রঙে পাওয়া গেলো উচ্চ মাত্রায় বিপজ্জনক ভারী ধাতু সীসা


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 29-10-2025

রঙে পাওয়া গেলো উচ্চ মাত্রায় বিপজ্জনক ভারী ধাতু সীসা

বাংলাদেশে ডেকোরেটিভ কাজে ব্যবহৃত রঙে ১,৯০,০০০ পিপিএম পর্যন্ত বিপজ্জনক ভারী ধাতু সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন- এসডোর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া ডেকোরেটিভ রঙে সীসার এই উদ্বেগজনক মাত্রা প্রকাশ পেয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী রঙে সীসার ব্যবহারের মাত্রা সর্বোচ্চ ৯০ পিপিএম। তবে গবেষণায় পরীক্ষিত প্রায় ৪২ শতাংশ রঙে এই মাত্রার বহুগুন বেশি সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। লেড এক্সপোজার এলিমিনেশন প্রজেক্ট (LEEP), ইন্সটিগিও, বিএসটিআই এবং ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় পরিচালিত ‘রঙে সীসার উপস্থিতি এবং সীসামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অগ্রগতি মূল্যায়ন’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রেস ব্রিফিংয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ প্রকাশ করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর মঙ্গলবার এসডোর প্রধান কার্যালয়ে দুপুর ১২টা থেকে ১টা এই প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। 

গবেষণায় পরীক্ষিত মোট ১৬১টি নমুনার মধ্যে ৯৩টি (৫৭.৮%) নমুনায় নিরাপদ মাত্রা (৯০ পিপিএম-এর কম) পাওয়া গেছে। এই নমুনাগুলো শীর্ষস্থানীয় ন্যাশনাল ও মাল্টিন্যাশনাল উভয় ব্র্যান্ডের (যেমন: বার্জার, এশিয়ান পেইন্টস, নিপ্পন ইত্যাদি) রং। অন্যদিকে ৪২.২% (১৬১টির মধ্যে ৬৮টি) নমুনা বিএসটিআই নির্ধারিত সীসার নিরাপদ মাত্রা ৯০ পিপিএম-এর অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে ২৬.২% নমুনায় ১,০০০ পিপিএম-এর বেশি এবং ৩.১% নমুনায় ৫০,০০০ পিপিএম-এর বেশি সীসা পাওয়া গেছে। নির্ধারিত মাত্রা অতিক্রমকারী এই ব্র্যান্ডগুলো মূলত ক্ষুদ্র, স্থানীয় বা অনিবন্ধিত উৎপাদক, যাদের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা বা নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকির অভাব রয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে এসডোর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ, “আমরা জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সকল প্রকার রং থেকে সীসা নির্মূল করার জন্য কর্তৃপক্ষ এবং শিল্প খাতের স্টেকহোল্ডারদের কাছে অবিলম্বে পদক্ষেপ দাবি করছি। উৎপাদন, বিপণন এবং ব্যবহারে সম্মিলিত দায়বদ্ধতার পক্ষে আমরা কথা বলছি।“

এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘এই গবেষণাটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, কেবল আইন প্রণয়ন নয়, তার যথাযথ বাস্তবায়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য কাউকে দোষারোপ করা নয়, বরং একটি সম্মিলিত সংকট মোকাবিলা করা, যেখানে শিল্পকলা, উৎপাদন এবং দৈনন্দিন জীবনে নিরাপত্তাকে অবশ্যই আপোষহীন একটি অংশ হতে হবে।’

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা যে রং ব্যবহার করি তা যদি নিরাপদ না হয়, তবে এটি প্রতিটি পরিবার এবং শিল্পীর জন্য জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং মানসিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশে সীসামুক্ত ভবিষ্যৎ অর্জনে আমরা সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।‘ 

বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সম্পূর্ণভাবে সীসা নির্মূল করা। আমাদের নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং বাজার থেকে লেড ক্রোমেট পাউডার বিলুপ্ত করার কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।‘

এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার, প্রফেসর ড. আবুল হাশেম বলেন, ‘আমাদের টিকে থাকা নির্ভর করে আমরা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো কতটা গুরুত্ব সহকারে নিই তার উপর। সীসা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত করে। ভাবুন তো, আমরা যদি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দায়ী হই! আমাদের জরুরি ভিত্তিতে ৯০ পিপিএম সীমা পুনর্বিবেচনা ও বাস্তবায়ন তদারকি করতে হবে।‘

বিএসটিআই-এর পরিচালক (কেমিক্যাল উইং) খোদেজা খাতুন বলেন, ‘যেসব ব্র্যান্ড সীসার মানদন্ড মানছে না তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতা রয়েছে, তবে আমরা সেগুলো সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

বিএসটিআই-এর সহকারী পরিচালক (কেমিক্যাল স্ট্যান্ডার্ডস উইং) মো. মঞ্জুরুল করিম বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃতভাবে বিধিমালা এড়িয়ে চলার কৌশল অবলম্বন করে। আমাদের এমন উপায় বের করতে হবে যাতে তারা আবার নিয়ন্ত্রণের আওতায় আসে। পাশাপাশি শিল্প রঙের জন্যও নিয়মনীতি তৈরি করা জরুরি।’

বার্জার পেইন্টসের প্রতিনিধি মাসুদ রানা বলেন, ‘উৎপাদনে সীসা হয়তো সস্তা, কিন্তু এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বড় ক্ষতির কারণ। আমরা এমন জৈব রঞ্জক ব্যবহারের পরামর্শ দিই যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।’


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)