সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা আশঙ্কা : মুজাহিদুল


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 19-11-2025

সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা আশঙ্কা : মুজাহিদুল

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র জাতীয় সমাবেশে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, দেশ এক সর্বগ্রাসী সংকটে নিমজ্জিত। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বারবার নানা আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। তিনি দাবি জানান, অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রতি সিপিবির জাতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গণসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ আরম্ভ হয়ে বেলা ৩টায় বক্তব্যপর্ব শুরু হয়। 

সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দনের সভাপতিত্বে সমাবেশে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন পার্টির সাবেক সভাপতি ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। 

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে পাকিস্তানের জিঞ্জির থেকে মুক্ত করেছি ভারত কিংবা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নতুন শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার জন্য নয়। ক্ষমতাসীন ইউনূস সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে মার্কিন ভূরাজনৈতিক স্বার্থের অনুগত করছে। যা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বারবার স্বৈরাচারী শাসনের কবলে পড়েছে। দেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারদের উৎখাত করেছে। নতুন কোনো ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী শাসন আমরা দেখতে চাই না। সেলিম আরও বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিনে ‘গণভোটের’ জন্য ড. ইউনূস যে প্রস্তাবনা হাজির করেছেন তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ঐকমত্যের কথা বলে একটি ভুয়া দলিল রচনা করেছে। সাংবিধানিক আদেশ বলবৎ করে সরকার যা করতে যাচ্ছে গণভোটের মধ্য দিয়ে তার বৈধতা হবে না। ঐকমত্যের বাইরে কোনো বিষয় চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। 

ক্ষমতাসীন সরকার সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের মধ্য দিয়ে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি এক দ্বন্দ্ব-সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নতুন মোড়কে পুরাতন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করছে বর্তমান সরকার। তিনি বলেন, সর্বগ্রাসী সংকট থেকে দেশকে বাঁচাতে ফ্যাসিস্ট দুঃশাসনের পুনরাবৃত্তি ও উগ্র ডানপন্থা রুখতে হবে। বিকল্প বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তির সরকার গড়তে হবে। 

সমাবেশে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সমাজ বিপ্লবীদের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমাদের জন্য এখন প্রয়োজন যারা ব্যক্তি মালিকানা উচ্ছেদ করে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে চান তাদের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা। এবারকার যুক্তফ্রন্ট হবে বিপ্লবীদের যুক্তফ্রন্ট, সমস্ত বামপন্থীদের ফ্রন্ট। আমি মনে করি সেই ফ্রন্টের নেতৃত্ব দিতে হবে কমিউনিস্ট পার্টিকে। তাদের আওয়াজ তুলতে হবে সমাজবিপ্লবীরা এক হও। আশাকরি কমিউনিস্ট পার্টির এ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাগিব আহসান মুন্না, এসএ রশীদ, মো. আমিনুল ফরিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং ডা. দিবালোক সিংহ। সমাবেশে দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীগণের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বর্ষীয়ান মার্কসবাদী চিন্তাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ অসুস্থ থাকায় তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। সমাবেশে বন্ধুপ্রতীম রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর প্রধান উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া। প্রান্তিক ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের পীর সাহেব শাহ সূফী হাসান শাহ সুরেশ্বরী দিপু নূরী, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন, বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সাবেক সভাপতি কৃষ্ণলাল। সমাবেশ পরিচালনা করেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রফিকুজ্জামান লায়েক ও জলি তালুকদার। 

আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ইউনূস সরকার তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান জনতার বেহাত হয়েছে। 

কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণার দাবি জানান। নির্বাচনে জামানতের অর্থ কমানো ও প্রার্থীদের সমতা নিশ্চিত করার দাবিতে ২৪ নভেম্বর, সোমবার নির্বাচন কমিশন ঘেরাও এবং জেলা ও উপজেলায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)