দেশে গত মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 05-11-2025

দেশে গত মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে

দেশে অক্টোবরে কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। এমাসে এটা দাঁড়িয়েছে ১৩’তে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল মোট ৮ জন। এ মাসে ৬ জন কয়েদি ও ৭ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কারাগারের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। এসব তথ্য মিলেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এর মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন অক্টোবর, ২০২৫ এ। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এমএসএফ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

এমএসএফ এর পক্ষ থেকে এসব তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি জানানো হয় যে, অক্টোবর মাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক ছিল অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশে তিনটি বড় অগ্নিকান্ডের মতো দুর্ঘটনা। অগ্নিকান্ডের ঘটনায় উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার পাশাপাশি দেশবাসির মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। গত ১৮ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের আমদানি পণ্য কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এর আগে ১৪ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরের রূপনগরের এম এস আলম ট্রেডার্স নামের একটি রাসায়নিক গুদাম ও পাশের একটি পোশাক কারখানায় এবং ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডের একটি কারখানায় আগুন লাগে। অগ্নিকান্ডগুলো শুধু কোটি কোটি টাকার আমদানি পণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেনি, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের বিমানবন্দর, পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কমপক্ষে ১৮ জন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া বিপুল পণ্যের ক্ষতির কারণে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন ।অগ্নিকান্ডে কারণ চিহ্নিতকরণ, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করার লক্ষ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও বাস্তবতায় দেখা যায়, ইতোপূর্বেও দেশের নানা জায়গায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বিচারের আওতায় আনা কখনই সম্ভব হয়নি। বাস্তবতাকে শিক্ষণীয় হিসেবে নিয়ে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও বাণিজ্যিক স্বার্থরক্ষা করা রাষ্ট্রের অন্যতম নৈতিক দায়িত্ব বলে এমএসএফ মনে করে।

এদিকে এমএসএফ এর পক্ষ থেকে আরও বলা হয় যে, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের অক্টেবরে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে ১ জন নিহত ও তিন পুলিশ সদস্যসহ ৬ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যা উদ্বেগজনক ও অনাকাঙ্খিত। গ্রেফতার এড়াতে আইন শৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়ায় ভয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে ১জন নিখোঁজ হয়েছেন। এ মাসে গণসংযোগ ও রাজনৈতিক দলসমূহের মাঝে ঐক্যমতের চেষ্টা ব্যাতিত অন্য কোন রাজনেতিক কর্মকান্ড ছিল না। তবে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে অন্তদ্বন্দ্বকালীন সহিংসতায় হতাহত ও দুস্কৃতিকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা যেমন ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণ ও হত্যার মতো ঘটনা বেড়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক, ধর্ষণ চেষ্টা, হত্যা এবং মৃত জীবিত বা মৃত নবজাতক উদ্ধার বেড়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। 

নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা প্রশ্নবিদ্ধ

এমএসএফ এর দেওয়া তথ্যে বলা হয় য়ে রাজনৈতিক সহিংসতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে অক্টোবর মাসে। সেপ্টেম্বর মাসে আহত ২৯৪ জন ও নিহত ২ জন, অক্টোবর মাসে তা বেড়ে আহত ৫৪৭ জন ও নিহত ২ জন, অর্থাৎ আহতের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। দুস্কৃতিকারীদের হামলায় নিহতের সংখ্যা ৪ থেকে ৮-এ বেড়েছে- এতে ইঙ্গিত করে যে অরাজনৈতিক সহিংস গোষ্ঠীর সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া অক্টোবর মাসে সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দিরে চুরি, জমি দখলের ঘটনা ঘটেই চলেছে। সীমান্তে হতাহতের ঘটনা বন্ধ হয়নি, সেই সাথে পুশইনের ঘটনা ঘটছেই। অপরদিকে আরাকান আর্মি কর্তৃক বাংলাদেশী জেলেদের ধরে নেওয়ার ঘটনায় সে অঞ্চলের বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা অব্যহতভাবে বেড়েই চলেছে, গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মত ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা কিছুটা কমলেও আহতের সংখ্যা বেড়ে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারের এ বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা না থাকার কারণে নাগরিকদের জীবনে আতংঙ্ক ও নিরাপত্তহীনতা বেড়েছে। মানবাধিকার লংঘন প্রতিরোধ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এমএসএফ জোর দাবি জানাচ্ছে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)