ক্যাপিটল হিলে জানুয়ারি ৬ সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের জন্য ট্রাম্পের গণক্ষমা


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 12-11-2025

ক্যাপিটল হিলে জানুয়ারি ৬ সংশ্লিষ্ট সহযোগীদের জন্য ট্রাম্পের গণক্ষমা

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০ নভেম্বর রাতে এক নাটকীয় ঘোষণায় রুডি জুলিয়ানি, সাবেক হোয়াইট হাউস চিফ অব স্টাফ মার্ক মেডোসসহ ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার প্রচেষ্টায় জড়িত বহু ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে ফেডারেল ক্ষমা প্রদান করেছেন। হোয়াইট হাউসের স্টাফরা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব ব্যক্তিদের গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রামী বলে উল্লেখ করেন। স্টাফরা আরো দাবি করেন বাইডেন প্রশাসন তাদের রাজনৈতিকভাবে নিপীড়ন করেছে। যদিও এই ব্যক্তিদের কারো বিরুদ্ধেই এখনো ফেডারেল অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়নি। তবুও নির্বাচনের ফল পাল্টানোর ষড়যন্ত্র, ভুয়া ইলেক্টর নিয়োগ এবং জানুয়ারি ৬ হামলার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা চলছিল।

ক্ষমাপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন বিতর্কিত আইনজীবী যিনি ডোমিনিয়ন ভোটিং সিস্টেমকে টার্গেট করে ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র ছড়ানোর অভিযোগে পরিচিত সিডনি পাওয়েল। রয়েছেন জন ইস্টম্যান, যিনি বিভিন্ন আইনি ব্যাখ্যার মাধ্যমে নির্বাচনের ফল পরিবর্তনের নীলনকশা তৈরি করেছিলেন। তালিকায় আছেন জেফ্রি ক্লার্ক, বিচার বিভাগে কর্মরত অবস্থায় যিনি নিজ ঊর্ধ্বতনদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ট্রাম্পের অভিযোগপত্রকে বৈধতা দিতে চেয়েছিলেন। একই সঙ্গে কয়েকটি স্টেটে ট্রাম্পের পক্ষে ভুয়া ইলেক্টর নিয়োগের সঙ্গে জড়িত বহু রিপাবলিকান কর্মকর্তাও ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছেন।

ঘোষণাটি ট্রাম্পের ওয়েবসাইটে গভীর রাতে প্রকাশিত হয় এবং এতে স্পষ্ট করে বলা হয় যে এই ক্ষমা ট্রাম্প নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করছে না। উল্লেখ্য, নিজের ক্ষমা প্রদানের ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট নিজের অপরাধ ক্ষমা করলে তা আইনগতভাবে অত্যন্ত বিতর্কিত হয়ে উঠত। ট্রাম্প যখন পুনরায় ক্ষমতায় আসেন, তার বিরুদ্ধে বিশেষ কৌঁসুলি জ্যাক স্মিথ আনা একাধিক ফৌজদারি অভিযোগ বাতিল করেন, কারণ বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী কর্মরত প্রেসিডেন্টকে বিচার বিভাগের অধীনে অভিযুক্ত করা যায় না।অনেকের বিরুদ্ধে ফেডারেল অভিযোগ না থাকলেও জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাদা, উইসকনসিন ও মিশিগান স্টেটে রাজ্য পর্যায়ের মামলা ঝুলছে। এসব মামলা আইনি জটিলতা ও রাজনৈতিক চাপের কারণে স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে ট্রাম্পের ক্ষমা মূলত রাজনৈতিক বার্তা হলো যেভাবেই হোক সহযোগীদের রক্ষা করা। বিশ্লেষকদের মতে, এটি মার্কিন গণতন্ত্রের কাঠামো, আইনের শাসন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার সততা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। ট্রাম্পের সমর্থকরা এটিকে জাতীয় পুনর্মিলনের ঘোষণা বললেও বিরোধীরা এটিকে ইতিহাস বিকৃতির প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।

রুডি জুলিয়ানি, যিনি একসময় নিউইয়র্কের নায়ক হিসেবে খ্যাত ছিলেন, পরে ২০২০ নির্বাচন নিয়ে অসংখ্য ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়ে তার সুনাম নষ্ট করেন। নির্বাচনী কর্মীদের বিরুদ্ধে অপমানজনক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে তিনি ডিসি ও নিউইয়র্কে আইন পেশা থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। সম্প্রতি দুই নির্বাচনী কর্মীর করা মামলায় তার বিরুদ্ধে ১৪৮ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের রায়ও বহাল থাকে, পরে তিনি সম্পত্তি বাঁচাতে সমঝোতা করেন। ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জানুয়ারি ৬ দাঙ্গায় অংশ নেওয়া শত শত সহিংসতার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও ক্ষমা করেছেন-যাদের মধ্যে পুলিশকে আক্রমণকারী, চরম ডানপন্থী সন্ত্রাস নেটওয়ার্কের সদস্য এবং সংঘটিত হামলার পরিকল্পনাকারীও ছিল। যদিও ২০২১ সালের সেই হামলা ছিল মার্কিন কংগ্রেস ভবনে গত দুই শতকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সহিংস আক্রমণ, ট্রাম্প তার ক্ষমা ঘোষণায় এটিকে মিথ্যা অপবাদ এবং বিচারগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে জাতীয় অবিচার বলে আখ্যা দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কেবল তার মিত্রদের রক্ষা নয়, বরং ইতিহাস পুনর্লিখনের প্রচেষ্টা। তিনি নির্বাচনের ফলকে এখনো চুরি বলে দাবি করে যাচ্ছেন, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সমালোচকদের মতে, এটি ভবিষ্যতে আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে পারে, যেখানে রাজনৈতিক আনুগত্য অপরাধের বিচার থেকে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন-পরবর্তী ট্রাম্পের এই গণক্ষমা আবারও প্রমাণ করলো-রাজনীতিতে তার লড়াই কেবল আইন নয়, জনগণের স্মৃতি ও ইতিহাসের বর্ণনাকে ঘিরেও। আগামীদিনে এটি মার্কিন গণতন্ত্রে কী প্রভাব ফেলবে তা এখন সময়ই বলে দেবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)