মিনেসোটার মুসলিম সম্প্রদায় আবারও উদ্বেগে পড়েছে সাম্প্রতিক একাধিক মসজিদে হামলা ও ক্রমবর্ধমান ইসলামবিরোধী বক্তব্যের কারণে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে মিনিয়াপোলিসের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত মসজিদ উসমান ইসলামিক সেন্টারে, যেখানে ২৩ নভেম্বর রবিবার রাত প্রায় ১০টা ৩২ মিনিটে দুর্বৃত্তরা পেছনের একটি লক করা দরজা ভেঙে ভবনে প্রবেশ করে। নিরাপত্তা ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়-দুই মুখোশধারী ব্যক্তি মসজিদে ঢোকে এবং তৃতীয় ব্যক্তি বাইরে একটি গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি করছিল। মসজিদের ভেতরে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ঘটনাটি স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
এই হামলার পেছনে সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে মুসলিম ও সোমালি অভিবাসী সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বাড়তে থাকা হুমকি ও ঘৃণামূলক বক্তব্যকে দায়ী করছে অনেকেই। বিশেষ করে সোমালি টিপিএস প্রোগ্রাম বাতিলের ঘোষণার পর এসব হুমকি আরও তীব্র হয়েছে। মিনেসোটার কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স জানিয়েছে, অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি লিন্ডেল অ্যাভিনিউইর্থে অবস্থিত মসজিদে ঢোকে এবং অল্প সময় পর সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। তারা কোনো কিছু চুরি বা নষ্ট না করলেও জুতাসহ নামাজের ঘরে প্রবেশ করা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি স্পষ্ট অশ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। মিনিয়াপোলিস পুলিশ জানিয়েছে, এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
গত তিন বছরে মিনেসোটাজুড়ে ৪০টিরও বেশি হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মসজিদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে, যার ক্ষতির পরিমাণ ৩০ লাখ ডলারেরও বেশি। মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। মাত্র কয়েক বছরে ছয়টি পৃথক অগ্নিসংযোগের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে তিনটি ছিল গুরুতর। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক জেলানি হুসেইন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সোমালি শরণার্থীদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন পক্ষের মন্তব্যের পর ইসলামবিরোধী অনলাইন ঘৃণা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
মসজিদ নেতৃবৃন্দ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা জোরদার, ধর্মীয় সম্প্রদায়কে সহায়তা এবং জরুরি প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিছু ঘটনায় মানসিক স্বাস্থ্য বা নেশাজনিত কারণও জড়িত থাকতে পারে, যদিও ঘৃণাজনিত অপরাধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে, হেনেপিন কাউন্টি অ্যাটর্নির অফিস আল হিকমা মসজিদে সাম্প্রতিক আরেকটি চুরির মামলার তদন্ত পুলিশে ফেরত পাঠিয়েছে, যাতে আরো তথ্য সংগ্রহ করা যায়। মিনেসোটার মুসলিম সম্প্রদায় বলছে, দীর্ঘ তিন বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ইসলামী উপাসনালয়ে হামলার লক্ষ্যবস্তু হওয়ায় তারা এখন চরম অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।