ঐতিহাসি জয়ে মুসলিম মেয়র মামদানি


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 05-11-2025

ঐতিহাসি জয়ে মুসলিম মেয়র মামদানি

ঐতিহাসিক জয়ে নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন জোহরান মামদানি। নতুন ইতিহাস রচনা করলেন জোহরান মামদানি। কেউ কোনোদিন চিন্তাও করতে পারেনি নিউইয়র্ক সিটির নগর পিতা হবেন একজন মুসলিম। শুধু তাই নয় গত শত বছরের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ এবং দক্ষিণ এশিয়ান বংশোদ্ভূত। সেই সাথে নিউইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র। লন্ডনের মেয়র মুসলিম হলেও নিউইয়র্ক নিয়ে কেউ স্বপ্নও দেখেনি। গত ৪ নভেম্বর দিনব্যাপী ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচন কমিশন সূত্রে জোহরান মামদানিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নিউইয়র্কের ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট প্রদান করেন। কোথাও কোথাও ভোটারদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সাধারণত নিউইয়র্ক সিটিতে প্রাইমারি নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে যিনি জয়লাভ করেন, তিনিই নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হন। কারণ নির্বাচনের দিন মূল প্রতিদ্বন্দ্বী থাকেন রিপালিকান। ডেমোক্রেটিক স্টেটে রিপাবলিকান মেয়র অনেকটা দুঃস্বপ্ন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। জোহরান মামদানি মুসলিম প্রার্থী হওয়ার কারণে প্রাথমিকে হেরেও প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন সাবেক গভর্নর এন্ড্রু কুমো। তার সঙ্গে যুক্ত হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তিনি এন্ড্রু কুমোকে এন্ডোস করেছেন। তার আগে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এরিক অ্যাডামসকে বাধ্য করেছেন নির্বাচন থেকে সরে যেতে এবং কুমোকে সমর্থন দিতে। তারপরও যেন জোহরান মামদানির জয়রথ থামানো যাচ্ছিল না। সবাই যেন একাট্টা মুসলিম প্রার্থী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে। যত ষড়যন্ত্রই ছিল তা উড়িয়ে দিয়েছে নতুন প্রজন্মের ভোটাররা। তার দুই বছর বাসা ভাড়া বৃদ্ধি না করা, সিটির ফ্রি বাস সার্ভিস, পাঁচ বরোতে গ্রোসারি প্রতিষ্ঠা এবং শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে, যে কারণে সব ষড়যন্ত্র শেওলার মতো ভেসে গিয়েছে। তারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং নিউইয়র্কের মানুষকে ইতিহাসের স্বাক্ষী বানালেন।

জোহরান মামদানি যে বিজয়ে দিকে এগোচ্ছেন, তার ইঙ্গিত ছিল আগাম ভোটের মধ্যে। এরই মধ্যে গত ২৫ অক্টোবর থেকে গত ২ নভেম্বর পর্যন্ত ৭ লাখ ৩৫ হাজার বাসিন্দা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন, যা আগের মেয়র নির্বাচনের ভোটপ্রয়োগের রেকর্ড। আগাম ভোটের ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ পেয়েছেন মামদানি। প্রতিদ্বন্দ্বী কোমো পেয়েছেন ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

গত ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। এদিন শহরের অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় একটি কেন্দ্রে ভোট দেন মামদানি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রামা দুয়াজি। ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মামদানি বলেন, ‘শহরে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি আমরা। অতীতের রাজনীতি ত্যাগ করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি।’

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ভোট দিতে যান স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে। ভোটদানের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ভালোই অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে রয়েছে। জীবনে আমি বহুবার ভোট দিয়েছি। তবে এই প্রথম আমি কোনো ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করার সময় সেখানে থাকা ভোটাররা আমাকে বাহবা দিয়েছে। এটি ভালো সংকেত। ভোট পড়ার হারও ভালো সংকেত।’

ডেমোক্রেটিক পার্টির জোহরান মামদানি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। এ জয়ের মধ্য দিয়ে মামদানি হলেন শহরটির প্রথম মুসলিম মেয়র। নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছে শহরের নির্বাচন বোর্ড। গত ৩০ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি। ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে প্রায় ১৯ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী রুডি জুলিয়ানি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ডেভিড ডিনকিনসকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে জোহরান মামদানি (এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত) ৯০% ভোট গণনা করা হয়েছে। যার মধ্যে জোহরান মামদানি পেয়েছেন ১০ লাখ ২৯ হাজার ১৯৬ ভোট। তিনি পেয়েছেন ৫০.৪% ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী এন্ড্রু কুমো পেয়েছেন ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৬। তিনি পেয়েছেন ৪১.৬%। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী স্লিওয়া পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬২৪ ভোট। শতকরা হার ৭.১%। ইতিমধ্যেই সবাই জোহরান মামদানিকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।

