ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশে অনৈক্যের বীজ


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 05-11-2025

ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশে অনৈক্যের বীজ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার নিয়োজিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ সমন্বিত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর সম্মতিরভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়ন করেছিল সরকার গঠিত ঐকমত্য কমিশন। সেই খসড়ায় কিছু বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিল বিএনপিসহ কয়েকটি দল। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দল অবশেষে খসড়া সনদে স্বাক্ষর করেছিল। কয়েকটি দল কিছু প্রসঙ্গ তুলে সনদে স্বাক্ষর করেনি। সম্প্রতি ঐকমত্য কমিশন তাদের মতো করে সনদ ঘোষণা এবং এর বাস্তবায়ন বিষয়ে সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে পেশ করেছে। সেই সুপারিশে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর নোট অব ডিসেন্ট অন্তর্ভুক্ত নেই। বলা হয়েছে, নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ কোনো পরিবর্তন না করেই সরকার গঠনের ২৭০ দিনের মধ্যে সনদের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করবে। ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধান সংশোধিত হয়ে যাবে। সুপারিশে জাতীয় নির্বাচনের আগেই সনদ বিষয়ে গণভোট অনুষ্ঠানের সুপারিশ করা হয়েছে।

সবাই জানে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত রাখা হয়েছে। আওয়ামী লীগের মিত্র ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টিকে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ডাকা হয়নি। এমতাবস্থায় জুলাই সনদ খসড়ার বিষয়ে অন্যতম প্রধান দল বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট অবজ্ঞা করে সুপারিশ প্রণয়ন করে তীব্র প্রতিবাদ করেছে বিএনপি। স্মরণে রাখতে হবে সিপিবিসহ বাম দলগুলো এবং এনসিপি এখনো খসড়া সনদ স্বাক্ষর করেনি।

এখন আসুন নির্বাচন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের সার্বভৌমত্ব প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচিত সংসদ দেশের সর্বোচ্চ আইনপ্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষ। তথাকথিত ঐকমত্য কমিশন এমনকি বিতর্কিত অসংবিধানিক অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো অধিকার নেই জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার বা নির্দেশ প্রদান করার। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ তাই নানাভাবেই বিতর্কিত হয়েছে। অনৈক্যের বীজ বপন করেছে। সুপারিশগুলো অনেকটা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের দাবির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়েছে।

স্মরণে রাখতে হবে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পর সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। সরকার মূলত প্রবাসীদের নিয়ে গঠিত ঐকমত্য কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ প্রণয়নের দায়িত্ব দিয়েছিল। দীর্ঘ সময় আলোচনা শেষে প্রণীত হয়েছিল খসড়া। ঘটা করে স্বাক্ষর করা হলো খসড়ায়। এখন দেখা যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত প্রতিফলিত হয়নি। সনদ নিয়ে বিএনপি, জামাত এবং এনসিপির ভিন্নমত আছে। 

সরকার ঘোষিত নির্বাচন সময়সূচির বাকি তিন মাসের কিছু বেশি সময়। সহজেই অনুমেয় সরকার যদি কমিশনের সুপারিশ মেনে নেয় তাহলে রাজপথে সংঘাত সৃষ্টি হবে, নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কেউ কেউ বলেছিলেন সকল সংস্কার প্রক্রিয়া নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়ে সরকারের উচিত ছিল অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টির ঝুঁকি নেওয়া সরকারের ব্যর্থ প্রয়াস হিসেবেই এখন পরিণতি পেয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে আওয়ামী লীগকে নির্বাচন করার সুযোগ না দিলেও নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নির্বাচন সময়ে গৃহযুদ্ধ পরিবেশ সৃষ্টির অশঙ্কা আছে। সরকারের উচিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় যেভাবে জুলাই সনদ (নোট অব ডিসেন্টসহ) সমন্বিত করে প্রকাশ করা। জনগণ গণভোটে নিশ্চিত করুক জুলাই সনদ আদৌ অনুমোদিত হবে কি না। আর জনগণের ভোটে নির্বাচিত সার্বভৌম সংসদকে কোনোভাবেই কোনো নির্দেশনা প্রদান গ্রহণযোগ্য হবে না।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)