পৃথিবীর ৫৭টি মুসলিম দেশের মধ্যে ৪৬টি দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হচ্ছে। নবী করিমের (সা.) সৃষ্টির সময় শয়তানরা অখুশি হয়েছিল, আর এখন ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার সময় সেই শয়তানের অনুসারীরাই অখুশি হচ্ছে। মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে বিভেদ এবং ফেতনার সৃষ্টি করছে। আর সেসব নব্য জাহেলিয়াতরাই বলছে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা বিদয়াত। সুতরাং এদের কাছ থেকে দূরে থাকবেন। আর দোয়া করবেন আল্লাহ যেন তাদের হেদয়াত করে। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নবান্ন পার্টি হলে জ্যাকশন হাইটস বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন এনওয়াই আয়োজিত পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর অনুষ্ঠানে আলেমরা এসব কথা বলেন। আজিমুশ্বান ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলে বক্তারা বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জীবনের আলোকে নিজেদের গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তার আদর্শ মেনে চললে সমগ্র মানব জাতি যেমন ভালো থাকবে, তেমনি পৃথিবীও সুন্দর হবে। বক্তারা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর মুহাম্মদ (সা.) শান্তির দূত।
নিউইয়র্কের উডসাইডস্থ আহলুল বায়ত মিশন মসজিদের খতিব ও ইমাম এবং ইন্টারন্যাশনাল ইমাম কাউন্সিল, নর্থ আমেরিকার আহ্বায়ক মুফতি ড. সাইয়্যেদ মুতাওয়াক্কিল রব্বানী (বদরপুরী)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর মুফতি ড. আল্লামা কফিল উদ্দিন সরকার সালেহী। গেস্ট অব অনার ছিলেন কারি শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আজহারী এবং প্রধান বক্তা ছিলেন ব্রুকলিনের বেলাল মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সৈয়দ আনসারুল করিম আজহারী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মূলধারার রাজনীতিক অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ এমদাদুল হক, মোহাম্মদী সেন্টারের পরিচালক ইমাম কাজী কাইয়্যুম, আমেরিকায় মদিনার আলোর সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহিদ টুপন, কমিউনিটি লিডার ও রাজনীতিক মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আতিকুর রহমান। যৌথভাবে মাহফিল পরিচালনা করেন জেবিবিএর সভাপতি গিয়াস আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান। মাহফিলে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন জার্মানির বার্লিনের বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইমাম ও খতিব আলহাজ মাওলানা হেলাল উদ্দিন সিরাজী, নিউইয়র্কের পার্কচেস্টার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের রাশীদ, এস্টোরিয়ার আল আমীন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন, জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হেলাল খান, আশা হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট আকাশ রহমান, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর নূরুল আজিম, লায়ন্স ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহসান হাবিব, জেবিবিএর সহ-সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ। মাহফিলের শুরুত পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং নাশিদ পরিবেশন করেন কারি মুহাম্মদ হাসান বিন খুরশীদ, হাফেজ মুহাম্মদ টিপু রাহমান, কারি শাহজাদা সাইয়্যেদ মসতানজিদ বিল্লাহ রাব্বানী, ওমর ফারুক, সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুর রহিম।
মুফতি ডক্টর আল্লামা কফিল উদ্দিন সরকার সালেহীন বলেন, এই বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের মধ্যে ৪৬টি দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ১৬টি দেশে ফতোয়া বোর্ড সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের পূর্বে এই বিশ্ব ছিল অন্ধকারে। সেটা ছিল আমলে জাহেলিয়াতের যুগ। সেই যুগে মধ্যপ্রাচ্যে পিতা তার কন্যাকে জীবন্ত কবর দিতো। অথচ ইসলাম ধর্মেই নারীকে সর্বাধিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালা রুহের জগত থেকে নবী (সা.) আগমনের কথা বলেন, সব নবীকেই আল্লাহ বলেছেন। তিনি বলেন, সৃষ্টির শুরু নবী করিম (সা.)। আল্লাহপাক নিজেই নবীর প্রশংসা করেছেন। সুতরাং আমাদের প্রশংসা করতে অসুবিধা কোথায়? তিনি বলেন, দেড়শ বছর আগে থেকে মিলাদুন্নবী পালন করা হতো। নবী করিম (সা.) জন্ম নিয়ে পবিত্র কোরআনে ১৮টি আয়াত আছে। এই বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ধর্ম। তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। তিনি আরো বলেন, নবী করিম (সা.)-এর সামনে নবীর মিলাদ করা হয়। আমরা যে নবীর জীবনী নিয়ে আলোচনা করছি এটাই ঈদে মিলাদুন্নবী।
মুফতি সৈয়দ আনসারুল করিম আজহারি বলেন, বর্তমান সময়ে অনেকগুলো দরুদের ভিড়ে আসল দরুদ হারিয়ে যাচ্ছে বা ফোকাস হয় না। দরুদ নামাজের অংশ। মিলাদুন্নবীই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.)কে জানুন এবং তা বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, মিলাদুন্নবীর সব কিছুর আগে। এখন একশ্রেডুর আলেম নামধারী লোক বেরিয়েছে তারা বলছে মিলাদুন্নবী বেদয়াত। তারা মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে বিভ্রান্তি এবং বিভেদ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করছে। এরাই নব্য জাহেলিয়াত। এরাই বলছে মিলাদুন্নবী বেদয়াত। আহলে সুন্নার নামে বিভ্রান্তি করছে। মিলাদের কথা বললে, এদের গা যেন জ্বলে। তিনি বলেন, মিলাদুন্নবী আল্লাহ প্রদত্ত। একমাত্র মিলাদুন্নবীই এই বিভেদ দূর করতে পারে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকেও ঢেলে সাজাতে হবে।
আলহাজ মাওলানা হেলাল উদ্দিন সিরাজি বলেন, প্রিয় হজরত মুহাম্মদ (সা.) গোটা বিশ্বের জন্য রহমত। তার জন্মদিন পালন করা খুশির বিষয়, তারা শয়তানের অনুসারী তারা খুশি নয়।
মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের রশীদ বলেন, আল্লাহ নিজে রাসুলের প্রশংসা করেছেন।
মাওলানা কাজী কায়্যূম ঈদে মিলাদুন্নবীতে ছুটির দাবি তুলে এটির পাশে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। ২০১২ সাল থেকেই আমরা এই কার্যক্রম শুরু করেছি এবং নিউইয়র্কে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা শুরু করেছি।
মাওলানা কাওসার আহমেদ বলেন, নবীর জন্মের সময় শয়তানরা খুশি হতে পারেনি, আর তাদের অনুসারীরা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনে খুশি হতে পারছে না। অনুষ্ঠানে নারীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিল।