আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ও কিছু প্রশ্ন


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 19-11-2025

আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ও কিছু প্রশ্ন

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকালে পুনগঠিত আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল জুলাই-আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতা আন্দোলনকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে অপসারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে। রাষ্ট্রের যে কোন নাগরিক কোনো ধরনের অপরাধ করে থাকলে এবং সেই অপরাধ যথাযথ আদালতে তথ্য তত্ত্বের ভিত্তিতে প্রমাণিত হলে যথাযথ আইনের ভিত্তিতে দণ্ড প্রদান করা হলে কারো কোন প্রশ্ন করার অধিকার ইেন। কিন্তু বিদ্যমান অবস্থায় বিশেষ আদালত গঠন, বিচার প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত ব্যাক্তিদের আত্মপক্ষ সমর্থন সুযোগ ব্যতিরেকে, অসমর্থিত তথ্যের ভিত্তিতে অস্বচ্ছভাবে বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট সুযোগ আছে।

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ প্রকৃতপক্ষে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী গণহত্যার বিচার করার জন্য প্রণীত হয়েছিল। সেই আইনের আওতায় মুক্তিযুদ্ধকালে সংগঠিত গণহত্যা, ধর্ষণ এবং অগ্নিকান্ডে সম্পৃক্ত রাজাকার, আলবদর এবং মুক্তিযদ্ধে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনীর বিচার হয়েছে। স্মরণীয় যে, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্থন দলিলে দখলদার বাহিনীর সহায়তাকারীর বিচারের কথা লিপিবদ্ধ আছে। ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকৃতপক্ষে গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। একই আইনের আওতায় জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করা সঠিক কি না সেই বিষয়ে সংশয় আছে।

অন্তর্বর্তী অনির্বাচিত সরকার আইসিটি আইন সংশোধন অথবা আইসিটি আদালত পুনর্গঠন করার অধিকার রাখে কি না সেটিও তর্কসাপেক্ষ। অধিকন্তু আদালত পুনর্গঠনকালে মুক্তিযুদ্ধকালীন অপরাধীদের কৌঁসুলিকে আইসিটির চিফ প্রসিকিউটর নিয়োগ এবং কয়েকজন বিচারকের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রশ্নসাপেক্ষ।

এমনিতেই নানা মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে জুলাই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র-জনতার আন্দোলন সময়ে হত্যাকাণ্ডে তৃতীয়পক্ষের সম্পৃক্ততা ছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের একজন উপদেষ্টা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মারণাস্ত্রের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তড়িঘড়ি করে বিচার প্রক্রিয়া সম্পাদনের পটভূমিতে একটি মহলের প্রতিশোধ প্রবণতার পরিচয় সুস্পষ্ট। আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি বিচার প্রক্রিয়ায় গোড়ায় গলদ রয়েছে। বিতর্ক করার অনেক উপকরণ আছে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সময়ে এবং তৎপরবর্তী সময়ে সংঘটিত সব হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক তদন্ত হলে এবং নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার হলে প্রকৃত আসামিদের সাজা হতে পারে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন অভিযুক্ত ভারতে অবস্থান করছে। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধ অথবা আহ্বানে ভারত সাড়া দেবে কি না সন্দেহ আছে। ভারত কিন্তু পূর্ববর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ বিষয়ই নিশ্চিত নয়। এমতাবস্থায় ভারত না চাইলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ হবে বলে মনে হয় না। পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে কীভাবে বিষয়টি সমাধান করে দেখতে হবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)