যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনবিরোধী অভিযানে ইসরায়েলি উৎসের শক্তিশালী স্পাইওয়্যার প্রযুক্তি গোপনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংস্থা সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস ও মানবাধিকার আইনজীবীরা ফেডারেল আদালতে গত ৩০ অক্টোবর নিউ ইয়র্কের ফেডারেল কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। গত জুলাই মাসে জাস্ট ফিউচার্স ল’ ফার্ম এবং সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস তথ্য অধিকার আইনের আওতায় অভিবাসন দপ্তর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এবং সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থা কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি)-এর কাছে গুরুত্বপূর্ণ নথি চেয়েছিল। এসব নথির মাধ্যমে জানা সম্ভব হতে পারে যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ইসরায়েলি সাইবার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সেলেব্রাইট-এর ইউনিভার্সাল ফরেনসিক এক্সট্রাকশন ডিভাইস (ইউ.এফ.ই.ডি) এবং পারাগন সলিউশনস-এর অত্যন্ত বিতর্কিত স্পাইওয়্যার গ্রাফাইট কতটা এবং কীভাবে ব্যবহার করছে। কিন্তু প্রশাসন নথি প্রকাশে অস্বীকৃতি জানালে গত ৩০ অক্টোবর ২০২৫ নিউ ইয়র্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা আদালতে মামলা করা হয়।
আইনজীবীদের অভিযোগ, এসব সফটওয়্যার গোপনে ব্যবহার করলে তা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনী-মতপ্রকাশ ও কর্তৃত্ববিরোধী সংগঠনের স্বাধীনতা, চতুর্থ সংশোধনী-অযৌক্তিক তল্লাশি নিষেধ এবং অন্যান্য অধিকার লঙ্ঘন করতে পারে। জাস্ট ফিউচার্স ল’ ফার্ম-এর আইনজীবী জুলি মাও বলেন, জনগণের জানার অধিকার আছে সরকার কি গোপনে মানুষের ফোনে স্পাইওয়্যার ঢুকিয়ে বার্তা, কল, ফটো, অবস্থান এবং ক্লাউড ডেটা পর্যবেক্ষণ করছে কি না। ওপেন রেকর্ডস প্রজেক্ট-এর ম্যানেজার ইয়ান হেড বলেন, ফেডারেল আদালতে যেতে বাধ্য হওয়া প্রমাণ করে প্রশাসন কিছু আড়াল করছে এবং তা উদ্বেগজনক।
সেলেব্রাইটের সফটওয়্যার ও সাইবার টুলস ব্যবহার করে মোবাইল ফোন আনলক, ডিলিট হওয়া বার্তা পুনরুদ্ধার, অ্যাপ ব্যবহার ইতিহাস, লোকেশন ডেটা, ক্লাউড ব্যাকআপ, কল লগ, ব্রাউজিং ডেটা সংগ্রহ সম্ভব। গবেষকদের মতে, এই সফটওয়্যার গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য বিপন্ন হতে পারে। অন্যদিকে পারাগন সলিউশনস-এর স্পাইওয়্যার গ্রাফাইট মানবাধিকার মহলে আরও বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছে। এটি হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল, টেলিগ্রাম-এর মতো এনক্রিপ্টেড অ্যাপের ডেটায় প্রবেশ করতে পারে, ফোনের মাইক্রোফোন ও ক্যামেরা গোপনে সক্রিয় করতে পারে, অবস্থান ট্র্যাক করতে পারে এবং ক্লাউড সিস্টেমে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত তথ্য অ্যাক্সেস করতে সক্ষম বলে অভিযোগ রয়েছে।
আইস ২০০৮ সাল থেকে সরকারি চুক্তির আওতায় সেলেব্রাইটের প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে কোম্পানিটির সঙ্গে সংস্থাটির সক্রিয় চুক্তির পরিমাণ ১১ মিলিয়ন ডলার। সিবিপি অন্তত ২০টিরও বেশি সেলেব্রাইট লাইসেন্স ধারণ করে। পারাগন সলিউশনস-এর সঙ্গে আইসিই-এর চুক্তি হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কায় বাইডেন প্রশাসন একসময় স্থগিত করেছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের আগস্টে ট্রাম্প প্রশাসন চুক্তির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে কার্যক্রম পুনরায় চালু করে। এরপর ৬ অক্টোবর কংগ্রেসের বেশ কয়েকজন সদস্য গ্রাফাইট ব্যবহারের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আইসিই-কে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠান।
আইনজীবীদের মতে, এই মামলা যুক্তরাষ্ট্রে নজরদারি প্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার, বিদেশি সাইবার সরঞ্জাম আমদানি, প্রশাসনিক জবাবদিহি এবং নাগরিক অধিকারের ভবিষ্যৎ সবকিছু নিয়ে নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। মামলাটিতে সহ-আইনজীবী হিসেবে যুক্ত রয়েছে ল’ অফিস অব অ্যাম্বার কুরেশি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই মামলার রায় ভবিষ্যতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্পাইওয়্যার ব্যবহারের বৈধতা নির্ধারণে নজির তৈরি করতে পারে।