শুল্ক বাতিল হলে বিপর্যয় আসন্ন : হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 12-11-2025

শুল্ক বাতিল হলে বিপর্যয় আসন্ন : হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

সুপ্রিম কোর্ট বা ফেডারেল আদালত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপিত বৈশ্বিক শুল্ক বা ট্যারিফ অবৈধ ঘোষণা করলে যুক্তরাষ্ট্র “অর্থনৈতিক ধ্বংস” ও মন্দার দিকে ধাবিত হতে পারে বলে ১০ নভেম্বর সোমবার সতর্ক করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রশাসনের শীর্ষ আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দেন, শুল্ক অবৈধ প্রমাণ হলে সরকারকে বিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে হতে পারে এবং সেই ক্ষতি দেশের বাজেট, বাণিজ্য চুক্তি, এমনকি সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ইমার্জেন্সি পাওয়ারস অ্যাক্ট আইনের অধীনে বৈশ্বিক শুল্ক আরোপ করে। যদিও সেই আইনে সরাসরি ‘ট্যারিফ’ শব্দটি নেই, তবুও ট্রাম্প এ আইনের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ৯০টিরও বেশি দেশের আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক বসিয়েছেন। ইতোমধ্যে এসব শুল্ক থেকে সরকার প্রায় ১৫২ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে বলে ট্রেজারি বিভাগের তথ্য থেকে জানা গেছে।

ট্রাম্পের আশঙ্কা, আদালত যদি প্রশাসনের বিরুদ্ধে রায় দেয়, তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক হারে পরিশোধিত শুল্ক ফেরত দেওয়ার দাবি জানাবে। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে বিপুল অর্থের রিজার্ভ খালি করতে হবে। এর ফলে ১৯২৯ সালের মহামন্দার মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আদালতে দাখিল করা নথিতে সতর্ক করা হয়। সরকারের যুক্তিতে আরও বলা হয়েছে, এমন রায় প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্রনীতি ও সদ্য সম্পাদিত বাণিজ্য চুক্তিগুলোকেও বিপন্ন করবে।

তবে অর্থনীতিবিদদের অনেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবিকে অতিরঞ্জিত বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই বিশাল বাজেট ঘাটতি বহন করছে; শুল্ক রাজস্ব হারালে সোশ্যাল সিকিউরিটি বা মেডিকেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হবে-এ দাবির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কারণ এসব ব্যয় মূলত পৃথক উৎস ও কর কাঠামো থেকে পরিচালিত হয়। ট্যারিফ রাজস্ব বাজেটে ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো বড় উপাদান নয়; দুই ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতির তুলনায় এটি সামান্য।

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে আইনজীবীরা যুক্তি দেন, শুল্ক বিদেশি দেশগুলোই বহন করছে। ট্যারিফ মার্কিন অর্থনীতি ও বাজারে ‘ধনসম্পদ এনে দিচ্ছে’। কিন্তু আদালতের বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, শুল্ক কার্যত ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ওপরই করের বোঝা সৃষ্টি করে, যা সংবিধান অনুযায়ী কংগ্রেসের ক্ষমতার আওতাভুক্ত। আইনি প্রেক্ষাপটে, ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম দফায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে পরাজিত হয়েছে। বিচারকরা রায় দেন যে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সীমাহীন নয় এবং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এমার্জেন্সি পাওয়ারস অ্যাক্ট আইনের আওতায় শুল্ক আরোপের ব্যাখ্যা অপ্রতুল। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে প্রশাসন ফেডারেল সার্কিট কোর্টে শুনানির আবেদন জানায়, যা চলমান।

ট্রাম্পের দাবি, বৈশ্বিক বাণিজ্য আলোচনায় শুল্ক চাপ এক ধরনের কূটনৈতিক হাতিয়ার; এটি তুলে নিলে দেশের বিদেশনীতি পরিচালনায় বড় ক্ষতি হবে। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক সাক্ষাৎকারে বলেন, যত বেশি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, আদালতের পক্ষে এসব উল্টে দেওয়া তত কঠিন। ট্রাম্প নিজে সামাজিক মাধ্যমে সতর্ক করে বলেন, আদালত তার বিরুদ্ধে রায় দিলে এত অর্থ ফেরত দেওয়া অসম্ভব হবে এবং দেশ গভীর মন্দার মুখে পড়তে পারে। যদিও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এটি রাজনৈতিক ভাষণ-বাস্তবতা নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট যদি তার আরোপিত শুল্কের (ট্যারিফ) বিরুদ্ধে রায় দেয়, তাহলে তিনি তার শুল্কনীতি বাস্তবায়নের জন্য একটি গেম টু প্ল্যান তৈরি করবেন।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সর্বোচ্চ আদালত যদি শুল্ক বাতিল ঘোষণা করে, ট্রাম্পের বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি বড় সংকটে পড়বে এবং নির্বাহী শাখার একক শুল্ক ক্ষমতা ভবিষ্যতে সীমিত হয়ে যাবে। আপাতত প্রশাসন আদালতকে সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছে, যাতে সুপ্রিম কোর্টে জরুরি আপিল করার সুযোগ থাকে। আইনি লড়াই দীর্ঘ হলে আমদানিকারক, ব্যবসা ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে বলে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা। তবে আদালতের চূড়ান্ত রায়ই নির্ধারণ করবে, মার্কিন শুল্কনীতির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)