তার রাত সাড়ে এগারটায় বিজয় ভাষণ দিতে আসেন। জোহরান মামদানি বিজয় ভাষণে সবাইকে ধন্যবাদ জানান। সেই সাথে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানান তাকে নির্বাচিত করার জন্য। তিনি বলেন, আমরা এখন সিটি হলে। এই বিজয় আমাদের সকলের। আমি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সেই প্রতিশ্রুতি আমি রক্ষা করবো। এক বছর ধরে আমি তোমাদের কষ্ট দিয়েছি, তোমাদের সেক্রিফাইজের জন্য ধন্যবাদ। তোমরা এখন ঘুমাতে পার। তোমাদের জন্য আমি আজকে মেয়র। তিনি তার বাবা মাকে ধন্যবাদ জানান। একজন মেয়র হিসাবে আমি সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চাই। আশাই জীবন, যা তোমরা আমাকে দিয়েছো, আমার ভলন্টিয়াররা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা মানুষের ভাগ্যের জন্য নির্বাচন করেছি, নোংরা রাজনীতি করার জন্য নয়। তোমারা পরিবর্তনের জন্য ভোট দিয়েছো। মেয়র হিসাবে আমি সব সময় তোমাদের পাশে থাকবো। কারণ তোমাদের কারণেই আমি মেয়র। আমি সবার ভাষা শুনতে চাই। স্ট্যানওয়েতে শুনতে চাই- আস্সামুআলাইকুম। ব্রুকলীনে শুনতে চাই আন্টিদের কথা।

এদিকে বাংলাদেশী কাউন্সিলম্যান প্রার্থী সাহানা হানিফ এবং সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হিসাবে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত সোমা সাঈদ জয়ী হয়েছেন।

নিউইয়র্ককে বলা হয় অভিবাসীর শহর। সেখানে ৪০ শতাংশ মানুষের জন্ম অন্য দেশে। বাসিন্দাদের একাংশ ধনকুবের, অপর অংশ স্বল্প আয়ের। ধনী ও দারিদ্র্যের এ বিভেদ নিউইয়র্ক শহরের অন্যতম দিক। ফিসক্যাল পলিসি ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদন জানায়, বর্তমানে নিউইয়র্কের ১ শতাংশ মানুষ শহরটির আয়ের ৪৪ শতাংশের ভোগ করছেন। এটা হার ৩০ বছর আগের তুলনায় চারগুণ বেশি। মামদানি ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট বার্নি স্যান্ডার্স এ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে চান। 

মামদানির মুসলিম পরিচয় নিয়ে বিরোধীরা তাকে আক্রমণ করছেন। তিনি জিতলে নিউইয়র্কে সবাইকে বোরকা পরতে হবে, এমনটাই বলা হচ্ছে। তবে এগুলো আমলে না নিয়ে মামদানি খাদ্যনিরাপত্তা ও শিশু সুরক্ষার মতো বিষয়গুলোর ওপর জোর দিচ্ছেন। অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে ইসলামফোবিয়া রয়েছে, মামদানির জয়ে সেটা দূর হয়।

এদিকে জোহরান মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা হলেও সমাজতান্ত্রিক ভাবনায় প্রভাবিত। জন্ম ১৯৯১ সালে উগান্ডার কাম্পালায়। বাবা গুজরাটি মুসলিম অধ্যাপক মাহমুদ মামদানি খ্যাতিমান লেখক ও শিক্ষাবিদ; মা ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মীরা নায়ার। মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে জোহরান মামদানি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় ছিলেন। সেখানেই তার হাজার হাজার ফলোয়ার। পরে নির্বাচনের প্রার্থী হলে সেই ফলোয়াররা তাকে সমর্থন জানান। তারা নেমে পড়েন প্রচারণায়।

জোহরান মামদানি নির্বাচনী প্রচারে ছোট ছোট ভিডিও বাংলা, হিন্দি, গুজরাটি, পাঞ্জবি ভাষায় ভোটারদের আকৃষ্ট করেন। নিজে অভিবাসী হওয়ায় নিউইয়র্কের অভিবাসীরা তার সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক খুঁজে পান। সেজন্য শত শত স্বেচ্ছাসেবী মাঠে নেমেছেন জোহরান মামদানির প্রচারে, যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মেয়র ডেমোক্র্যাট দলের বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যান্ড্রু কোমোকে অনেকটাই নিষ্প্রভ দেখাচ্ছে। গত জুনে অনেকটা চমক সৃষ্টি করে কোমোকে হারিয়ে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে জয় পান মামদানি। তার পক্ষে প্রচারণার মাঠে লড়ছেন ৪৭ বছরের লেখক রবার্ট উড। তিনি বলেন, ‘বার্তাটি সহজ ক্রয়ক্ষমতা দিকে নজর দাও।’ 

