প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ হতে থাকা মহিলা ক্রীড়াঙ্গনে শ্লীলতাহানির অভিযোগ আমাকে ক্ষুব্ধ, আহত এবং ব্যথিত করেছে। সাধারণ ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে বাংলাদেশ মহিলা ক্রীড়াঙ্গনের সূর্যোদয় দেখেছি। প্রথম প্রজন্মের প্রায় সব পুরুষ এবং মহিলা ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে আমার আন্তরিক যোগাযোগ ছিল। লুৎফুন্নাহার বকুল, সুলতানা, সুফিয়া খাতুন, ডলি ক্রুজ, টলি, ডানা, মরিয়ম, রুমানা অর্থাৎ ফুটবল, হকি, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস সব খেলোয়াড়রা বেশ প্রভাবশালী। রক্ষণশীল বাংলাদেশি সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে মেয়েরা কতটা সংগ্রাম করে মেয়েদের খেলাধুলায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ফুটবল ক্রিকেটে পরবর্তী প্রজন্মের মেয়েরা বাংলাদেশকে গৌরবান্বিত করার অর্জনগুলো আমাকে আপ্লুত করেছে। ইদানীং মহিলা ক্রীড়াঙ্গনের নোংরামির কথিত মারাত্মক অভিযোগগুলো অবিলম্বে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে দোষীদের উপমাধর্মী শাস্তি প্রদান না করলে সচেতন অভিভাবকরা আর কখনো মেয়েদের খেলাধুলো করতে অনুমতি দেবে না।
অভিযোগগুলো বিষয়ে সমন্বিত প্রতিবাদ করার জন্য অনুজ প্রতিম কামরুন্নাহার ডানার আহ্বান দেখেছি। এর প্রতিবাদ করা সবারই কাম্য। সংশ্লিষ্ট সব ক্রীড়া সংগঠন, ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল এবং সরকারের উচিত অবিলম্বে গুরুতর অভিযোগুলো স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে ক্রীড়াঙ্গনকে দূষণমুক্ত করতে। নারীদের খেলাধুলা সংগঠন, পরিচালন এবং ব্যবস্থাপনার মোট মহিলা ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে রয়েছে। ক্রীড়াঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, মেধাভিত্তিক করার এখনই সময়। কিন্তু মনে রাখতে হবে শুধু অভিযোগ করলেই যেন কাউকে শাস্তি বিধান না করা হয়। জাতীয় স্বার্থে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হলেই মুক্তি মিলবে।
ঘটনায় যা রয়েছে
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা জাহানারা আলম। হঠাৎ করেই জাতীয় দলের একেবারেই বাইরে! একসময় জাতীয় দলের নম্বর ওয়ান পেস বোলার। আবার অধিনায়কও। সেই জাহানারা নীরবে হারিয়ে যাওয়া নিয়ে অনেক প্রশ্ন ছিল। কিন্তু উত্তর নেই। পারফরম্যান্স করতে পারছে না, তো দল থেকে সরে গেছে। আর পারফরম্যান্স ঠিক আছে কি না তার মাপকাঠি অনেকটাই বিসিবির সংশ্লিষ্টদের হাতেই ছিল। ফলে ভেতরটা ওভাবে আর জানা যায়নি। কিন্তু এখন জাহানারা আলম জানাচ্ছেন, একটি মহল তার ক্যারিয়ারটা শেষ করে দিয়েছে। ফলে ক্রিকেট থেকে একটু দূরেই এখন তিনি। কিন্তু জাতীয় দলে থাকাকালীন তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহ এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে জাহানারা আলমকে। সে সূত্রেই মুখ খুলছেনে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সব না বলা কথা সামনে এনেছিলেন পেসার জাহানারা আলম। এবার যৌন হেনস্তার মতো গুরুতর অভিযোগ তুললেন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করা ওমেন্স ন্যাশনাল টিমের সাবেক এই পেসার। যেখানে সাবেক নির্বাচক, সাবেক ইনচার্জ, ম্যানেজারসহ বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়েও অভিযোগ তোলেন জাহানারা। এদিকে জাহানারা আলমের এ খবর আন্তর্জাতিক মিডিয়া তোলপাড়। এএফপি, দ্য হিন্দু, টাইমস অব ইন্ডিয়া, জি নিউজ, ডন, ক্রিক ট্র্যাকার, ক্রিকবাজসহ বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়া গুরুত্বের সঙ্গে খবর পরিবেশন করেছে। এতে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের ক্রিকেট ও বিসিবি চরম ইমেজ সংকটে পড়েছে। বিসিবি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, কাজও চলছে। কিন্তু এখান থেকে ভালো কোনো রেজাল্ট আসবে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।