট, গ্রিন কার্ডের কপি স্ক্যান করে এনক্রিপ্টেড ড্রাইভে রাখা যেতে পারে। এতে মূল কাগজ হারালে বা জরুরি অবস্থায় দ্রুত তথ্য প্রদান করা সহজ হয়। 

প্রতিটি পরিবারকে সঠিক নথি এবং আইনি অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। এতে আইনি ঝুঁকি কমবে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে। বিশেষজ্ঞরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে নথি নিরাপদে সংরক্ষণের পরামর্শও দিচ্ছেন। জন্ম সনদ, পাসপোর্ট ও গ্রিন কার্ডের কপি স্ক্যান করে এনক্রিপ্টেড ড্রাইভে রাখা হলে মূল কাগজ হারালেও প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রদর্শন করা সম্ভব। 

অভিবাসীদের জন্য স্থানীয় এনজিও ও কমিউনিটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে তারা আইনি সহায়তা, তথ্য ও জরুরি সেবা দ্রুত পেতে পারেন। সম্প্রদায়ভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে উঠলে একে অপরকে সহায়তা করা সহজ হয় এবং জটিল পরিস্থিতিতে সমন্বয় সম্ভব হয়। ফেডারেল কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া থাকা ব্যক্তিরা আইনের বাইরে এবং অপরাধী। তাদের দাবি, এ নীতি জননিরাপত্তা রক্ষা ও শ্রমবাজার সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। তবে অধিকারকর্মীদের মতে, এ ধরনের নীতি কেবল ভয় ও অনিশ্চয়তা বাড়ায়। 

অভিবাসীরা বর্তমানে যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা শুধু আইনি নয়, মানবিক সংকটও বটে। স্থানীয় অধিকারপালকরা বলছেন, আইনগত সচেতনতা, সঠিক নথি ও সম্প্রদায়ের সমর্থনই এখন অভিবাসীদের সুরক্ষার মূল চাবিকাঠি। তাদের মতে, পরিবারগুলোকে টিকিয়ে রাখা, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অভিবাসীদের মানবিক মর্যাদা রক্ষা করা এসবই যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। এ বাস্তবতায় অভিবাসীদের জন্য প্রস্তুতি শুধু ব্যক্তিগত প্রয়োজন নয়, বরং টিকে থাকার অপরিহার্য শর্ত। 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)