জোহরান মামদানি গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা নিয়ে সরব। এ নিয়ে কিছু সংখ্যা ইহুদীর বিরোধিতার মুখে পড়লেও অনেকে তাকে সমর্থন করেছেন। অনেক ইহুদি তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক নেতা মাঠে নেমেছেন মামদানিতে জেতাতে। ডেমোক্র্যাট নেতা বার্নি স্যান্ডার্স তার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। রবার্ট উড বলেন, ‘ভোটের মাঠে জোহরানই একমাত্র রাজনীতিক যিনি গাজায় যা হচ্ছে, সেটাকে গণহত্যা বলেছেন।’ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মামদানির প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী কোমোর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার নানা অভিযোগ রয়েছে। 

মামদানির উত্থান থেকে শিক্ষা নিচ্ছেন ইউরোপের বামপন্থীরা

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির উত্থান ইউরোপের বামপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। ফ্রান্স, জার্মানিসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে আগামী বছর স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। 

মামদানির নির্বাচনী প্রচার দেখতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দলীয় কৌশলবিদেরা আগেই আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে এসেছেন। তাদের লক্ষ্য, মামদানিকে কাছ থেকে দেখে তার রাজনীতির কৌশল শেখা। কারণ মামদানি একেবারে সাধারণ অবস্থান থেকে উঠে এসে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহরের নেতৃত্বের দৌড়ে শীর্ষে পৌঁছেছেন। ইউরোপের রাজনীতিকেরা শিখতে চান, মামদানির তৃণমূলভিত্তিক প্রচারণা নিউইয়র্কে যেমন সফল হয়েছে, সেটি তাদের অঞ্চলেও কার্যকর হবে কি না।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বামপন্থীদের জোট দ্য লেফট গ্রুপের ফরাসি সহ-সভাপতি মানো ওব্রি গত সপ্তাহে নিউইয়র্কে মামদানির প্রচারে অংশ নেন। ওব্রি ও তার দল ফ্রান্স আনবাউড মামদানিকে পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে দেখছেন। তারা মামদানির মডেল অনুসরণ করে ফ্রান্সজুড়ে ২০২৬ সালের পৌরসভা নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে চান।

জার্মানির পুঁজিবাদবিরোধী দল দ্য লেফট নিউইয়র্কে চার কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছে। তারা মামদানির প্রচারকৌশলের প্রধান মরিস ক্যাটজসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দলটির সংসদীয় কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক লিজা ফ্লাউম বলেন, মামদানির মতো কৌশল অনুসরণ করে অতীতে তাদের দল ভালো করেছে। জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি তাদের কাছে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল। এর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে দরজায় দরজায় গিয়ে প্রচারের কৌশল নিয়েছিল তাদের দল। ফ্লাউম আশা করেন, বার্লিনে আগামী সেপ্টেম্বরের আইনসভা নির্বাচনে দ্য লেফট মামদানির বর্তমান প্রচারণাকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করবে।

এদিকে মেয়র নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকা মামদানি বিদেশে তার প্রচারকৌশল নিয়ে মাতামাতির বিষয়টিকে এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এ প্রসঙ্গে মামদানি বলেন, আপাতত তার মনোযোগ পুরোপুরি স্থানীয় রাজনীতিতে।

ফ্রান্স ও জার্মানির মতোই যুক্তরাজ্যের রাজনীতিকেরা মামদানির প্রচারকৌশল দেখে মুগ্ধ। মামদানির ছোট ছোট ভিডিওতে ব্যক্তিত্ব ও আকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে জীবনযাত্রার খরচের বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আবার তাকে একই সঙ্গে আপনজন হিসেবেও উপস্থাপন করা হয়েছে। ফ্রান্স আনবাউডের সংসদ সদস্য দানিয়েল ওবোনো বলেন, ‘মামদানির দলীয় নির্বাচনে জয়টাই একটা বড় রাজনৈতিক ঘটনা। শুধু তিনি কী নিয়ে লড়েছেন, তাই নয়, বরং কীভাবে লড়েছেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। তার যোগাযোগের কৌশল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহারসহ অনেক কিছুই আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’

