আ’লীগের ব্যাপারে হার্ড লাইনে সরকার


সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ , আপডেট করা হয়েছে : 19-11-2025

আ’লীগের ব্যাপারে হার্ড লাইনে সরকার

অন্তর্বর্তী সরকার আর উদারতা দেখাবে না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির সাম্প্রতিক কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিস্টরা মনে করছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির নেতাকর্মীদের প্রতি কিছুটা সহানুভতি দেখানোকে তারা প্রশাসনিক দুর্বলতা মনে করছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের আগে পরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটি সারাদেশে ভয়াবহ তান্ডবে সরকার হতবাক হয়েছে। এমন-কি দেশে এখন প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’র নেতাকর্মীদেরও হতবাক করে দিয়েছে সম্প্রতি বি-না বাধায় আওয়ামী তান্ডব দেখে। বিএনপি’র হাই কমান্ড এজন্য সরকারের দুর্বলতার পাশাপাশি অক্ষমতাকে দায়ী করছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। একারণে এই সরকারকে তারা এখন অনেক দুর্বল সরকার বলেই মনে করেন। বিএনপি এনিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বৈঠকে কঠোর ভাষায় বক্তব্য রেখেছে। তাদের প্রশ্ন কেনো প্রশাসন আওয়ামী লীগের এধরনের কার্যক্রমকে দ্রুত দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর পাশাপাশি কেনো সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ আওয়ামী লীগের এসব কর্মকান্ড আগে ভাগে আঁচ-ও পর্যন্ত করতে পারেনি। আর একারণে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

একটি সূত্র জানায়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা যাতে সহজে জামিন না পান, সে ব্যাপারে সরকারের অগ্রাধিকার থাকবে । এমন বক্তব্য সম্প্রতি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এদিকে কয়েকমাস আগে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলই নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা হয়। কিন্তু এরপরেও দেখা গেছে, জামিন পেয়ে অনেক নেতাকর্মী মিছিলেও যুক্ত হচ্ছেন। কিন্তু মিছিল ঠেকাতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো বা টহল জোরদার ও গ্রেপ্তারের ওপর কেনো জোর দেওয়া হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

কঠোরতার কিছু নমুনা

অন্তর্বর্তী সরকার যে নিষিদ্ধ ঘোষিত দলটির নেতাকর্মীদের ব্যাপারে হার্ড লাইনে থাকবে তার আরও কঠোর হবে তার নমুনা মেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর বক্তব্যে। যারা মানুষ, পুলিশ ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপ করবে, তাদের ওপর গুলির নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি এই নিদের্শের কথা জানিয়েছেন যখন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচারের রায় ঘোষণা করার কথা বলেছে। ১৭ নভেম্বর সোমবার এ রায় ঘোষণা ঘিরে গত সপ্তাহে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দেয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকা আওয়ামী লীগ। ওই কর্মসূচি ঘিরে ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাসে-ট্রেনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে আসছে। কয়েক দিন ধরে সারাদেশে ককটেল বিস্ফোরণ, পেট্রোল বোমা হামলা, রেলের বগিতে আগুন দেওয়াসহ নানা ধরনের নাশকতা চলছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ মহাসড়কে গাছ ফেলে, আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করছে। গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে রাজধানী ও আশপাশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা বেশি ঘটছে। আর বাইরের জেলাগুলোতে যানবাহনে আগুন, পেট্রোল বোমা হামলা ও সড়ক অবরোধের ঘটনা বেশি ঘটছে। এম পরিস্থিতিতে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও মাদারীপুর জেলায় বিজিবি মোতায়েন করেছিল সরকার। ১৬ নভেম্বর রোববার ও ১৭ নভেম্বর সোমবার সারাদেশে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছিল। যা-র কারণে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার রায়ের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী তান্ডব চালাতে পারেনি। এই রায়কে কেন্দ্র করে ঢাকায় যাতে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সে জন্য নিরাপত্তা জোরদার করেছিল পুলিশ। এদিকে সর্বশেষ তথ্যেও দেখা গেছে যে, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার) ১ হাজার ৬৪৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র, গান পাউডার ও ককটেল।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)