লেটিশিয়া জেমস ও কোওমির বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের মামলা বাতিল


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 26-11-2025

লেটিশিয়া জেমস ও কোওমির বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের মামলা বাতিল

একটি বিস্ময়কর ও ঐতিহাসিক রায়ে সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কোওমি এবং নিউইয়র্ক অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমসের বিরুদ্ধে আনা ফেডারেল অভিযোগপত্র গত ২৪ নভেম্বর বাতিল করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক। বিচারক ক্যামেরন ম্যাকগোওয়ান কারি তার রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভার্জিনিয়ার ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্টে যে অন্তর্বর্তীকালীন ইউএস অ্যাটর্নি হিসেবে লিন্ডসি হ্যালিগানকে নিয়োগ দেন, সেই নিয়োগই ছিল ‘অবৈধ’। আর এই অবৈধ নিয়োগের ভিত্তিতে আনা সব অভিযোগপত্রকে তিনি ‘আইনবহির্ভূত নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকেই অভিযোগ ছিল যে, তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে। ইউএস অ্যাটর্নি হিসেবে লিন্ডসি হ্যালিগানের নিয়োগও সেই চাপের মধ্যেই করা হয়েছিল বলে আদালতে অভিযোগ ওঠে। রায়ে বিচারক বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের নিয়োগের মেয়াদ মাত্র ১২০ দিন সীমিত। কিন্তু এই মেয়াদ অতিক্রমের পর নতুন করে কাউকে নিয়োগ দেওয়া বা দায়িত্ব বাড়ানোর কোনও সাংবিধানিক সুযোগ নেই। বিচারকের ভাষ্যে, এই ব্যাখ্যা মেনে নিলে প্রশাসন পর্যায়ক্রমে অসীম সংখ্যক ১২০ দিনের নিয়োগ দিয়ে সেনেট অনুমোদন এড়াতে পারবে যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।

এ রায় ঘোষণার পর লেটিটিয়া জেমস এক বিবৃতিতে জানান, আদালতের সিদ্ধান্তে তিনি স্বস্তি পেয়েছেন এবং এই মামলার মাধ্যমে তার প্রতি জনসমর্থনের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে জেমস কোওমি ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, এই মামলা ছিল বিদ্বেষ, অদক্ষতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের উদাহরণ। তিনি যোগ করেন, টিকতে না পারা এই মামলা দেখিয়ে দিল যে একজন প্রেসিডেন্ট বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন না। যদিও অভিযোগপত্র বাতিল করা হয়েছে ‘উইদআউট প্রেজুডিস’এই মুহূর্তে মামলা বন্ধ, কিন্তু ভবিষ্যতে পুনরায় দাবি করা সম্ভব। তবে জেমস কোউমির ক্ষেত্রে বিচারক কারি উল্লেখ করেন, সময়সীমা বা স্ট্যাচুট অব লিমিটেশন্স ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছে। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে পুনরায় মামলা আনার সম্ভাবনা কার্যত শেষ। হোয়াইট হাউস অবশ্য স্পষ্ট করেছে যে, সিদ্ধান্তের পরও তারা মনে করে অভিযোগগুলো যথার্থ ছিল, এবং এটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। তবে বিশ্লেষকদের মতে, আদালতের এই রায় ভবিষ্যতের সব রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর মামলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকবে।

ইউএস অ্যাটর্নি হিসেবে লিন্ডসি হ্যালিগানের নিয়োগ কেন অবৈধ ছিল তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিচারক কারি বিশেষভাবে ট্রাম্পের গোপন নথি মামলার উদাহরণ টানেন। ওই মামলায় বিচারপতি আইলিন ক্যাননও বিশেষ কাউন্সেল জ্যাক স্মিথের নিয়োগকে আংশিক একই যুক্তিতে অবৈধ বলে রায় দেন। বিচারক কারির মতে, যেহেতু ২০২৫ সালের ২১ মে শিবর্টের ১২০ দিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, তাই অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির হ্যালিগানকে নিয়োগ দেওয়ার কোনও কর্তৃত্ব ছিল না।এদিকে হ্যালিগানের বরখাস্ত হওয়া পূর্বসূরি এরিক শিবর্টকে ফেডারেল বিচারকরা সম্মিলিতভাবে দায়িত্বে রাখতে চেয়েছিলেন যা এই পুরো বিতর্ককে আরো জটিল করে তুলেছে। বিচারক কারিকে অন্য জেলা থেকে এনে মামলাটি পরিচালনা করতে বলা হয়েছিল জনআস্থার স্বার্থে, কারণ ভার্জিনিয়ার স্থানীয় বিচারকেরা বিষয়টির প্রশাসনিক অংশে যুক্ত ছিলেন।

জেমস কোওমি ও লেটিশিয়া জেমস দুজনই বরাবরই ট্রাম্পের সমালোচক। কোউমি ২০১৬ নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ তদন্তে তার ভূমিকার কারণে ট্রাম্পের অপছন্দের তালিকায় ছিলেন এবং প্রথম দফায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালেই তাকে বরখাস্ত করা হয়। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল জেমস ট্রাম্পের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি ডলারের মামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই মামলায় প্রথমে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও পরে আপিল কোর্ট সেই রায় অতিরিক্ত উল্লেখ করে বাতিল করে দেয়।

এ প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত কিছু মন্তব্য যেখানে তিনি হ্যালিগানকে সরাসরি কোউমি, অ্যাটর্নি জেমস বা ডেমোক্র্যাট সিনেটর অ্যাডাম শিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দেন আদালতে প্রতিরক্ষা দলের যুক্তিকে আরো শক্তিশালী করে। যদিও ট্রাম্পের আইনজীবীরা দাবি করেন, এসব মন্তব্য ছিল রাজনৈতিক মতামত। সব মিলিয়ে, বিচারকার্যের এই নাটকীয় মোড় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, নির্বাহী ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা নিয়ে নতুন করে জাতীয় বিতর্ক উসকে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রায়টি শুধু এই দুই মামলার গতিপথই বদলে দেবে না বরং ভবিষ্যতের ক্ষমতার অপব্যবহারের সম্ভাবনাকেও আইনি কাঠামোয় আরও স্পষ্টভাবে চ্যালেঞ্জ জানাবে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)