যুক্তরাজ্যের গ্রিন পার্টির নেতা মোথিন আলি বলেন, বামপন্থীদের এখন শেখা দরকার, কীভাবে মামদানির মতো করে সংক্ষিপ্ত অথচ প্রভাবশালী বার্তা পৌঁছে দিতে হয়। যুক্তরাজ্যের সাবেক লেবার নেতা এবং বর্তমানে ইয়োর পার্টির নেতৃত্বে থাকা জেরেমি করবিনও এক এক্স পোস্টে মামদানির প্রচারে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেছেন।

নিউজার্সির গভর্নর পদে জয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী শেরিল

যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির গভর্নর পদে নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মাইকি শেরিল জয়ী হবেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এই আভাস দিয়েছে। নিউজার্সি অঙ্গরাজ্য ডেমোক্রেটিক রাজনীতির সমর্থক, বা ‘ব্লু স্টেট’। গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হারেন। কিন্তু ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প এখানে ভালো ফল করেন।

অর্থাৎ, মাত্র এক বছর আগের ভোটে (প্রেসিডেন্ট নির্বাচন) অঙ্গরাজ্যটির ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবারের নির্বাচন নিয়ে সিএনএনের যে আভাস, তা বলছে, নিউজার্সির গভর্নর পদ ডেমোক্র্যাটদের হাতেই থাকছে। শেরিল নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী ডেমোক্র্যাট গভর্নর হতে যাচ্ছেন। তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী জ্যাক সিয়াতারেল্লিকে পরাজিত করতে যাচ্ছেন।

সিয়াতারেল্লি অঙ্গরাজ্যের সাবেক আইনপ্রণেতা। তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি তৃতীয়বারের মতো গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন।

ভার্জিনিয়ার নতুন লেফটেন্যান্ট গভর্নর মুসলিম ডেমোক্র্যাট গাজালা হাশমি

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী গাজালা হাশমি ভার্জিনিয়ার লেফটেন্যান্ট গভর্নর নির্বাচনে রিপাবলিকান জন রিডকে পরাজিত করে জয়লাভ করেছেন। হাশমি ভার্জিনিয়া সিনেটে প্রথম মুসলিম এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় আমেরিকান সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সাম্প্রতিক এই জয়ের অর্থ, এখন তার সিনেট আসনটি পূরণের জন্য বিশেষ নির্বাচন করতে হবে। হাশমি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ২০১৯ সালে এবং বিস্ময়করভাবে এক রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত রাজ্য সিনেটের আসন উল্টে দিয়ে ভার্জিনিয়ার জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর পর, ২০২৪ সালে, তিনি সিনেটের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য কমিটির চেয়ার হিসেবে নিযুক্ত হন- যা ডেমোক্রেট পার্টির দুইটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার- প্রজনন স্বাধীনতা ও জনশিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বের পদ।

হাশমির ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, তিনি অন্যদের জীবনমান উন্নত করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। বিশেষ করে আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবেশগত ন্যায়বিচারের বৈষম্য দূরীকরণে মনোনিবেশ করে কাজ করে যাচ্ছেন। গাজালা হাশমি ১৯৬৪ সালে ভারতের হায়দরাবাদে জিয়া হাশমি ও তানভীর হাশমির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কেটেছে মালাকপেটে তার নানাবাড়িতে। তিনি মাত্র চার বছর বয়সে মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে তারা তার বাবার সঙ্গে জর্জিয়ায় যোগ দেন। গাজালার পিতা অধ্যাপক জিয়া হাশমি, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। সেখান থেকে তিনি এম.এ. ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেন এবং খুব শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানকার পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

গাজালার মা তানভীর হাশমি, বিএ এবং বি.এড ডিগ্রিধারী। তিনি ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন্স কলেজ, কোঠি থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। গাজালা তার স্কুল জীবনে শ্রেষ্ঠ ছাত্রী (ভ্যালেডিক্টোরিয়ান) হিসেবে স্নাতক হন এবং একাধিক পূর্ণ স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি জর্জিয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্সসহ বিএ এবং আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমেরিকান সাহিত্য বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করেন। ১৯৯১ সালে গাজালা তার স্বামী আজহার রফিককে নিয়ে রিচমন্ড এলাকায় চলে যান। তাদের দুই প্রাপ্তবয়স্ক কন্যা রয়েছে। তারা হলেন ইয়াসমিন ও নূর। দু’জনেই চেস্টারফিল্ড কাউন্টি পাবলিক স্কুল এবং ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। গাজালা হাশমি প্রায় ৩০ বছর ধরে অধ্যাপনা করেছেন। প্রথমে ইউনিভার্সিটি অব রিচমন্ডে এবং পরে রেনল্ডস কমিউনিটি কলেজে। রেনল্ডস কলেজে তিনি সেন্টার ফর এক্সিলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)