বাংলাদেশি আবির হত্যাকাণ্ড : দুজনের ৩৪ ও ৩৫ বছরের কারাদণ্ড


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 22-10-2025

বাংলাদেশি আবির হত্যাকাণ্ড : দুজনের ৩৪ ও ৩৫ বছরের কারাদণ্ড

২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বোমন্ট শহরের ক্রিস ফুড মার্টে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে শেখ আবির হোসেন (৩৮) নামে এক বাংলাদেশি গবেষক নিহত হন। তিনি বাংলাদেশের সাতক্ষীরার জাপাগাত গ্রামের বাসিন্দা। লামার ইউনিভার্সিটির গবেষণা সহকারী ও ছাত্র আবির দোকানে কাজ করার সময় দুই সশস্ত্র দুর্বৃত্তের হামলায় নিহত হন। দুর্বৃত্তরা দোকানে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং কোনো অর্থ না নিয়ে সিগারেট নিয়ে পালিয়ে যায়।

ঘটনার পরপরই পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রথম আসামি, ১৯ বছর বয়সী কিয়ান্ড্রে মারকুইস রবার্টসন গ্রেফতার হন। তার মোবাইল ফোনে হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে ল্যারি নাথানিয়েল হেগানের সঙ্গে বার্তা বিনিময়ের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা তাদের পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। এরপর ২০২৪ সালের ২৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের মার্শালস সার্ভিস ল্যারি হেগানকে নিউ অরলিন্সে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয়।

মামলাটি ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব টেক্সাস আদালতের বিচারক মারসিয়া ক্রোনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। দীর্ঘ শুনানির পর ২০২৪ সালের ১ ও ২ অক্টোবর কিয়ান্ড্রে মারকুইস রবার্টসন এবং ল্যারি নাথানিয়েল হেগান যথাক্রমে ক্রিস ফুড মার্টে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত ফেডারেল অস্ত্র আইনের লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন। আদালত তাদের যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৫ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।

নিহত শেখ আবির হোসেন সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত শেখ আজিজুল হাকিমের ছেলে। তিনি টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সহকারী ছিলেন। পাশাপাশি একটি রেস্টুরেন্টে খণ্ডকালীন কাজ করতেন। আবিরের স্ত্রী সানজিদা আলম তাদের একমাত্র কন্যা আরশিয়াকে (২) নিয়ে নিউইয়র্কে তার মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন, আর আবির থাকতেন টেক্সাসে। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে ২০১৪ সালে শেখ আবির হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। এরপর ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।

আবিরের মেজো ভাই শেখ জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার ভাই আবির খুব মেধাবী ছিল। ২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করার পর ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কর্মরত ছিল। সেখানে থাকা অবস্থায় ২০২২ সালে টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডির জন্য স্কলারশিপ পায়। ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে পিএইচডি শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ছয় মাস পরে তার স্ত্রী ও শিশুকে সেখানে নিয়ে যায়। গবেষণা কাজের পাশাপাশি টেক্সাসের স্থানীয় ক্রিস ফুড মার্টে খণ্ডকালীন কাজ করতো। তবে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড তার পরিবারের স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে।

দুর্বৃত্তদের মোবাইল ফোনে পাওয়া বার্তা ও সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত তদন্ত চালায়। দুই আসামিই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ঘটনায় বোমন্ট পুলিশ বিভাগ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রশংসা করা হয়েছে। শেখ আবির হোসেনের অকাল মৃত্যু তার পরিবার ও বাংলাদেশের প্রবাসী সমাজের জন্য এক গভীর শোকের কারণ। তবে এ ঘটনায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত হয়েছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)