ভোট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, আপনারাই আমার শক্তি


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 26-11-2025

ভোট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, আপনারাই আমার শক্তি

নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ইতিহাস সৃষ্টিকারী প্রথম মুসলমান ও প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গত চার বছর প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার মানুষদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের জন্যে সিটি মেয়রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয়েছে। আপনারা আমাকে এবং জোহরান মামদানিকে ভোট দিয়েছেন সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আপনারাই আমার শক্তি। আমি বাংলাদেশি কমিউনিটিকে ভালোবাসি। আমি মামদানি প্রথম ফিলিস্তিনি মানুষের পক্ষে কথা বলা শুরু করি এবং আমরা সাধ্যমতো প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি। যে কারণ এবারের নির্বাচনে আমাদের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আসছে জানুয়ারিতে সারা আমেরিকায় ইতিহাস সৃষ্টি করে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী প্রথম মুসলমান মেয়র জোহরান মামদানি ক্ষমতা গ্রহণের পর আশা করছি সেই সমস্যা কেটে যাবে। কারণ মামদানিও আমার মতো প্রগতিশীল, যিনি নিজেকে মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে কণ্ঠা করেননি। যদিও তাকে মুসলিম বলে নানা অপবাদ দেয়া হয়েছে, ইসলামি সন্ত্রাসীও বলার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তিনি আমার সাহস। আমরা এখন একসঙ্গে কাজ করতে পারবো। গত ৪ বছর আমি প্রায় লড়াই করেছি। মেয়র এরিক অ্যাডামস আমাদের পক্ষে ছিল না। যে কারণে রেন্ট ফ্রিজ করা যায়নি। তার কারণেই রেন্ট বেড়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে চট্টগ্রাম সমিতি প্রদত্ত এক সংবর্ধনা সমাবেশে শাহানা হানিফ আরো বলেছেন, বাংলাদেশিরা হলেন ক্রমবর্ধমান কমিউনিটির মধ্যে সবচেয়ে অগ্রগামী। বাংলাদেশিদের এখন সর্বত্র পাওয়া যায়। যেমন ট্যাক্সি, উবার, ফুডকার্ড, হাসপাতালে ডাত্তারসহ অন্যান্য প্রফেশনে। এবার পাওয়া যাবে সিটি হলের গুরুত্বপূর্ণ পদে। গত নির্বাচনেও সেটি দৃশ্যমান হয়েছে। রাজনীতিতে এই গতিশীলতাকে অব্যাহত রেখেই বহুজাতিক এই সমাজে নিজেদের আমেরিকান স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পথ সুগম করতে হবে। আর ব্যালট যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার এই প্রক্রিয়াটি হচ্ছে আমেরিকান সমাজে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করার অন্যতম অবলম্বন।

বিদ্যমান রীতি অনুযায়ী দু’টার্মের বেশি একই আসনে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ না থাকায় প্রবাসীদের আহবানের পরিপ্রেক্ষিতে শাহানা হানিফ বলেন, শেষ মেয়াদের চার বছর কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে পরবর্তীতে সিটি কম্পট্রোলার নাকি মেয়র পদে অথবা কংগ্রেস কিংবা অন্য কোন আসনে লড়বো, তা নির্ধারিত হবে। তবে আমি নিজেকে জনসেবায় সমর্পিত করেছি, এই কাজটি আমার খুবই ভালো লাগে। দোয়া করবেন যে, বাকিটা জীবন সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের পাশে থাকতে পারি।

শাহানা এ সময় আরো উল্লেখ করেন, ট্যাক্সি ড্রাইভার, ডেলিভারিম্যান, রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক আদায়ের সকল আন্দোলন-লড়াইয়ে পাশে রয়েছি। অতি সম্প্রতি কটি রেস্টুরেন্টে বেশ ক’জন বাংলাদেশি শ্রমিকের বকেয়া বেতন আদায়ের চলমান আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করায় তারা প্রায় তিন মিলিয়ন ডলার পাচ্ছেন।

এছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন দমনের অভিযানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যেও শাহানার অফিস কাজ করছে। তিনি বলেন, মানুষ মানুষ, কেউ ইল্লিগাল হতে পারে না। আমরা ট্রাম্পের অভিযান বন্ধ করতে আন্দোলন করেছি। ব্রেডল্যান্ডসহ আমরা ফেডারেল প্লাজায় সংগ্রাম করেছি। ক্যানেল স্ট্রিটে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এখনো আমার অফিস কাজ করছে। এছাড়াও গৃহায়ন এবং ভাড়াটে ও বাড়ির মালিকের সমস্যা সমাধানেও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সেক্টরে অভিজ্ঞজনদের নিয়ে। তিনি বলেন, আমার অফিস থেকে প্রতিনিয়ত আইনী পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ব্রুকলিনের নোয়াখালী সোসাইটির অফিসটি আমা ব্যবহার করছি বিভিন্ন কাজে। যার মধ্যে রয়েছে বয়স্কদের ইংরেজি শিক্ষা এবং আইনি পরামর্শ। আমরা বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কাজ করে যাচ্ছি, চেষ্টা করছি তাকে বিষয়বস্তু হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার।

চট্টগ্রামের সন্তান এবং উত্তর আমেরিকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের জ্যেষ্ঠ কন্যা শাহানা হানিফের পুনরায় বিজয় উপলক্ষে ব্রুকলীনে চট্টগ্রাম ভবনে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি আবু তাহের এবং সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি আরিফুল ইসলাম আরিফ।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জেলার বিশিষ্ঠজনেরা এতে ছিলেন। এ সময় শাহানাকে সমিতির ‘আজীবন সম্মাননা সদস্য’ মনোনীত করার ঘোষণার পাশাপাশি একটি ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এ সময় জানানো হয় যে, এর আগে চট্টগ্রাম সমিতির আজীবন সম্মানীত সদস্যপদ প্রদান করা হয়েছে বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ মরহুম প্রফেসর নূরল ইসলাম, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে। এরপর নিউইয়র্ক অঞ্চলে সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে শাহানা হানিফকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় বিপুল করতালির মধ্যে।

শাহানাকে বীর চট্টলার অগ্নিকন্যা হিসেবে অভিহিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের গৌরব হিসেবে মন্তব্য করে এ সময় বক্তব্য রাখেন এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম এ রহিম, সাবেক সভাপতি কাজী আজম, ‘আব্দুল কাদের মিয়া ফাউন্ডেশন’র প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল কাদের মিয়া, সন্দ্বীপ সোসাইটির সভাপতি ফিরোজ আলম, মূলধারার রাজনীতিক খোরশেদ খন্দকার, বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তা লায়ন আহসান হাবিব, যুক্তরাষ্ট্র জাসাসের সদস্য সচিব জাহাঙ্গির সোহরাওয়ার্দি, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক নেতা আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, সাংস্কৃতিক সংগঠক সাহাবউদ্দিন চৌধুরী লিটন, কমিউনিটি লিডার শামসুল আলম চৌধুরী, মোর্শেদ রিজভী, মিজানুর রহমান জাহাঙ্গির, নূরল আনোয়ার, শ্রাবণী সিং সিপিএ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি কামাল হোসেন মিঠু, সাংবাদিক লাবলু আনসার, ব্যবসায়ী নেতা লুৎফুল করিম প্রমুখ।

বক্তারা দৃঢ়সংকল্প ব্যক্ত করেন যে, আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে সবাই দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে শাহানা হানিফের সহায়ক শক্তি হিসেবে সর্বদা সচেতন থাকবেন। ঐক্যবদ্ধ শক্তি কখনো পরাজিত হয় না, এ সত্যকে হৃদয়ে ধারণ করে বহুজাতিক এ সমাজে বাংলাদেশকে আরো মহিমান্বিত করার অঙ্গীকারও করেছেন সবাই। উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণকারী, শাহানা বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিত হবার জন্যে বেশ কিছুদিন মা-বাবার পৈতৃক স্থান চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবস্থান করেছেন। আর এভাবেই নিজেকে একজন খাঁটি বাঙালি হিসেবে উপস্থাপনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। উল্লেখ্য, শাহানার এই বিস্ময়কর উত্থানে সদা উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করেছেন, তার মা রেহানা হানিফ এ তথ্য ও প্রিয় পরিচিতজনেরা উল্লেখ করেন এ সংবর্ধনা সমাবেশে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)