দুর্যোগ ঘনীভূত হচ্ছে বাংলাদেশে


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 03-12-2025

দুর্যোগ ঘনীভূত হচ্ছে বাংলাদেশে

প্রতিহিংসাপরায়ণতা, দুর্বল প্রশাসন, দুরভিসন্ধিমূলক বিচারব্যবস্থার সম্মিলিত কারণে সীমাহীন দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক মহল উপলব্ধি করছে অশুভ সিন্ডিকেটের প্রভাবে তড়িঘড়ি করে ফেব্রুয়ারি ২০২৬ আগেই পরিবারসহ শেখ হাসিনা এবং শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারকাজ সম্পাদন করে দলটিকেও নিষিদ্ধ করতে চাইছে ইউনূস সরকার। জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থাসমূহ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ সরকারকে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগাদা দিয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আদালতে শেখ হাসিনাকে মানবিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিচার এবং মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য প্রদান করেছে। ভারত সরকার কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনাকে প্রত্যার্পণ করবে না সেটি সুস্পষ্ট। বাংলাদেশ নিয়ে ট্রাম্প সরকারের মনোভাব পরিবর্তনের অভ্যাস মিলছে। নানা ডিজাইন করেও ফেব্রুয়ারিকে নির্ধারিত নির্বাচন পেছানো যাবে না বুঝতে পেরে সরকার দ্রুত বন্দরসমূহ বিদেশিদের পরিচালনায় ন্যস্ত করার মোট চুক্তি সম্পাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু উচ্চ আদালতের একটি বিতর্কিত রেফারেন্স নিয়ে বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছে। এ সরকারের সংবিধান পরিপন্থী কোনো কাজ করার ক্ষমতা বা অধিকার নেই। স্পষ্টত বলা যায়, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক জুলাই সনদ প্রণয়ন, আইসিটি আইন সংশোধন, আইসিসিটি পুনর্গঠন অন্তর্বর্তী সরকারের আওতার পরিপন্থী। ভবিষ্যতে কোনো সময় এগুলো সব আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ হলে বাতিল হবে।

বর্তমান সংবিধানে গণভোটের ব্যবস্থা নেই। তথাপি সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশের সম্মতির ভিত্তিতে ২০২৬ ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের দিন জুলাই সনদ এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে হা না ভোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশ্ন হলো বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে গঠিত নির্বাচন কমিশন কোন ক্ষমতায় গণভোট অনুষ্ঠান করবে?

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ এখন খেলাপি ঋণে বিশ্বরেকর্ড করেছে। অর্থনীতিতে হচ্ছে রক্তক্ষরণ, বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, ৬ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমেছে। সংকুচিত হচ্ছে রফতানি আয়। ব্যাংকগুলো আছে সীমাহীন তারল্য সংকটে। নানা সংকটে শিল্পখাত, ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়ছে। অনেক ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিদেশি এবং দেশি বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায়। বেকার সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত এবং দেউলিয়া দেশগুলোর থেকেও নাজুক। কিছুদিন আগে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপেছে দেশ। আরো কয়েকটি ছোটখাটো ভূমিকম্প হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে অচিরে একটি ৬-৭ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প হতে পারে। ফলশ্রুতিতে ঢাকার ৭০-৮০ শতাংশ ভবন ধ্বংস এবং জানমালের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবার খবর বেরিয়েছে নাগরিক সুবিধা সীমিত ঢাকা মহানগরী এখন বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ।

এমনি অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে ২০২৬ জাতীয় নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করার চ্যালেঞ্জে সরকার সফল না হলে ঘোরতর অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে। নতুন সরকারের টিকে থেকে ঘুরে দাঁড়ানো মারাত্মক কঠিন হয়ে যাবে।

শুনেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল পরিবর্তন এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভারতের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদীদের হাত থেকে মুক্ত রাখতে চায়। ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি অংশ ইউনূস সরকারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করার কথা, ডিসেম্বর মাসে বর্তমান সেনা প্রধানের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।

সব সচেতন মানুষ চায় ঘুষ, দুর্নীতি, অপশাসন, জুলাই আগস্ট ২০২৪ হত্যাযজ্ঞ, পরবর্তী সময়ের মব সন্ত্রাস ধ্বংসযজ্ঞের নিরপেক্ষ বিচার। আর সেটি করতে হলে আবশ্যিকভাবে প্রয়োজন জনগণের নির্বাচিত সরকার। আশা করি বিশ্ব মহলের সুতীক্ষè দৃষ্টি উপেক্ষা করে সরকার কোনো একপেশে লোক দেখানো নির্বাচনের ঝুঁকি নেবে না।

না হলে চারদিক থেকে ঘনিয়ে আসা মহাসংকটে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)