নাহিদ ও গোয়েন লুইসের বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড়


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 08-10-2025

নাহিদ ও গোয়েন লুইসের বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড়

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সেফ এক্সিট আর জাতিসংঘের ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস-এর ‘সব জানেন’ মন্তব্যে নানান আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে। নাহিদ ইসলামের মন্তব্যে একদিকে যেমন রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ নাড়া দিয়েছে, এর পাশাপাশি উদ্বেগ উৎকন্ঠা-ও দেখা দিয়েছে। অপরদিকে গোয়েন লুইস-এর মন্তব্যও একটি বড়ো ধরনের প্রশ্ন তৈরি করেছে। 

কে কি বলেছেন

সবার আগে দেখা যাক জাতিসংঘের ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস কি কি বলেছেন তার চুম্বক অংশগুলো। গত ৫ অক্টোবর রোববার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতিসংঘের ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইসের সঙ্গে বৈঠককালে পরিচয় পর্ব তিনি কিছু কথা বলেন। পরিচয় পর্বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির নির্বাচন করবেন বলে জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় জাতিসংঘের ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারী বলেন, তিনি এ বিষয়টি জানেন। এবং কোন আসন থেকে কাকে টেকওভার করা হচ্ছে তাও তিনি জানেন। এ সময়ে হুমায়ুন কবিরের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরো বলেন, সিলেট থেকেই পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসছে বলেও তিনি জানেন।

নাহিদ ইসলাম কি বললেন?

এদিকে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের (নিরাপদ প্রস্থান) কথা ভাবতেছে’। 

সাক্ষাৎকারে সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, তারা কেউ সরকারের উপদেষ্টা পদে যেতে চাননি। তারা জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেটা হলে ছাত্রদের দায়িত্ব নিতে হতো না। রাজনৈতিক শক্তি বা অভ্যুত্থানের শক্তি সরকারে না থাকলে অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাসও টিকত না। প্রথম ছয় মাস সরকারকে উৎখাত করা বা প্রতিবিপ্লব করার নানা ধরনের চেষ্টা চলমান ছিল। এটা এখনো মাঝেমধ্যে আছে। নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলের নেতাদের এবং যারা উপদেষ্টা হয়েছেন, তাদের অনেককে বিশ্বাস করাটা আমাদের অবশ্যই ভুল হয়েছিল। আমাদের উচিত ছিল ছাত্র নেতৃত্বকেই শক্তিশালী করা, সরকারে গেলে সম্মিলিতভাবে যাওয়া। নাগরিক সমাজ বা রাজনৈতিক দলকে আমরা যে বিশ্বাসটা করেছিলাম, যে আস্থা রেখেছিলাম, সেই জায়গায় আসলে আমরা প্রতারিত হয়েছি। অনেক উপদেষ্টা নিজেদের আখের গুছিয়েছে অথবা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে বিট্রে (প্রতারণা) করেছে। যখন সময় আসবে, তখন আমরা এদের নামও উন্মুক্ত করব।’ সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরও বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে। তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে। এটা আমাদের অনেক পোহাতে হচ্ছে এবং পোহাতে হবে। কিন্তু তারা যদি এটা বিশ্বাস করত যে তাদের নিয়োগকর্তা ছিল গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি, রাজপথে নেমে জীবন দেওয়া ও আহত সাধারণ মানুষজন এবং তারা যদি তাদের ওপর ভরসা করত, তাহলে উপদেষ্টাদের এই বিচ্যুতি হতো না।’ সাবেক এই উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টে সেজদা দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা, ছাত্ররা নয়।’ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন না করে, জাতীয় সরকার গঠন করলে আক্ষেপ তৈরি হতো না।

দু’টি ঘটনার একটি বিশ্লেষণ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দফা ঘোষণা করেছিলেন সে সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হয়েছিলেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারিতে সরকার থেকে পদত্যাগ করে এনসিপির আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন নাহিদ। তাই এই নাহিদ ইসলাম যা বলেছেন তাতে কারো কারো মতে, তিনি আতঙ্কিত নয় প্রচণ্ড হতাশা থেকে এখন এসব কথা বলেছেন। আবার তিনি একথাও বলেছেন সেফ এক্সিটের কথা। বলেছেন তার নামও বলে দেবেন। কিন্ত্র প্রশ্ন হচ্ছে তার এমন মন্তব্যে লাভবান কে বা কারা হবে। মাঠে নানান ধরনের কর্মসূচি নিয়ে এখন মাঠ গরম করার চেষ্টা করছে পতিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একের পর পর ঝটিকা মিছিল আর সীমান্তের ওপার থেকে হুঙ্কার সরকারকে অনেক ভাবাচ্ছে। কারো কারো মতে, এ সময় নাহিদ ইসলামের এমন মন্তব্য আওয়ামী পালে বড়ো ধরনের হাওয়া দেবে। সরকারের ভেতরে বাহিরের দুর্বলতা প্রকাশ পাবে? সরকারের বিভিন্ন সেক্টরে অন্যরকম অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলেও কারো কারো অনুমান। কারো কারো প্রশ্ন, নাহিদ ইসলাম যদি সেফ এক্সিট প্রত্যাশি ওইসব উপদেষ্টার নাম এখন প্রকাশ করেও ফেলেন সেক্ষেত্রে বর্তমান রাজনৈতিক সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাতে কি তার দল এনসিপি’র কোনো লাভ হবে। হবে না... বরং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে লাখ লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারবর্গ মহাদুশ্চিন্তায় পড়বেন বলে কারো কারো অভিমত।

অন্যদিকে জাতিসংঘের ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস-এর ‘সব জানেন’ মন্তব্য আরেক ধরনের বার্তা দিচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কারো কারো মতে, গোয়েন লুইসের পক্ষ থেকে আগে ভাগে সব জানা’র বিষয়টি বেশ রহস্যজনকও বটে। একটি কূটনীতিকের পক্ষে আগে ভাগে সব জেনে ফেলা বিষয়টি গোয়েন লুইস একে প্রভাবশালির কাতারে নিয়ে গেছে। গোয়েন লুইস এতো কিছু আগাম জেনে নেওয়ার বার্তাতে কি বুঝাচ্ছে? তাহলে কি ধরে নেওয়া যায় আন্তর্জাতিক একটি শক্তিশালি মহল বাংলাদেশ সম্পর্কে আগেভাগে কোনো পরিকল্পনা করে রেখেছেন বা রেখেছিলেন? সেই ছকে কি দেশ এগুচ্ছে? বিষয়গুলো সব মহলে ভাবাচ্ছে। গোয়েন লুইস কেন্টারবারিতে ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ইউরোপিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি স্যান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। গোয়েন লুইসের রয়েছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে কাজের ২০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশে নিয়োগ পাওয়ার আগ পর্যন্ত ২০১৯ সাল থেকে গোয়েন লুইস ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক পদে কাজ করেছেন। পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে কাজের সময় তিনি ৮ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে জরুরি সেবা ও মানবিক ত্রাণ সহায়তা দিতে নিয়োজিত ৪ হাজার শক্তিশালী দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই এমন কূটনীতিকের এধরনের ‘সব জানার’ বিষয়টি হালকা ভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)