শিকাগোর অভিবাসনবিরোধী অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 22-10-2025

শিকাগোর অভিবাসনবিরোধী অভিযান ঘিরে রণক্ষেত্র

ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত ফেডারেল অভিবাসন অভিযান অপারেশন মিডওয়ে ব্লিটজ- শিকাগো শহরে ভয়াবহ উত্তেজনা, সংঘর্ষ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এ অভিযানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭০০-এর বেশি অভিবাসী গ্রেফতার হয়েছেন। আটকদের মধ্যে বেশির ভাগই ল্যাটিনো, এশিয়ান ও আফ্রিকান অভিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। এ অভিযান শুধু গ্রেফতারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে শিকাগোর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষত : আলবানি পার্ক, সাউথ অ্যাভিনিউ ও ওয়েস্ট সাইড-গণপ্রতিবাদ ও ফেডারেল এজেন্টদের মধ্যে সহিংস মুখোমুখি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। টিয়ার গ্যাস, পেপার বল, পিপার স্প্রে ব্যবহার ছাড়াও গাড়ি ধাক্কা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গোটা শহর যেন এক অনিয়ন্ত্রিত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, যেখানে নাগরিক অধিকার ও রাষ্ট্রীয় বলপ্রয়োগের মধ্যে সরাসরি সংঘর্ষ চলছে।

৯ অক্টোবর, যুক্তরাষ্ট্রের জেলা আদালতের বিচারক সারা এলিস একটি অস্থায়ী আদেশ জারি করে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাসসহ বিভিন্ন দমনমূলক সরঞ্জাম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেন। কিন্তু বাস্তবে আদেশ মানা হয়নি বলেই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এটি নানা ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় তা স্পষ্ট। এই পরিস্থিতিতে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগে বিচারক এলিস ২০ অক্টোবর হোমল্যান্ড সিকিউরিটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির করেন। তিনি জানান, ১২ অক্টোবর আলবানি পার্ক ও ১৪ অক্টোবর দক্ষিণ শিকাগোর ঘটনায় টিয়ার গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে তার নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে।

কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের ডেপুটি ইনসিডেন্ট কমান্ডার কাইল হারভিক আদালতে জানান, আদালতের আদেশ সবএজেন্টদের জানানো হয়েছে এবং প্রতিদিন সকালের ব্রিফিংয়েও তা পুনরায় আলোচনা করা হয়। তার দাবি, সংশ্লিষ্ট দুটি ঘটনার সময় জনতা এজেন্টদের ঘিরে ফেলেছিল এবং তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিল বলে সতর্কতার পর টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা হয়।

তবে বাদীপক্ষ আদালতে দাবি করে, জনতাকে পূর্ব সতর্কতা না দিয়ে হঠাৎ আক্রমণ চালানো হয়েছে এবং এতে সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা ও সাধারণ নাগরিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এটি তাদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। হারভিক আরো বলেন, দক্ষিণ শিকাগোর ঘটনায় একটি সন্দেহভাজন গাড়ি এজেন্টদের গাড়িতে ধাক্কা দেয়, পরে উত্তেজিত জনতা ডিম, ইট ও ধাতব বস্তু ছুড়ে মারে। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

বিচারক এলিস প্রশ্ন তোলেন, কেন এজেন্টরা মুখোশ পরে অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। উত্তরে হারভিক বলেন, এটি নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস (ডক্সিং) রোধে একটি সতর্কতা ব্যবস্থা। এছাড়া তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত কোনো এজেন্ট আদালতের নির্দেশ অমান্যের জন্য শাস্তির মুখোমুখি হননি। বিচারক বলেন, শরীর-সংযুক্ত ক্যামেরা ব্যবহারের নির্দেশ কোনো আলাপ-আলোচনার বিষয় নয়-এটি ছিল একটি স্পষ্ট ও বাধ্যতামূলক আদেশ। তিনি আরো বলেন, আমি শিকাগোতে বাস করি, গুহায় নয়। ভিডিও ফুটেজ ও সংবাদ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, আমার আদেশ মানা হচ্ছে না। ফলে তিনি নির্দেশ সংশোধন করে বলেন, যেসব এজেন্ট বডি-ক্যাম ব্যবহারে প্রশিক্ষিত, তারা অবশ্যই তা অভিযানের সময় ব্যবহার করবেন। আদালতের আদেশ উপেক্ষা করা হলে তার জবাবদিহি করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

অভিযান ঘিরে শিকাগোজুড়ে অভিবাসীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। একইসঙ্গে নাগরিক অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। এ শহর আমাদের, আমরা একে ক্যাম্পে পরিণত হতে দেব না। এমন সেøাগানে প্রতিদিনই শিকাগোর রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। অপারেশন মিডওয়ে ব্লিটজ এখন আর কেবল একটি অভিবাসন অভিযান নয়, এটি শিকাগোর রাজনৈতিক, সামাজিক ও মানবাধিকার সংকটের প্রতীক হয়ে উঠেছে। আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং এই উত্তেজনার কোন দিকে গড়াবে, তা এখন গোটা দেশের নজরে।

প্যারোলপ্রাপ্ত অভিবাসীদের জন্য ১ হাজার ডলার ফি নির্ধারণ

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট গত ১৭ অক্টোবর এক ঘোষণায় জানায়, মানবিক কারণে প্যারোলের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা অভিবাসীদের জন্য নতুন করে ১ হাজার ডলার ইমিগ্রেশন ফি আরোপ করা হয়েছে। ডিএইচএস জানায়, এ ফি আরোপের উদ্দেশ্য হলো প্যারোল ব্যবস্থার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং এর অপব্যবহার রোধ করা। ডিএইচএসের সহকারী সচিব ট্রিশা ম্যাকলাফলিন বলেন, বাইডেন প্রশাসন অভিবাসন ব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে এবং পারোলকে কার্যত একটি সাধারণ ক্ষমার ব্যবস্থায় রূপান্তর করেছে। এর ফলে লাখ লাখ অপরিচিত ও যাচাই না হওয়া অবৈধ অভিবাসী বিনা প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। এটি সব আমেরিকানের জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরো বলেন, এ নতুন ফি প্রবর্তনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম নিশ্চিত করছেন যে, যারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন, তাদেরও যেন কিছু দায়িত্ব থাকে এবং তারা যেন পারোল ব্যবস্থার অপব্যবহার না করতে পারেন।

ডিএইচএস জানিয়েছে, এ ফি পারোল অনুমোদনের তারিখ থেকে প্রযোজ্য হবে। তবে প্যারোল আবেদন করার সময় কিংবা ট্রাভেল ডকুমেন্ট হাতে পাওয়ার সময় এই ফি প্রযোজ্য হবে না। প্রতি বছর মার্কিন ভোক্তা মূল্যসূচকের ওপর ভিত্তি করে এই ফি পুনর্নির্ধারণ করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ডিএইচএস। যে কোনো পরিবর্তন হলে ফেডারেল রেজিস্টারে তা ঘোষণা করা হবে।

এ অর্থ সংগ্রহ করবে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি), ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এবং সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)। এ সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো যখন ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপকভাবে দেশ থেকে বিতাড়নের উদ্যোগ নিয়েছে এবং আইনি অভিবাসনের পথ সংকুচিত করার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় এইচ-১বি ভিসার ফি ১ লাখ ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব, যা নিয়ে মার্কিন চেম্বার অব কমার্স ইতোমধ্যে মামলা করেছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)