চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে জনসংযোগ চলাকালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ একের পর এক ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান প্রশ্ন তৈরি করেছে। প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বিএনপি সামনের দিনে পথ চলতে সর্তকতার বিষয়টি। অনেকেই মনে করছেন বা তাদের মনে প্রশ্ন দলটি কি আসলে অতীতের পথেই হাঁটছে?
কি সেই ঘটনা
সম্প্রতি চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে জনসংযোগ চলাকালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, এ সময় এরফানুল হক শান্ত নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আমিনুল হক ও মর্তুজা হক নামে আরও দুজন। এরা সবাই বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। হামলায় সারোয়ার হোসেন বাবলা নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।
কে কি বললেন
বুধবার (৫ নভেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) তাৎক্ষণিক তদন্তে পাওয়া গেছে, এরশাদ উল্লাহ এই হামলার টার্গেট ছিলেন না; বিক্ষিপ্তভাবে ছোঁড়া একটি গুলি তার শরীরে এসে বিদ্ধ হয়। সরকার এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে আহত এরশাদ উল্লাহর দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে সরকার।
এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে মনোনয়নপ্রাপ্ত এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে অমানবিক ও নৃশংস উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ বলেছেন, বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহ ঘটনার টার্গেটে ছিলেন না, টার্গেটে ছিল নিহত সরওয়ার বাবলা। স্ট্রেট বুলেট বাবলার গায়ে লেগেছে। যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেটি বাবলার এলাকা ছিল। যারা করেছে তারা বাবলার প্রতিপক্ষ। নির্বাচনের আগে এরকম একটি ঘটনা শুরুতেই দুর্ঘটনা; এটা অবশ্যই আমাদের শুরুটা ভালো হলো না, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
গুরুতর প্রশ্ন চলে আসছে সামনে
জনমনে এই ধরণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চলে আসা কয়েকটি প্রশ্নের অন্যতম হলো বিএনপি নেতার গণসংযোগে কি করে সারোয়ার হোসেন বাবলাও অংশ নিলেন। কেননা তার বিরুদ্ধে নগরের বিভিন্ন থানায় হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৯টি মামলা রয়েছে। আরও খবর হলো সারোয়ার ছিলেন চট্টগ্রামে আট ছাত্রলীগ নেতা খুনের অন্যতম আসামি সাজ্জাদ আলী খানের অন্যতম সহযোগী। পরে বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে আলাদা দল গড়েন সরোয়ার। তখন সাজ্জাদের ডান হাত হয়ে ওঠেন ছোট সাজ্জাদ ওরফে বুড়ির নাতি সাজ্জাদ।
আর এই বাবলাকে হত্যা করতে এর আগেও চেষ্টা করা হয়। জানা গেছে ৩০ মার্চ ভোরে বাকলিয়া এক্সেস রোড চকবাজার থানার চন্দনপুরার মুখে প্রাইভেটকারে সারোয়ার বাবলাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছিল। এতে বখতেয়ার হোসেন মানিক ও মো. আব্দুল্লহ নামে দুজন নিহত হলেও সারোয়ার হোসেন বাবলা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। এদিকে ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই রাতে নগরের অনন্যা আবাসিক এলাকা থেকে সহযোগী বাবুলসহ সারোয়ারকে গ্রেফতার করেছিল চান্দগাঁও থানা পুলিশ। ২৮ জুলাই পুলিশ তার সাত দিনের রিমান্ড চাইলে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। অন্যদিকে সরোয়ার এক মাস আগে বিয়ে করেন। তাঁর বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিভিন্ন সূত্রের খবরে বলা হচ্ছে বাবলার ওপরে হামলার ঘটনা জামায়াত-শিবির ঘটিয়েছে। কেননা সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া ও শিবির ছেড়ে যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং বালু ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা ও এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এতো কিছুরও পরু বলতে হচ্ছে গত বছরের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে বিএনপির বিভিন্ন সমাবেশেই যোগ দিতে দেখা যায় সরোয়ারকে।
