একের পর আগুন লাগার খবর আসছে গণমাধ্যমের পাতায় পাতায়। অনলাইন পোর্টালও ভারী হয়ে উঠছে দেশের ভেতরে একের পর এক আগুনের খবরে। একদিকে যেমন আতঙ্কিত হয়ে উঠছে সবাই তেমনি উদ্বেগ উৎকন্ঠার ভাসছে দেশ। সবার মনে আবারও শঙ্কা কি হচ্ছে কেনো হচ্ছে কিংবা কারা এসবের পেছনে।
কি হচ্ছে দেশে
১০ নভেম্বর সোমবার গভীর রাতে খোদ রাজধানীতে বেশ কয়েকটি আগুনের লাগানো বা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ট্রেনেও আগুন দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ওইদিন যাত্রাবাড়ীতে দুটি এবং উত্তরায় একটি বাসে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া ওই রাতেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরিত্যক্ত একটি প্রাইভেট কারে আগুন লেগেছে। এছাড়া রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও ধানমন্ডির দুই জায়গায় সোমবার সকালে সাতটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সব জায়গাতেই মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে আসা ব্যক্তিরা ককটেল ছোড়েন। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
সকাল সাতটার দিকে মোহাম্মদপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের খাদ্যপণ্যের প্রতিষ্ঠান প্রবর্তনার সামনের সড়কে ও সীমানার ভেতরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়। দুজন হেলমেট পরে মোটরসাইকেলে এসে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান বলে জানিয়েছেন প্রবর্তনার এক নিরাপত্তাকর্মী। আর এ-ই ঘটনার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান গণমাধ্যমে বলেছেন‘প্রবর্তনার সামনের সড়কে এবং বাউন্ডারির ভেতরে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। কেউ আহত হয়নি।’ পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কেনো হচ্ছে
ধরে নেওয়া হচ্ছে ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কর্মসূচির প্রচারণা চালাচ্ছে। ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ সামনে রেখে এমন কর্মসূচি দিয়েয়ে দলটি। আপাতত সন্দেহ করা হচ্ছে এই কর্মসূচির সমর্থনে আওয়ামী লীগ এই লঙ্কাকান্ড করছে, যা সরকারের পাশাপাশি বর্তমানে মাঠে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ।
সরকারের বক্তব্য
এদিকে সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে সঙ্গে জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বোঝা যাচ্ছে সরকার সর্তক অবস্থানে রয়েছে। কেননা এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি নরমাল থাকবে। কোন ধরনের সন্ত্রাসীকে ছাড় দেয়া হবে না। অনেক সময় সন্ত্রাসীরা জামিন পেয়ে যায়। এভাবে যেন সহজে জামিন না পায় অনুরোধ করা হবে।
শেষ কথা
২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের আগে দীর্ঘ ১৭টি বছরে এমন ঘটনা পুরো দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলতো। সেসময়ে ক্ষমতাসীন দল হিসাবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি পুরো প্রশাসনের বরাবরই ভাষ্য ছিল ‘এগুলো বিএনপি করেছে।’ বলা হতো দেশ পিছনের দিকে নিতে চায় বিএনপি। কিংবা বলা হলো স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি দেশে মৌলবাদ কায়েম করতে এসব করছে। অন্যদিকে দেখা যেতো বাসে ট্রেনে আগুন লাগার পরের দিনই বিএনপি’র কোনো না কোনো অংগ সংগঠন বা মাদ্রাসার কোনো ছাত্রকে হাজির নিয়ে গল্প তৈরি করা হতো। বলা হতো উচ্চ পর্যায়ের জঙ্গীরা দেশে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি ধবংস করতে চায়। সেক্ষেত্রে সব শেষে দেখা গেছে, এসব নাটক গল্প ফেদে সরকার শেষতক টিকতে পারেনি।
তাই বর্তমানে একের পর এক অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকায় অগ্নিসংযোগাগের ঘটনা নিয়ে পরিকল্পিতভাবে গল্প তৈরি করা হলে, তা শুধু জনগণকে উত্তেজিত করে তুলবে না। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খ্যাতি লাভকারী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুসের ইমেজে বড়ো ধরনের ধাক্কা লাগবে, যা বলা বাহুল্য। এর পাশাপাশি দেশের ভেতরে বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও অন্তর্বর্তী সরকারের যে-কোন কিছুকেই তাদের প্রতি আস্থা সঙ্কট তৈরি হবে। সামনে দিনে বলাবলি হতে পারে ক্ষমতা আকড়ে থাকার কূটকৈৗশল ছলচাতুড়ি করছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্টরা।
সেজন্য অন্তবর্তী সরকারের ভেতরে বাইরে স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। তা না হলে এর সর্বশেষ পরিণতি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের মতো পতনের চেয়ে ভয়ঙ্কর হবে হতে পারে কারো কারো আশঙ্কা। কেননা এতো সুরক্ষিত অঞ্চলগুলিতে আগুন লাহছে আর এরপরে কিছুই হচ্ছে না তা মেনে নেবে না জনগণ।