ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ সাংবাদিক সামি হামদি আটক


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 29-10-2025

ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ সাংবাদিক সামি হামদি আটক

বক্তব্যে ইসরায়েলবিরোধী মন্তব্যের ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিক সামি হামদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্তৃপক্ষ লস সান ফ্রান্সিসকো থেকে আটক করে। তার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল করা হয়েছে এবং তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (ডিএইচএস) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। হামদি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে একটি কনফারেন্সে জাতীয় বক্তৃতা দেওয়ার আমন্ত্রণে সফরে ছিলেন এবং বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন।

হামদি সর্বশেষ বক্তব্য দেন গত ২৫ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার স্যাক্রামেন্টো শহরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার)-এর বার্ষিক গালায়। পরদিন তিনি ফ্লোরিডায় আরেকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে ২৬ অক্টোবর সকালে সান ফ্রান্সিসকো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে আটক করা হয়। ডিএইচএস মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ পোস্ট করে জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে যারা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে বা আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করে, তাদের এই দেশে কাজ করা বা সফরের অনুমতি দেওয়া হবে না।

কেয়ার হামদির আটকের তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, একজন ব্রিটিশ মুসলিম সাংবাদিককে কেবল ইসরায়েলের নীতির সমালোচনা করার কারণে আটক করা হয়েছে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। সংগঠনটির উপপরিচালক এডওয়ার্ড আহমেদ মিচেল জানান, হামদির সঙ্গে তাদের আইনজীবীরা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও এখনো তাকে দেখা বা কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, এটি এক ধরনের রাজনৈতিক প্রতিশোধ, যা যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।

হামদির ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গত ২৪ অক্টোবর, আর তিনি ১৯ অক্টোবর পর্যটক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। এক মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, হামদির কিছু বক্তব্য, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধ ও ইসরায়েলের গাজা অভিযান নিয়ে তার সমালোচনামূলক মন্তব্যের কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে কোনো নির্দিষ্ট মন্তব্য বা বক্তব্যের ভিত্তিতে তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।

অন্যদিকে নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, বিদেশি নাগরিকদের এমনভাবে আটক ও বহিষ্কার করা মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে থাকা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সরাসরি লঙ্ঘন। তাদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বিদেশি সাংবাদিক ও মুসলিম বিশ্লেষকদের ওপর রাজনৈতিক চাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, তারা হামদির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, আমরা একজন ব্রিটিশ নাগরিকের আটকসংক্রান্ত বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। লন্ডনভিত্তিক ঝুঁকি ও গোয়েন্দা বিশ্লেষণ সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত সামি হামদি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নিয়মিতভাবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি, ইসলামফোবিয়া, এবং পশ্চিমা পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করেন। তিনি পূর্বে বিভিন্ন ব্রিটিশ ও আন্তর্জাতিক টেলিভিশন চ্যানেলে মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

ট্রাম্প প্রশাসন এ বছর থেকেই বিদেশিদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কার্যক্রমের ওপর বিস্তৃত নজরদারি ও যাচাই কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রশাসন বলছে, এটি জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে করা হচ্ছে। তবে সমালোচকরা মনে করেন, এটি প্রকৃতপক্ষে ভিন্নমত দমনের একটি কৌশল, বিশেষ করে যারা গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের সমালোচনা করছেন তাদের লক্ষ করে পরিচালিত। এই ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দেশ হিসেবে পরিচিত আমেরিকায় রাজনৈতিক বক্তব্যের কারণে একজন বিদেশি সাংবাদিককে আটক করা গণতন্ত্রের আদর্শের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, সেই প্রশ্ন উঠছে এখন বিভিন্ন মহলে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)