নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে গৃহহীন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 22-10-2025

নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলে গৃহহীন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার

নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোর গৃহহীন শিক্ষার্থীর সংখ্যা নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। সদ্য প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে প্রায় ১ লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষার্থী গৃহহীন ছিল, অর্থাৎ প্রতি সাতজনের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী কোনো না কোনো সময়ে বাসস্থানহীন অবস্থায় শিক্ষা গ্রহণ করেছে। এই সংখ্যা নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ এবং তা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১২ হাজার বেশি। যদি এই বিশাল সংখ্যক গৃহহীন শিক্ষার্থীকে একটি আলাদা স্কুল জেলা হিসেবে ধরা হয়, তবে সেটি হবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ২০টি বড় স্কুল জেলার মধ্যে একটি-যা ডালাস, সিয়াটেল বা সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহরের পুরো স্কুল ব্যবস্থার চেয়েও বড়।

এই গৃহহীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশ ছিল বিভিন্ন আশ্রয়শালায়, ৫৩ শতাংশ ছিল ‘ডাবল আপ’ বা অন্য পরিবারের সঙ্গে অস্থায়ীভাবে বসবাসরত, এবং বাকি ৫ শতাংশ ছিল সম্পূর্ণভাবে অনিশ্চিত পরিবেশে যেমন হোটেল, গাড়ি, পার্ক বা রাস্তায়। শিক্ষা অধিকারকেন্দ্রিক সংগঠন অ্যাডভোকেটস ফর চিলড্রেন অব নিউইয়র্ক জানিয়েছে, এটি নিউইয়র্ক শহরের দীর্ঘমেয়াদী আবাসন সংকট এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের একটি সরাসরি প্রতিফলন।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় প্রায় ১ লাখ ১ হাজার শিক্ষার্থী গৃহহীন ছিল। এর মধ্যে প্রায় ২৮ হাজার ছিল আশ্রয়শালায়, ৬৫ হাজারের বেশি ‘ডাবল আপ’ অবস্থায় এবং প্রায় ৩ হাজার ৮৬০ জন ছিল সম্পূর্ণ অনিশ্চিত বাসস্থানে। সে সময় ‘রিমোট লার্নিং’-এর কারণে অনেক শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলেই ধারণা করা হয়, যার ফলে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। পরবর্তী বছরগুলোতেও এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ১ লাখ ১৯ হাজার ৩২০ শিক্ষার্থী গৃহহীন ছিল এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে তা পৌঁছে ১ লাখ ৪৬ হাজারে। এ ক্রমবর্ধমান প্রবণতা দেখায় যে সমস্যা কেবল অস্থায়ী নয়, বরং একটি গভীর ও কাঠামোগত সংকটে পরিণত হয়েছে।

গৃহহীন শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন স্কুলে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক সময় পরিবারগুলোকে এমন আশ্রয়শালায় পাঠানো হয়, যেগুলো তাদের শিশুদের স্কুল থেকে অনেক দূরে। ফলে শিক্ষার্থীদের হয় দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়, নয়তো স্কুল বদলাতে হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, আশ্রয়শালায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের প্রায় ৪০ শতাংশ এমন স্কুলে পড়ে যা তাদের বর্তমান বাসস্থানের বোরোর বাইরের। এর ফলে অনুপস্থিতি ব্যাপক বেড়ে যায়, যেখানে দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী নিয়মিত স্কুলে যেতে ব্যর্থ হয়।

এছাড়া অনেক গৃহহীন শিশুর জন্য স্কুল মিলই দিনের প্রধান খাবার। শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে প্রাতঃরাশ, মধ্যাহ্নভোজন এবং আফটারস্কুল মিলস পায়। এছাড়া কিছু স্কুলে খাদ্য প্যান্ট্রি রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা খাদ্য ও ব্যক্তিগত হাইজিন সামগ্রী নিতে পারে।

শুধু উপস্থিতিই নয়, গৃহহীন শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ফলাফলেও অনেক পিছিয়ে। যেমন, আশ্রয়শালায় থাকা ৩-৮ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাত্র ২২ শতাংশ স্টেট পর্যায়ের ইংরেজি ও গণিত পরীক্ষায় প্রোফিসিয়েন্ট হয়েছে, যেখানে তাদের স্থায়ী ঠিকানার সহপাঠীদের পারফরম্যান্স দ্বিগুণেরও বেশি। হাইস্কুল পর্যায়ে, প্রতি আটজন আশ্রয়শালার শিক্ষার্থীর একজন ড্রপআউট করেছে এবং মাত্র ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী চার বছরের মধ্যে হাইস্কুল সম্পন্ন করতে পেরেছে।

নিউইয়র্ক সিটি বিভাগ অবশ্য গৃহহীন শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে শহরজুড়ে ১৬০ জন আশ্রয়শালাভিত্তিক কমিউনিটি কো-অর্ডিনেটর, ১০৭ জন স্কুলভিত্তিক কো-অর্ডিনেটর এবং ১ হাজারের বেশি সমাজকর্মী এই শিক্ষার্থীদের সহায়তায় কাজ করছেন। এছাড়া শহরের স্কুল ফান্ডিং ফরমুলা ২০২৩ সালে আপডেট করা হয়েছে, যাতে গৃহহীন শিক্ষার্থীদের বেশি সংখ্যায় থাকা স্কুলগুলো অতিরিক্ত অর্থ সহায়তা পায়। শিক্ষা বিভাগের মুখপাত্র চিয়ান টুল জানিয়েছেন, তারা ছাত্রদের স্কুলে আসা, টিকাদান, পরিবহন ও একাডেমিক সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। অ্যাডভোকেটস ফর চিলড্রেন অব নিউইয়র্ক আশা করছে, পরবর্তী মেয়র নির্বাচিত হলে এই সমস্যা সমাধানে আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়ে কাজ করবেন, আশ্রয়শালাগুলোকে শিক্ষার্থীদের স্কুলের কাছাকাছি স্থানে সরিয়ে নেবেন এবং প্রারম্ভিক শিক্ষায় প্রবেশাধিকারের সুযোগ বাড়াবেন। অ্যাডভোকেটস ফর চিলড্রেন অব নিউইয়র্ক নির্বাহী পরিচালক মারিয়া ওডম বলেছেন, শিক্ষা গৃহহীনতা চক্র ভাঙার প্রধান চাবিকাঠি, কিন্তু আমাদের শহর বর্তমানে আশ্রয়শালার শিক্ষার্থীদের ব্যর্থ করছে। নতুন মেয়রের নেতৃত্বে এটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকতে হবে।

সবশেষে বলা যায়, নিউইয়র্ক সিটির গৃহহীন শিক্ষার্থী সংকট এখন আর উপেক্ষা করার মতো অবস্থায় নেই। এটি একটি বহুমাত্রিক সমস্যা, যার সমাধানে শুধুমাত্র শিক্ষা বা আবাসন বিভাগ নয়, পুরো শহর প্রশাসনের একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন। শিক্ষা, সমাজকল্যাণ, আবাসন ও পরিবহন বিভাগসহ সব পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টায়ই সম্ভব এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। এ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কেবল তাদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, বরং গোটা শহরের ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত। এখনই সময়, দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)