জনমত সৃষ্টিতে ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি


দেশ রিপোর্ট , আপডেট করা হয়েছে : 03-12-2025

জনমত সৃষ্টিতে ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি

সুপ্রিম কোর্টে ট্যারিফ আদায় সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে অধিকাংশ বিচারপতির তীব্র সমালোচনার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন যে এই মামলার রায় সম্ভবত তার বিপক্ষে যাবে। সুপ্রিম কোর্টে ট্যারিফ মামলার শুনানির পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে জনপ্রিয় ঘোষণা দিয়ে জনমত জেতার চেষ্টা করছেন। সম্ভাব্য এ প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং জনসমর্থন বজায় রাখতে ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবে জনপ্রিয় ঘোষণা দিচ্ছেন। সম্প্রতি তিনি প্রথমে ঘোষণা দেন প্রতি মার্কিন নাগরিককে ২ হাজার ডলার প্রণোদনা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। এরপর আরো বড় রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রে আয়কর পুরোপুরি শূন্য করা হবে। হঠাৎ এসব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নযোগ্যতা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলছেন। তারা মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আগে নিজের পক্ষে জনমত গড়ে তুলতেই ট্রাম্প এমন একের পর এক মনোগ্রাহী ঘোষণা দিচ্ছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও জানিয়েছেন, ট্যারিফ থেকে অর্জিত রাজস্ব আয় দিয়ে ভবিষ্যতে ফেডারেল আয়করের বিকল্প সম্ভব হতে পারে। থ্যাংকস গিভিং উপলক্ষে সেনা সদস্যদের সঙ্গে এক ভিডিও কলে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন শত শত বিলিয়ন ডলার ট্যারিফ থেকে আয় করছে এবং এর একটি অংশ জনগণের স্বার্থে ব্যবহার করা হবে। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত ২ হাজার ডলারের চেক বিতরণ এবং জাতীয় ঋণ পরিশোধও ট্যারিফ আয়ের মাধ্যমে সম্ভব হতে পারে। ট্রাম্পের দাবি, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ট্যারিফ এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা স্থাপন করছেন এবং এ প্রবণতা আগামী বছরগুলোতে আরো বাড়বে। তিনি বলেন, কয়েক বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আয়কর বড় পরিসরে কমিয়ে দিতে পারবে, এমনকি পুরোপুরি বাতিলও সম্ভব।

তবে অর্থনীতিবিদরা এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। তাদের মতে, বর্তমান ট্যারিফ আয়ের মাধ্যমে আয়কর প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ট্যারিফ থেকে আনুমানিক ২০০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব পায়, অথচ ২০২৪ সালে ফেডারেল আয়কর থেকে এসেছে প্রায় ২ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থনীতিবিদদের মতে, আয়কর পুরোপুরি বাতিল করতে হলে ট্যারিফ রাজস্বকে বর্তমানের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়াতে হবে, যা অর্থনীতির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, অন্যান্য দেশ বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে অবমূল্যায়ন করেছে, কিন্তু তার প্রশাসনের ট্যারিফ নীতি সেই প্রবণতা বদলে দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, শুধু ট্যারিফের ওপর নির্ভর করে বার্ষিক বাজেট পরিচালনা করা স্বল্পমেয়াদে যেমন কঠিন, দীর্ঘমেয়াদে তেমনি অনিশ্চিত। ট্রাম্প বলেন, এক সময় এমন পরিস্থিতি আসবে যখন আমেরিকানদের আর আয়কর দিতে হবে না। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের মধ্যে সন্দেহের জায়গা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে আয়কর থেকে প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলার রাজস্ব আসে আর দেশে বছরে আনুমানিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়। ফলে আয়কর পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে হলে আমদানি পণ্যের ওপর অন্তত ১০০ শতাংশ ট্যারিফ আরোপ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাপোলো গ্লোবাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ টরস্টেন স্লক।

ফিচ রেটিংসের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে গড় কার্যকর ট্যারিফ হার ২২ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয়কর প্রতিস্থাপন করতে হলে ট্যারিফ হার বর্তমানের চার গুণ বাড়াতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এত উচ্চ ট্যারিফ শুধু পণ্যের দাম বাড়াবে না, চাহিদা কমাবে এবং রাজস্ব প্রবাহও কমিয়ে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোম্পানিও উচ্চ ট্যারিফের কারণে উৎপাদন ব্যয়, পরিবহন ব্যয় ও পণ্যের দাম বাড়ার অভিযোগ করেছে।

ট্যাক্স ফাউন্ডেশনের কর নীতি বিশেষজ্ঞ এরিকা ইয়র্ক বলেন, গণিতটাই মিলছে না। ট্যারিফ দিয়ে পুরো আয়কর প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। বরং এতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে। বর্তমানে আরোপিত ট্যারিফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ডলারের রাজস্ব আসে, যা ফেডারেল আয়করের তুলনায় অত্যন্ত কম।

ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি লক্ষ্য হলো উচ্চ ট্যারিফের মাধ্যমে অভ্যন্তরে উৎপাদন বাড়ানো। কিন্তু যদি এর ফলে আমদানি কমে যায়, ট্যারিফ রাজস্বও কমে যাবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ ট্যারিফের কথা উল্লেখ করেছেন, যার কারণে দুই দেশের বাণিজ্য কার্যত স্থবির হয়ে গেছে। এতে ট্যারিফ আরোপ করেও সরকার উল্লেখযোগ্য রাজস্ব পাচ্ছে না। ফেডারেল আয়কর বাতিল করতে হলে কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন, যা এখনো রাজনৈতিকভাবে অচলাবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আইনগত, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক তিন ক্ষেত্রেই বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে।ট্রাম্প জানিয়েছেন, তার প্রশাসন প্রথম ধাপে বছরে ২ লাখ ডলারের কম আয়ের ব্যক্তিদের কর কমানোর পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি তিনি স্বীকার করেছেন, জাতীয় ঋণ পরিশোধেও ট্যারিফ আয়ের ব্যবহার হবে। তিনি বলেছেন, বহু বছরের ঋণ আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমরা সেটা ট্যারিফ দিয়েই সামাল দেবো।

ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা তার দ্বিতীয় মেয়াদের অন্যতম বড় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি হলেও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন যে ট্যারিফ আয়ের মাধ্যমে পুরো আয়কর প্রতিস্থাপন করা শুধু কঠিনই নয়, বরং অর্থনীতিকে ব্যাপক ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)