হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বাতিল করলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে এমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 05-11-2025

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বাতিল করলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে এমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন

যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) গত ৩০ অক্টোবর একটি ইন্টারিম ফাইনাল রুল জারির মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির আবেদনকারীদের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে এমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন ডকুমেন্ট (ইএডি) নবায়নের মেয়াদ বৃদ্ধি বন্ধ করেছে। নতুন নীতির মূল লক্ষ্য হলো অভিবাসীদের কর্মসংস্থান অনুমতি দেওয়ার আগে যথাযথ যাচাই ও স্ক্রিনিং নিশ্চিত করা। এ নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ বা এরপর যারা ইএডি নবায়নের আবেদন করবেন, তারা আর স্বয়ংক্রিয় এক্সটেনশনের সুবিধা পাবেন না। তবে কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম প্রযোজ্য হবে না, যেমন টিপিএস সম্পর্কিত বৈধতা বা ফেডারেল রেজিস্ট্রার নোটিশের মাধ্যমে প্রদত্ত এক্সটেনশন। ডিএইচএস জানিয়েছে, স্বয়ংক্রিয় এক্সটেনশন বন্ধ হওয়ায় কেউ এসসিআইএস আরো ঘনিষ্ঠভাবে অভিবাসীদের পটভূমি যাচাই করতে পারবে, জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে এবং যারা সম্ভাব্য ক্ষতিকর উদ্দেশ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চাইছেন, তাদের শনাক্ত করা সহজ হবে।

নতুন এই নিয়মের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে কর্মরত অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা এসেছে। এতে হাজারো বৈধ কর্মী চাকরি হারানোর হুমকিতে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিয়োগদাতাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ কর্মস্থলে বৈধতা বজায় রাখা এখন আগের চেয়ে কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি ওবামা প্রশাসনের শেষ সময়ে যে বিধান কার্যকর করা হয়েছিল, তার অধীনে ইমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন ডকুমেন্ট নবায়নের আবেদন সময়মতো দাখিল করলে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির আবেদনকারীরা তাদের মেয়াদোত্তীর্ণ কর্মপরিচয় সত্ত্বেও বৈধভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারতেন। প্রথমে এই সুবিধার মেয়াদ ছিল ১৮০ দিন। পরবর্তীতে বাইডেন প্রশাসন ইউএসসিআইএসের দীর্ঘ প্রসেসিং সময় সামাল দিতে ২০২২ সালের মে মাসে এটিকে ৫৪০ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি করে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জারি হওয়া চূড়ান্ত বিধান পরিচালনাগত স্থিতিশীলতায় এই সুবিধা স্থায়ী করে।

বর্তমান সিদ্ধান্তে পূর্ববর্তী সব নমনীয়তা বাতিল হয়েছে। ফলে গত ৩০ অক্টোবর বা এর পর যাঁরা ইমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন ডকুমেন্ট নবায়নের আবেদন করবেন, তারা আর স্বয়ংক্রিয় এক্সটেনশনের সুবিধা পাবেন না। অর্থাৎ নবায়নের প্রক্রিয়া যতদিন চলবে, ততদিন শ্রমিক কর্মস্থলে থাকা আইনি ঝুঁকির মুখে পড়বেন। তবে নতুন আইন ইতোমধ্যে প্রাপ্ত স্বয়ংক্রিয় এক্সটেনশন বাতিল করছে না। যারা ৩০ অক্টোবরের আগে নবায়ন আবেদন করেছেন তাদের ৫৪০ দিনের এক্সটেনশন বৈধ থাকবে। এছাড়া টিপিএস ধারকদের ক্ষেত্রে ফেডারেল রেজিস্ট্রার নোটিশ অনুযায়ী আলাদা এক্সটেনশন কার্যকর হবে। স্টেম ওপিটি ধারকরাও আগের মতো ১৮০ দিনের স্বয়ংক্রিয় মেয়াদ বৃদ্ধি পাবেন।

ইউএসসিআইএসের পরিচালক জোসেফ এডলো বলেন, আমরা আবারও জোর দিচ্ছি অভিবাসীদের মজবুত যাচাই ও স্ক্রিনিংয়ে। পূর্বের প্রশাসন এমন নীতি চালু করেছিল, যা অভিবাসীদের সুবিধাকে আমেরিকান নাগরিকদের নিরাপত্তার ওপরে রাখতো। এটি একটি সাধারণ বিবেচ্য ব্যবস্থা যে কোনো ইএডি বা কর্মসংস্থান কাগজপত্র সম্প্রসারণের আগে যথাযথ যাচাই নিশ্চিত করা। সব অভিবাসীকে মনে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা একটি সুযোগ, অধিকার নয়। তবে অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা ইএডি নবায়নের আবেদন করেন, তাদের বেশির ভাগেরই বায়োমেট্রিক, পটভূমি যাচাই এবং অন্যান্য আবেদন ইতোমধ্যে মুলতবি থাকে, তাই তাদের ডকুমেন্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, যাচাই-বাছাই বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা ইতোমধ্যে একাধিকবার সম্পন্ন হয়েছে। শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নিরাপত্তার অজুহাতে নীতি পরিবর্তন শ্রমবাজারে দক্ষতার সংকট বাড়াবে।

