রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নির্বাচন ঘিরে গভীর অনিশ্চয়তা


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 05-11-2025

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নির্বাচন ঘিরে গভীর অনিশ্চয়তা

এমনিতেই অনির্বাচিত অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকারের অনভিজ্ঞতা বিগত প্রায় দেড় বছর দেশের ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি, শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক করে সার্বিক পরিস্থিতি জটিল করে রেখেছিল। তবে ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণআন্দোলনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ধারণা করা হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো নির্মোহ থেকে ন্যূনতম সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করবে। কিন্তু নানা অংশীজনের নানা উচ্চাভিলাষ এবং দেশবিরোধী চক্রের খপ্পড়ে পড়ে অন্তর্বর্তী সরকার নানা বিতর্কিত বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে আপাতদৃষ্টিতে পরিস্থিতি জটিল করে ফেলেছে। শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল সর্বস্তরে বৈষম্য সৃষ্টি, দেশের মানুষদের ভোটাধিকার বঞ্চিত করা এবং সর্বস্তরে অবাধ দুর্নীতির প্রসার ঘটানো। 

দুঃখজনক হলেও অপ্রিয় সত্য দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর সময় হাতে পেয়েও ধনী-দরিদ্র বৈষম্য না কমে বেড়েছে, দুর্নীতি আদৌ নিয়ন্ত্রিত হয়নি, হত্যা, ছিনতাই, রাহাজানি বেড়েছে, যুক্ত হয়েছে মব সন্ত্রাস, মামলাবাণিজ্য। নিজেদের আওতা-বহির্ভূত ব্যাপক বিষয়ে অকারণে সংস্কার এজেন্ডা হাতে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলোচনা করে সরকার তথাকথিত জুলাই সনদ প্রণয়ন এবং স্বাক্ষর করার পর ঐকমত্য কমিশন নিজেদের মতো করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ দিয়েছে। এখন সেই বিতর্কিত সুপারিশ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। 

এমনিতেই সরকার আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ১৪ দলকে রাজনৈতিক আলোচনার বাইরে রেখে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তদুপরি ক্ষণে ক্ষণে সরকারের অবস্থান পরিবর্তন নিরপেক্ষ এবং অবাধ নির্বাচন বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকারি প্রশাসন দুর্বল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈষম্য, ধরি মাছ না ছুঁই পানি দৃষ্টিভঙ্গি। কিছু আগ্রাসী, উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক দলের কারণে সরকার প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার করতে পারেনি। অর্থনীতি নাজুক হয়ে পড়েছে। ডিসেম্বর ২০২৫ নাগাদ ব্যাপক খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়ে, ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠেছে। এমনি পরিস্থিতিতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সরকার ঘোষিত সময়, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সরকার আদৌ বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে কি না সেটি দিনদিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে।

বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে জুলাই সনদ গ্রহণ বা বর্জন নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠানের সময়সূচি নিয়ে। মূল দল বিএনপি এবং সমমনা কিছু দলসহ বাম দলগুলো জুলাই সনদ বিষয়ে সরকারের ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত, কিছু ইসলামী দল এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দল এনসিপি চাইছে আগে জুলাই সনদ বিষয়ে গণভোট। সরকার পড়েছে উভয় সংকটে। কিন্তু দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচন ছাড়া বিকল্প নেই। সরকার বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে অবিলম্বে নির্বাচনের কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত না করলে রাজপথে সংঘর্ষ, সংঘাত দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলতে পারে। বিচার প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ, সংস্কার অর্জন শূন্যের কোঠায়, এখন একমাত্র মুক্তির পথ অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)