ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা ক্যাম্পাসে মুসলিম শিক্ষার্থীদের গত ১৮ নভেম্বর সকালে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ফজর নামাজরত মুসলিম শিক্ষার্থীদের বিরক্ত ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তরা ক্রিস্টোফার সভোচাক (৪০), রিচার্ড পেনস্কোস্কি (৪৯) এবং রিকার্ডো ইয়েপেজ (২৮)। তাদের বিরুদ্ধে অঙ্গরাজ্যের ঘৃণা-অপরাধ (হেইট ক্রাইম) আইনে গুরুতর ফেলনি অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা পুলিশ জানায়, টেক্সাসের ওয়াকোর বাসিন্দা ক্রিস্টোফার সভোচাক, রিচার্ড পেনস্কোস্কি এবং ওকলাহোমার ক্যানিয়ন এলাকার রিচার্ড পেনস্কোস্কি-এ তিন ব্যক্তি ক্যাম্পাসের একটি পার্কিং গ্যারেজে নামাজরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে চিৎকার, গালাগালি এবং জোরে পা ঠুকে ভয় দেখানোর ঘটনা ভিডিওতে ধরা পড়ে। তবে তারা কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের মধ্যে রয়েছে: ধর্মীয় সমাবেশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যাহত করার অভিযোগে ফেলনি হেইট ক্রাইম, পাশাপাশি বিশৃঙ্খল আচরণ ও আইনসম্মত সমাবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মিসডিমিনর অপরাধ। একই সঙ্গে তিন জনের বিরুদ্ধেই ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ট্রেসপাস সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
গত ১৮ নভেম্বর ক্যাম্পাসের কলিন্স বুলেভার্ড পার্কিং সুবিধার শীর্ষ তলায় নামাজের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ছাত্র আবু তাহির। নামাজ শুরুর কয়েক মিনিট পরই তিনি পেছনে পায়ের শব্দ শুনে প্রথমে ভেবেছিলেন সম্ভবত আরেক ছাত্র জামাতে যোগ দিচ্ছে। কিন্তু চোখ খুলতেই সামনে দেখা যায় তিন অচেনা ব্যক্তি একটি কালো কার্ডবোর্ড বাক্স নামিয়ে রেখে তাতে লিখেছে কাবা টু পয়েন্ট ও জিসাস ইজ লর্ড যা ইসলাম ধর্মের পবিত্র কাবাকে ব্যঙ্গ করার স্পষ্ট ইঙ্গিত। পাশাপাশি আক্রমণকারীরা নিজেদের ভিডিও করতে করতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের গালাগালি, নরকে যাবে বলে হুমকি এবং তাদের মুখের সামনে বেকন ঝুলিয়ে অপমান করতে থাকে। পরে জানা যায়, এই হামলার ভিডিও খ্রিস্টান গোষ্ঠী ওয়ারিয়র্স ফর ক্রাইস্টের ইউটিউব চ্যানেলে লাইভস্ট্রিম করা হয়। যে গোষ্ঠীকে সাউদার্ন পোভার্টি ল সেন্টার ২০২৪ সালে অ্যান্টি-এলজিবিটিকিউ ঘৃণা-গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
আবু তাহির বলেন, আমরা আদৌ নিরাপদভাবে সেখান থেকে বের হতে পারব কি না, সে চিন্তায় আতঙ্কিত ছিলাম। শুক্রবার ইসলামিক সোসাইটি অব টাম্পা বেতে আয়োজিত নিন্দা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ ঘটনা শুধু হয়রানিই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রতি সরাসরি হুমকি। মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা প্রশাসনের কাছে জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, স্থায়ী নামাজের স্থান এবং শক্ত অবস্থান নেওয়ার দাবি জানান।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা প্রথমে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে ঘটনার নিন্দা জানালেও মুসলিম শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়াকে যথেষ্ট মনে করেননি। ইউনাইটেড ভয়েসেস ফর আমেরিকার সভাপতি আহমেদ বেদিয়ার বলেন, তাদের বিবৃতিতে ইসলাম বা মুসলিম শব্দই নেই। আমরা যেন দৃশ্যমানই নই। এ বার্তাটি কাদের জন্য? এরপর মুসলিম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এমএসএ) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সাত দফা দাবি জানায়। এর মধ্যে রয়েছে প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক, প্রকাশ্যে ইসলামোফোবিয়া নিন্দা এবং ক্যাম্পাসে মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা বরাদ্দ।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা প্রেসিডেন্ট রিয়া ল’ শুক্রবার এক ইমেইলে জানান যে বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ও স্টুডেন্ট সাকসেস টিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখেছে। শনিবার এমএসএ জানায় তাদের সাতটির মধ্যে চারটি দাবি পূরণ হয়েছে এবং শিগগিরই প্রেসিডেন্ট ল-এর সঙ্গে বৈঠক হবে। একই দিনে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা পুলিশ জানায়, তিন অভিযুক্তকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে হিলসবরো কাউন্টি স্টেট অ্যাটর্নির অফিসে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তরা, ক্রিস্টোফার সভোচাক (৪০), রিচার্ড পেনস্কোস্কি (৪৯) এবং রিকার্ডো ইয়েপেজ (২৮) ফেলনি ঘৃণা-অপরাধসহ মোট তিনটি অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডা ক্যাম্পাসে প্রবেশ স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট রিয়া এফ ল’ এক বিবৃতিতে বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনকে সম্মান করা। তিনি আরো জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ধরনের হয়রানি বা বৈষম্য সহ্য করবে না এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দীর্ঘদিন টাম্পায় বেড়ে ওঠা আবু তাহির বলেন, তিনি কখনো এমন নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেননি। আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ আমেরিকা নিয়ে আমি সত্যিই ভয় পাচ্ছি দি এখনই এটি থামানো না হয়। এই ঘটনা শুধু এক দিনের নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান ইসলামবিদ্বেষ ও ঘৃণা-রাজনীতির ভয়াবহ বাস্তবতা তুলে ধরেছে, যা মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর আরো দৃঢ় পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।