নিয়োগদাতা সংগঠন ও করপোরেট এইচআর বিভাগগুলো নতুন নিয়মের সবচেয়ে বড় চাপ অনুভব করবে। কারণ ফরম আই-৯ কর্মীর বৈধতা যাচাইয়ের সরকারি ফরম। এখন আরো কঠোরভাবে পূরণ করতে হবে। বড় কোম্পানিগুলোকে অবিলম্বে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমত, প্রভাব মূল্যায়ন করতে হবে। কোনো কর্মীর ইএডি শিগগির মেয়াদোত্তীর্ণ, কোন ক্যাটেগরিতে পড়েন। দ্বিতীয়ত, শ্রমিকদের ১৮০ দিন আগেই নবায়নের আবেদন করতে উৎসাহিত করতে হবে। তৃতীয়ত,আই-৯ প্রটোকল হালনাগাদ করতে হবে এবং কর্মী স্থগিত বা চাকরি বাতিলের ক্ষেত্রে স্পষ্ট নির্দেশনা দিতে হবে। চতুর্থত, বিকল্প কর্মী পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যাতে সংবেদনশীল অবস্থানে থাকা কর্মীর হঠাৎ আইনি স্থিতি হারালে ব্যবসায় ক্ষতি না হয়। পঞ্চমত, ডিসেম্বর ১, ২০২৫ পর্যন্ত জনগণের মতামত নেওয়া হবে। ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ও স্টেকহোল্ডারদের মন্তব্য আগামী নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

করপোরেট অভিবাসন আইনজীবীদের মতে, এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে শ্রমবাজারে অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। প্রসেসিং সময় বৃদ্ধি পেলে হাজারো কর্মী কর্মস্থল ছাড়াই বসে থাকতে বাধ্য হবেন। এর ফলে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, প্রকল্প বিলম্ব, মানবসম্পদ সংকট, নতুন প্রশিক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি ও কর্মী রোটেশন বেড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, হসপিটালিটি ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতগুলোতে অভিবাসী শ্রমিকের ওপর নির্ভরতা সবচেয়ে বেশি। ২০১৯-২০২৩ সালের অডিট রিপোর্টগুলোতে দেখা যায়, প্রসেসিং ব্যাকলগ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থার পুরোনো সমস্যা। কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতি আরো খারাপ করেছে। স্বয়ংক্রিয় এক্সটেনশন ছিল একটি ভারসাম্য রক্ষার পদ্ধতি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনী বছরে অভিবাসন নীতি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নিরাপত্তাকে সামনে আনা হলেও শ্রমবাজার ও অর্থনীতি শেষ পর্যন্ত ভুগছে।

ইএডি ধারকদের বৃহৎ অংশই ভিসা পরিবর্তন, গ্রিনকার্ড প্রক্রিয়া বা আশ্রয় মামলার অপেক্ষায় আছেন। নতুন নীতি মানবিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। চাকরি হারালে মেডিকেল ইন্স্যুরেন্স ঝুঁকিতে পড়ে, পরিবারিক আয় ব্যাহত হয়, শিক্ষা ব্যয় মেটানো কঠিন হয় এবং ভাড়াটে বাসা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়। অনেক অভিবাসী পরিবারের জন্য এটি আর্থিক দুর্যোগে রূপ নিতে পারে।

এনজিও মানবাধিকার সংগঠন ও অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, যারা কর্মস্থলে প্রতিষ্ঠিত, দক্ষ ও কর প্রদান করেন, তাদের ‘অভিশংসিত’ করার যুক্তি অমানবিক। নিয়োগদাতাদের সবচেয়ে বড় ভয় আইস -এর পরিদর্শন বাড়তে পারে, যা জরিমানা, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও সুনামের ঝুঁকি তৈরি করবে। অভিবাসন বিষয়ক কমপ্লায়েন্স বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে ইএডি শেষ হলেও ৫৪০ দিনের এক্সটেনশন ঝুঁকি কমাত, এখন প্রতিটি দিনে ঝুঁকি বাড়বে।

আইনি চ্যালেঞ্জের সম্ভাবনা থাকলেও আদালতের প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে। ততদিন শ্রমিকরা উৎকণ্ঠায় ভুগবেন। ফেডারেল স্তরে সংগঠনগুলো যৌথ মন্তব্য, বিবৃতি ও কংগ্রেশনাল ব্রিফিং প্রস্তুত করছে। তারা বলছেন, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করলেও ফলাফল হবে বিপরীত-শ্রমিকের ঘাটতি বাড়বে, উৎপাদন কমবে, মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা কমবে।

বহু অভিবাসী কর্মীর কাছে ইএডি শুধু কর্মসংস্থানের কাগজ নয়,এটাই তাদের জীবনের ‘ইকোনমিক স্পাইন’। এটি ভেঙে গেলে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। সাধারণ আমেরিকান ভোক্তারা প্রভাব টের পাবেন নিত্যপণ্য, পরিবহন, মেডিক্যাল সাপোর্ট ও রেস্টুরেন্ট সার্ভিসের ঘাটতি ও ব্যয়বৃদ্ধির মাধ্যমে। নীতি বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এটি হতে পারে ‘অদৃশ্য গণবেকারত্বের ঢেউ’, কারণ এসব শ্রমিকের চাকরি হারালেও তা সাধারণ বেকারত্বের পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয় না। দেশজুড়ে অভিবাসী সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন প্রসেসিং টাইম ১২ মাস ছাড়িয়ে গেলে তাদের ভবিষ্যৎ কোথায় দাঁড়াবে, এ প্রশ্নে অনিশ্চয়তায় ভুগছে। অভিবাসন শিল্পের লবিস্টরা আহ্বান জানাচ্ছেন, স্বয়ংক্রিয় এক্সটেনশন বজায় রাখা শুধু অভিবাসীদের জন্য নয়, এটি অর্থনীতির জন্যও আবশ্যক। সবমিলিয়ে, অভিবাসন ব্যবস্থার দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা কর্মক্ষেত্রে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে এবং সামনে আইনি ও নৈতিক বিতর্ক আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)