ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব ওয়াশিংটন ডিসির বিচারক কোলিন কোলার-কটেলি ৩১ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক প্রস্তাবিত ফেডারেল ভোটার নিবন্ধন ফর্মে নাগরিকত্ব প্রমাণের বাধ্যতামূলক শর্তারোপ করার আদেশ বাতিল করেছেন। ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ কোলিন কোলার-কটেলি এই রায়ে জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের মার্চ মাসে জারি করা নির্বাচনী সংস্কার সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশটি সংবিধানবিরোধী, কারণ এটি ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘন করে।
এই মামলাটি ডেমোক্রেটিক পার্টি ও সিভিল রাইটস গ্রুপের পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছিল। আদালত তাদের পক্ষে রায় দিয়ে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এমন কোনো সাংবিধানিক ক্ষমতা নেই যা দ্বারা তিনি ভোটার যোগ্যতা বা নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কিত পরিবর্তন নির্ধারণ করতে পারেন।
বিচারক কোলার-কটেলি তার রায়ে লিখেছেন, আমাদের সংবিধান নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব স্টেট ও কংগ্রেসের ওপর ন্যস্ত করেছে। অতএব, প্রেসিডেন্টের এই ধরনের পরিবর্তন আরোপের কোনো কর্তৃত্ব নেই। তিনি আরও বলেন, ভোটার যোগ্যতা নির্ধারণ ও ফেডারেল নির্বাচনের নিয়মাবলি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংবিধান প্রেসিডেন্টকে কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা দেয়নি।এই রায়ের মাধ্যমে আদালত মামলার বাদীপক্ষকে আংশিক সারসংক্ষেপ জয় প্রদান করেছে, যার ফলে নাগরিকত্ব প্রমাণের শর্ত কার্যকর করা স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হলো। এর ফলে ইউএস ইলেকশন অ্যাসিস্ট্যান্স কমিশন ফেডারেল ভোটার নিবন্ধন ফর্মে এই নতুন শর্ত যুক্ত করার যে পরিকল্পনা করছিল, তা এখন আর কার্যকর করতে পারবে না। মামলার বাদীপক্ষের একজন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের সোফিয়া লিন লাকিনরায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য একটি স্পষ্ট বিজয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাগরিকত্ব প্রমাণের শর্তারোপের প্রচেষ্টা ছিল অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখলের চেষ্টা। হোয়াইট হাউস থেকে এই রায় নিয়ে কোনো মন্তব্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
ট্রাম্প ও রিপাবলিকান নেতাদের মতে, ভোটার নিবন্ধনের সময় নাগরিকত্বের প্রমাণ প্রদানের শর্ত জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং শুধু আমেরিকানরাই ভোট দেবে এটি তারা নিশ্চিত করবে। তবে আদালত এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। নাগরিকত্ব প্রমাণের শর্তারোপের প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নয়। গত বসন্তে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এ সংক্রান্ত একটি বিল পাস করেছিল, তবে তা সিনেটে আটকে গেছে। একই ধরনের আইন স্টেট পর্যায়েও পাসের চেষ্টা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা ব্যর্থ হয়েছে বা আদালতে আটকে গেছে।
বিভিন্ন স্টেটে এই ধরনের শর্ত কার্যকর হলে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষত বিবাহিত নারীরা, যাদের নাম বিবাহের পর পরিবর্তিত হয়, তাদের একাধিক নথি যেমন-জন্মসনদ, বিবাহ সনদ ও রাজ্য আইডি দাখিল করতে হয়। সম্প্রতি নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যে স্থানীয় নির্বাচনে প্রথমবার এই শর্ত প্রয়োগ করা হলে বহু ভোটার ভোট দিতে অসুবিধায় পড়েন। এছাড়া কানসাস স্টেটে তিন বছর ধরে কার্যকর থাকা একই ধরনের আইন প্রায় ৩০ হাজার যোগ্য ভোটারকে নিবন্ধন থেকে বঞ্চিত করে। পরে ফেডারেল আদালত সেটি বাতিল করে দেয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন নির্বাচনে অ-নাগরিকদের ভোটদান অত্যন্ত বিরল ঘটনা, যা এই ধরনের কঠোর নীতির যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বর্তমান মামলাটি ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (ডিএনসি) ও একাধিক নাগরিক অধিকার সংগঠন যৌথভাবে দায়ের করেছিল। আদালতের এই রায়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হলেও মামলার অন্যান্য অংশ নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া চলবে। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশনা যাতে বলা হয়েছে, ডাকযোগে পাঠানো সব ব্যালট ভোট নির্বাচন দিবসের মধ্যেই পৌঁছাতে হবে, শুধু পোস্টমার্ক থাকলেই চলবে না।
এছাড়াও ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। গত এপ্রিল মাসে ১৯টি ডেমোক্রেটিক রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল একযোগে আদালতে আবেদন করেন যাতে ট্রাম্পের আদেশ বাতিল করা হয়। বিশেষ করে ওয়াশিংটন ও ওরেগন রাজ্য-যেখানে প্রায় সব ভোট ডাকযোগে হয় নিজস্ব মামলা দায়ের করে এই আদেশের বিরোধিতা করেছে। বিচার বিশ্লেষকদের মতে, এ রায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল নির্বাচনী কাঠামোয় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা আরো একবার স্পষ্ট করে দিলো। আদালতের ভাষায়, সংবিধান প্রেসিডেন্টকে নির্বাচনের নিয়ম নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়নি, এটি কংগ্রেস ও স্টেটগুলোর দায়িত্ব।