শেষ কথা
চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে জনসংযোগ চলাকালে এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি’র অবস্থানই বেশি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। কেননা সব কিছু জেনেশুনেই সারোয়ার হোসেন বাবলাকে দলটি কাছে টেনে নিয়েছে। তাই অনেকের মতে, এমন একজন নামি-দামী সাহসী সূর্য(?) সন্তানকে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের কাড়াকাড়িতেই বেচারা সারোয়ার হোসেন বাবলার প্রাণ গেলো কি-না তা সময় বলে দেবে। অন্যদিকে এই ঘটনার জামায়াতও ছাড় পাবে না। সন্ত্রাসীদের সাথে জামায়াত-শিবিরের একধরনের সর্ম্পকের বেশ রহস্যময়। আর এর পাশাপাশি দেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে সশন্ত্র সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরকার এতোদিন পরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি তা-ও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
তবে বড়ো দল হিসাবে নিজেদের পরিবর্তন অনেক সংশোধন করা হয়েছে বলে যে দলটির গলা হাকায় সে-ই বিএনপিকে নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিএনপি কি তার দলে অনুপ্রবেশ বা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় লাভ করার বিষয়ে সর্তক অবস্থানে আছে? নাকি দলটি এধরণের সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে দলে ঢুকিয়ে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন কায়েম করতে চায়? প্রশ্ন হচ্ছে শিবির ছেড়ে কি আশ্বাসে সারোয়ার হোসেন বাবলা বিএনপি’র রাজনীতিতে যোগ দিয়ে সরাসরি গণমিছিলে অংশ নিলো? কারা বাবলাকে বিএনপি’র রাজনীতিতে কি-সের আশ্বাসে মিছিলে যোগ দিতে আশ্বস্ত করেছে-রাজনীতিতে এসব প্রশ্ন চলে আসছে। এর পাশাপাশি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আইনের শাসন সুশাসনের বুলি আওড়ানো জামায়াতের ছত্রচ্ছায়ায় আসলে কারা আছে বা থাকে? আরও গুরুতর প্রশ্ন হলো এবারের যাত্রায় কি নিজ দলের কথিত আদর্শ লুকিয়ে জামায়াতে ইসলামী তাদের গুপ্ত বাহিনী ঢুকিয়ে দিয়েছে খোদ বিএনপি’র ভেতরে? ভবিষ্যতে কোনো অবস্থান তৈরি করতে? এবার কি গোপনে গোপনে সবধরণের অপকর্ম ঘটিয়ে বিএনপি’র ঘাড়ে চাপিয়ে দলটিকে ধবংস করে ফেলার ছক এঁকেছে কি-না জামায়াত? বিএনপি কি এসব বিষয়ে সর্তকতার সাথে পা ফেলছে কি-না সে-ব্যাপারে সন্দিহান অনেকে। কারো কারো মতে, বিএনপিতে হয়তবা এবার কোনো গুপ্ত বাহিনী ঢুকে পড়েছে? আরও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিএনপি’র আশেপাশে এখন কারা ভিড় করছে? কি করছে? কাদের সাথে কার গোপন যোগাযোগ-তা নিয়ে দলের হাইকমান্ডের কোনো মাথাব্যাথা নেই। অথচ বলা হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে বিএনপি দারুণ প্রার্থী বাছাই করেই এগুচ্ছে। দলটির বিরুদ্ধে অনেকের অভিযোগ বিএনপি অতীত থেকে শিক্ষাই নিচ্ছে না, ফেলছে না পা সর্তকতার সাথে। তা না হলে বিএনপির ঘোষিত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা হতাশাজনক; যাদের প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে তাদের অনেকেই ‘গডফাদার’ বলে পরিচিত বলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী যে মন্তব্য করেছেন তা কি সত্য হয়ে যাচ্ছে না?