ভোটের ট্রেন ছুটেছে অনিশ্চিত গন্তব্যে


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 12-11-2025

ভোটের ট্রেন ছুটেছে অনিশ্চিত গন্তব্যে

নানামুখী বিতর্ক আর গুজবে সয়লাব সোশ্যাল মিডিয়া, বিপরীতমুখী দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে মুখোমুখি রাজনৈতিক দলগুলো। কার্যক্রম স্থগিত আওয়ামী লীগ ‘নৌকা ছাড়া ভোট হবে না’ দাবি তোলে আন্দোলনে। এরই মাঝে চালু রয়েছে ভোটের ট্রেন। গন্তব্য পৌঁছাতে হবে ফেব্রুয়ারি ১৫-এর মধ্যে শেষ স্টেশনে। আঁকাবাঁকা অমসৃণ রেলপথে লাইনচ্যুত হওয়ার শঙ্কা। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে একগুচ্ছ সুপারিশ দিয়ে বিদায় নিয়েছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ প্রকাশিত হয়েছে। সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ক অর্ডিন্যান্স কার স্বাক্ষরে জারি হবে তা নিয়েও মতবাদ আছে। এখনো জুলাই সনদ স্বাক্ষর করেনি আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকটি দল। এমনিতেই সরকার আওয়ামী লীগ, ১৪ দল ও জাতীয় পার্টিকে সব আলোচনার বাইরে রেখেছে। বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার বিবেচনায় ৪৫-৫০ শতাংশ ভোটার-সমর্থকদের বাইরে রেখে কীভাবে জাতীয় ঐক্য হয় বোধগম্য নয়। আন্তর্জাতিক মহল কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা জোরেশোরে বলতে শুরু করেছে। এদিকে ভারতে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগপ্রধান এবং অপসারিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ায় সরব হয়েছেন, রাজপথে আওয়ামী লীগের অবস্থান বেগবান হচ্ছে। ১৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিচারের রায় ঘোষণার প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ হিসাবে ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অথচ এই সময়ে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তাকারী সেনাসদস্যদের ৫৪ শতাংশ ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এমনিতেই কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক, কয়েকটি বিশ্লেষণে ডিসেম্বর ২০২৫ নাগাদ দেশের কিছু এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এমনি অবস্থায় অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সমমনা দলগুলোসহ সম্ভাব্য জোটসঙ্গীদের জন্য আসন খালি রেখে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছে। সেখানে বর্তমানে সুস্থ খালেদা জিয়া এবং লন্ডন প্রবাসী তারেক জিয়া থাকলেও বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা বাদ পড়েছেন। জামায়াতে ইসলামী ৩০০ আসনে প্রার্থী নির্ধারণ করে রাখলেও নির্বাচনী ঐক্য হিসেবে কিছু আসনে সমমনা দলগুলোকে ছাড় দেওয়ার কথা বলেছে। ছাত্র যুবকদের দল এনসিপি বিএনপি এবং জামায়াত উভয় দলের সঙ্গে দরকষাকষি করছে।

এই যখন অবস্থা, তখন জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট অনৈক্য এবং বিভেদ দূর করে সমন্বিত দিকনির্দেশনা চেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। মূল বিতর্ক সম্মত সংলাপের বিবরণীতে রাজনৈতিক দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টগুলো না থাকা, পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে আনুপাতিক হারে সদস্য থাকা এবং গণভোটের সময়। এখন কথা হলো জনগণের বৃহৎ অংশ দীর্ঘদিন ভোটের অধিকার বঞ্চিত। অধিকাংশ জনগণের জুলাই সনদে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে কোনো ধারণা নেই। এমতাবস্থায় গণভোটের প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতা প্রশ্নসাপেক্ষ।

বর্তমানে কিন্তু ১৯৭২ সংবিধান বিদ্যমান। বর্তমান সরকার সেই সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিলেও পদে পদে সংবিধান ভঙ্গ করে এখনো কার্যক্রম চালু রেখেছে। জনগণ কিন্তু একটি অবাধ নির্বাচনের আশায় অপেক্ষারত। পুল সিরাতের ওপর দিয়ে হাঁটছে ইউনূস সরকার। সামান্য ভুলে পা ফসকালেই দোজখের জ্বলন্ত অগ্নিশিখা।

জনগণ চায় ভোটের ট্রেন যথাসময়ে শেষ স্টেশনে পৌঁছাক। নির্বাচিত সংসদ সংবিধানসহ সব বিষয়ে জনগণকে অবহিত রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। একমাত্র সঠিকভাবে নির্বাচিত সরকার পারবে পুঞ্জীভূত বিপুল সংকট সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)