দুই মসজিদে হামলার হুমকি : দুই ব্যক্তি গ্রেফতার


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 08-10-2025

দুই মসজিদে হামলার হুমকি : দুই ব্যক্তি গ্রেফতার

মিশিগানের ডিয়ারবর্ন ও ডিয়ারবর্ন হাইটস শহরের দুটি মসজিদ ইসলামিক সেন্টার অব আমেরিকা (ডিয়ারবর্ন) এবং ইসলামিক হাউস অব উইজডমকে (ডিয়ারবর্ন হাইটস) লক্ষ্য করে টেক্সাস ও ভার্জিনিয়ার দুই ব্যক্তি সন্ত্রাসী হামলার হুমকি দেওয়ায় স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর ইসলামিক সংগঠন, পুলিশ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এফবিআই টেক্সাস ও ভার্জিনিয়ার অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। ডিয়ারবর্ন হাইটস পুলিশপ্রধান আহমেদ হায়দার জানিয়েছেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর তাদের কাছে একটি মসজিদে সম্ভাব্য হুমকির খবর আসে। তদন্তে জানা যায়, একজন ব্যক্তি ইসলামিক ইনস্টিটিউট অব আমেরিকায় ফোন করে মসজিদটি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, এই ব্যক্তি টেক্সাসের বাসিন্দা।

অন্যদিকে ভার্জিনিয়ার লিঞ্চবার্গের বাসিন্দা ম্যাসিন হরস্টেমায়ার, ৩২, ডিয়ারবর্নের ইসলামিক সেন্টার অব আমেরিকাকে লক্ষ্য করে হামলার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি ইউটিউবে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী বক্তব্য দিয়ে মুসলিম ও কৃষ্ণাঙ্গদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া তিনি ২০১৫ সালের চার্লস্টনের গির্জা হামলাকারী ডিলান রুফকে অনুসরণ করতেন বলে জানা গেছে। ফেডারেল কর্তৃপক্ষ তাকে সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদে উসকানি, এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে।

ডিয়ারবর্ন হাইটস পুলিশ জানিয়েছে, টেক্সাসে বসবাসকারী এক সন্দেহভাজনকে ইতোমধ্যেই শনাক্ত করা হয়েছে, তবে তদন্ত চলমান থাকায় তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। অন্যদিকে ভার্জিনিয়ার লিঞ্চবার্গ শহরে বসবাসকারী ম্যাসিন হরস্টেমায়ারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে ব্লু রিজ রিজিওনাল জেলে আটক আছেন এবং জামিন ছাড়া আটক রাখা হয়েছে। আদালতের নথি অনুযায়ী, গত সপ্তাহে তাকে লিঞ্চবার্গ জেনারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে হাজির করা হয়।

হরস্টেমায়ারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদে প্ররোচনা, টেলিফোনে অশ্লীল বা গালি দেওয়া ভাষা ব্যবহার, এবং চিঠি বা বার্তার মাধ্যমে হুমকি ও চাঁদাবাজি করার অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে জানা গেছে, তিনি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও পোস্ট করছিলেন যেখানে তিনি মুসলিম ও কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়কে হত্যার হুমকি দেন এবং শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের মতবাদ প্রচার করছিলেন। এছাড়াও তিনি একাধিকবার বলেছেন, যদি তিনি হামলা চালাতেন তবে ডিয়ারবর্নের একটি মসজিদকে লক্ষ্য করতেন এবং এ কাজে তিনি একটি এআর-১৫ রাইফেল ব্যবহার করতেন।অন্যদিকে টেক্সাসের সন্দেহভাজনের বিরুদ্ধে একই ধরনের হুমকি ও ঘৃণামূলক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও তার নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি, পুলিশ জানিয়েছে তিনি অনলাইনে এবং ফোনে হুমকি দিয়ে ডিয়ারবর্ন হাইটসের একটি মসজিদকে টার্গেট করেছিলেন। ভার্জিনিয়ার আইনে সন্ত্রাসবাদে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। এছাড়া সন্ত্রাসবাদে প্ররোচনা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। টেলিফোনে অশ্লীল ভাষা ব্যবহারের অভিযোগটি তুলনামূলক হালকা অপরাধ এবং এটিকে মিসডিমিনার হিসেবে ধরা হয়। তবে সব অভিযোগ প্রমাণিত হলে হরস্টেমায়ার একাধিক দশক জেল খাটতে পারেন।

ডিয়ারবর্ন হাইটসের পুলিশ প্রধান আহমেদ হায়দার তার শহরের নাগরিকদের উদ্দেশে বলেছেন, আমাদের শহরে ঘৃণা, ভয়ভীতি বা সহিংসতার কোনো স্থান নেই। প্রত্যেক বাসিন্দা, তাদের ধর্ম বা পরিচয় নির্বিশেষে, এখানে নিরাপদ ও সম্মানিত বোধ করবেন। ডিয়ারবর্ন শহরের পুলিশ প্রধান ইসা শাহিনও ঘোষণা করেছেন, সব উপাসনালয়কে ঘিরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, গ্র্যান্ড ব্ল্যাঙ্ক টাউনশিপে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ট্র্যাজিক গুলির ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমরা অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ডিয়ারবর্নের মেয়র বিল বাজ্জি বলেছেন, আমাদের কমিউনিটিতে যে কোনো ধরনের হুমকি আমরা বরদাশত করব না। সে হুমকি মসজিদ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কোনো বাসিন্দা কিংবা দর্শনার্থীকে কেন্দ্র করে হোক। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা শুধু মিশিগান নয়, পুরো যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে। ভার্জিনিয়ার অভিযুক্ত ব্যক্তি ডিলান রুফ নামক কুখ্যাত শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বার্তা লিখেছিলেন। ডিলান রুফ ২০১৫ সালে সাউথ ক্যারোলিনার একটি গির্জায় কৃষ্ণাঙ্গ উপাসনাকারীদের গুলি করে হত্যা করেছিল। এ ঘটনার সঙ্গে সদৃশ্য টেনে অনেকেই মনে করছেন, অনলাইনে ঘৃণা ছড়িয়ে তা বাস্তব হামলায় রূপ নেওয়ার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।

মিশিগানের ডিয়ারবর্ন ও ডিয়ারবর্ন হাইটসের দুটি মসজিদে হামলার হুমকি দেওয়ার ঘটনায় মুসলিম কমিউনিটি যেমন আতঙ্কিত, তেমনি তারা আবারও ঐক্যবদ্ধভাবে ঘৃণা ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা এই হুমকিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)