চট্টগ্রামে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সমাবেশ


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 29-10-2025

চট্টগ্রামে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সমাবেশ

বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে গত ২৭ অক্টোবর মোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জমায়েত শেষে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি কমরেড আব্দুল আলী; ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তী, গণমুক্তি ইউনিয়নের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু, বাসদ (মাহবুব) সাধারণ সম্পাদ হারুন অর রশীদ ভূইয়া, বাংলাদেশের সোস্যালিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে এবং সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ঘোষণা করেছে যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি, পতেঙ্গার লালদিয়া কন্টেইনার টার্মিনাল এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জের পানগাঁও টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। এখানেই শেষ নয়, ধারণা করা হচ্ছে আরও দুটি টার্মিনাল পতেঙ্গার টার্মিনাল-১ এবং বে টার্মিনাল-২ এই দুই টার্মিনালও বিদেশিদেরকে ইজারা দেওয়া হবে। আমাদের দেশে চট্টগ্রাম, মংলা, পায়রা, মাতারবাড়ি এই ৪টি সমুদ্র বন্দর রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৮৮৮ সালে, মংলা বন্দর ১৯৫০ সালে, পায়রা বন্দর ২০১৬ সালে আর সীমিত পরিসরে মাতারবাড়ি কাজ শুরু করলেও পূর্ণাঙ্গরূপে শুরু করতে ২০৩০ সাল লেগে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। দেশের প্রবেশ মুখ হিসেবে বন্দর শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, এটি একটি নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কৌশলগত বিষয়ও বটে। কারণ বন্দরের সাথেই নৌ ঘাটি, তেল সোধনাগার, বিমান বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থাপনা রয়েছে। এর ফলে জাতীয় সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার যে পটভূমি তৈরি হচ্ছে, তাতে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। বিদেশি কোম্পানিকে বন্দর ইজারা দিলে তারা পরিচালনা, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত এবং প্রবেশাধিকারসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। দেশ যদি দুর্বল হয় আর বিদেশি কোম্পানি যদি সবল হয় তাহলে জাতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিদেশিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে ভবিষ্যতে বন্দর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি। এই টার্মিনাল তৈরি হয়েছে দেশের অর্থে এবং দেশের মোট কন্টেইনার পণ্য উঠানামার ৫৫ শতাংশই হয় এনসিটি দিয়ে। পণ্য উঠানামার আধুনিক সব উপকরণ ও যন্ত্রপাতি রয়েছে এই টার্মিনালে। বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে এই টার্মিনাল। ফলে এই নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া অর্থনীতি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, দুবাই ভিত্তিক কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ইজারার শর্তাবলী জনসন্মুখে প্রকাশ করেনি সরকার। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বলছে, বিদেশি অপারেটর নিয়োগে বন্দরের দক্ষতা বাড়লেও কন্টেইনার চার্জ বৃদ্ধি, শ্রমিক অধিকার সংকোচন, কৌশলগত তথ্যঝুঁকি এবং আন্তর্জাতিক বিরোধের আশংকা বাড়ে। এ কারণেই কি ইজারা দেওয়ার আগেই বন্দরের ট্যারিফ বাড়িয়ে দেয়া হলো, যাতে বিদেশিদের উপর দায় না পড়ে। বেসরকারিকরণের উদ্দেশ্য মুনাফা বৃদ্ধি। ফলে ইজারা দেওয়ার পর বন্দর পরিচালনার ব্যয় ২০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের হৃদপিন্ড। অথচ সেই হৃদপিন্ডকে বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছে। ফলে অর্থনৈতিকভাবে যেমন জিম্মি হয়ে পড়বে আমাদের দেশ, তেমনি জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের পিছনেই আছে মার্কিন সরকার কারণ এদের সাথে মার্কিন নৌ বাহিনীর চুক্তি রয়েছে। ঐ চুক্তির বলে মার্কিন নৌ বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে রি ফুয়েলিং ও মেরামতের জন্য নোঙ্গর করতে পারবে। যা খুবই ভয়ংকর। এটি ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নীল নকশা। দেশের সাবার্থেই এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রাজপথে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ সরকারকে বন্দর ইজারা দেয়ার এই দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে ফিরে আসার জোর দাবি জানান। অন্যথায় যমুনা ঘেরাও, হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি প্রদান করেন। সমাবেশ থেকে বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী ৮ নভেম্বর ২০২৫ চট্টগ্রামে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণের সমাবেশ ও গণর‌্যালি অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়। এবং উক্ত কর্মসূচি সফল করতে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)