কেমন হলো নতুন সরকার


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 17-01-2024

কেমন হলো নতুন সরকার

সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা মহলের ভিন্নমত আছে। অংশগ্রহণমূলক না হলেও নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ধারাবাহিক চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ সরকার। নির্বাচনে ৬২ আসনে জয়ী অধিকাংশ স্বতন্ত্র সদস্য রাজনৈতিক পরিচয়ে আওয়ামী লীগের। মন্ত্রিসভা নির্বাচনে পররাষ্ট্র, অর্থ, পরিকল্পনা, কৃষি, বাণিজ্য, শিক্ষা, ভূমি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য, প্রবাসী কল্যাণ, তথ্য মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে অন্যতম সংকটাপন্ন জ্বালানি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাম-লীদের অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

অনেকেই প্রশ্ন করেন, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে দাবিদার বাংলাদেশে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়ে কেবিনেট গঠনের পর কেন মূলত আমলাদের নিয়ে উপদেষ্টা প্রয়োজন হয়। এসব উপদেষ্টাদের কারণে দ্বৈত শাসনের সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। বাস্তব অবস্থায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এককভাবে প্রায় সব সংকট মোকাবিলা করে থাকেন। অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হয়। সেই ক্ষেত্রে মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে। 

নানা বৈষয়িক কারণে বিশ্বজোড়া এখন অর্থনৈতিক সংকট। ভূরাজনৈতিক কারণে বিশ্ব এখন দ্বিধা এমনকি ত্রিধাবিভক্ত। বিগত সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পশ্চিম ইউরোপ, আরব দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সংযোগ রাখতে পারে নি। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নতজানু ছিল। তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন অপরিহার্য ছিল। তাই বলে যাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি কিভাবে এই পরিস্থিতির উন্নয়ন করবেন সন্দেহ আছে। পরিবর্তন হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। নানা অব্যবস্থাপনায় অর্থনৈতিক অবকাঠামো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ব্যাংক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারল্য সংকট। নানা কারণে মুদ্রাস্ফীতি ঘটছে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হয়ে গেছে। সরকার ঘনিষ্ঠ চিহ্নিত মহল অবাধে ঋণ গ্রহণ করে ব্যাংকগুলোকে অর্থ কূন্য করে ফেলেছে। মুদ্রানীতি পুরোপুরি ব্যর্থ। পরিবর্তিত অর্থমন্ত্রী একজন ডাকসাইটে আমলা। সফল আমলা, সফল কূটনীতিক হিসাবে সুনাম আছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট সব মহলের সহায়তায় তিনি অর্থখাতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন। নতুন টার্মে সরকারের সাফল্য নির্ভর করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাফল্যের ওপরে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীকে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে উপমন্ত্রী হিসেবে একই মন্ত্রণলায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় প্রধানমন্ত্রী তার ওপর আস্থা রেখেছেন। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা, গণশিক্ষার প্রসার ঘটলেও শিক্ষার গুণমান প্রসার ঘটেনি। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা আধুনিক শিক্ষার ভিত্তি গড়ে দিচ্ছে না। হয়তো শিক্ষার হার বাড়ছে কিন্তু শিক্ষার মান ব্যবহারিক জীবনে নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করছে না। দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলেও এমনকি অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও রিসার্চ সুবিধা নেই। দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যায়লোতেও শিক্ষার মান নিম্নমুখী। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম আধুনিকায়নের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। নতুন শিক্ষানীতি নিয়েও নানা বিতর্ক আছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আধুনিক এবং বিজ্ঞানসম্মত না হলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ভিশন বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে। 

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানি রফতানি ক্ষেত্রে ভারসাম্য অর্জন, রফতানি বহুমুখী করুন, দেশীয় বাজার থেকে সিন্ডিকেট ধ্বংস। এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আশা করি নতুন মন্ত্রী সবার সঙ্গে পরামর্শ করে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন। 

বাংলাদেশ বিগত দিনে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, অনেকগুলো বাস্তবায়ন পর্যায়ে আছে। বেশকিছু প্রকল্প প্রণয়নকালে লাগসই পূর্ব সমীক্ষা না করায় বাস্তবায়ন পর্যায়ে অনেক সংকট হয়েছে, বাস্তবায়ন কাজও সঠিকভাবে তদারকি হয়নি। কিছু কিছু প্রকল্প গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে। সঠিক কারণেই পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। দক্ষ সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকরকর্তা মেজর জেনারেল আব্দুস সালাম এই ক্ষেত্রে শক্ত হাতে দায়িত্ব পালন করবেন আশা করি। আমি পরিবেশ এবং বন মন্ত্রণালয়ে দক্ষ সাবের চৌধুরীর পদায়নকেও স্বাগত জানাই। বেসামরিক বিমান চলাচল এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ফারুক খানের নিয়োগকেও যথাযথ মনে করি। 

আমি মনে করি, বর্তমান মুহূর্তে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ খাত। ২০০৮-২০২৪ বিদ্যুৎখাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক প্রসার ঘটলেও জ্বালানি বিদ্যুৎখাতের উন্নয়ন সুষম বা সুসমন্বিত হয়নি। বিশেষ করে বাংলাদেশ নিজেদের প্রাথমিক জ্বালানি কয়লা, গ্যাস আহরণ এবং উন্নয়নে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়ে জ্বালানি থাকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে আমদানিনির্ভর প্রাথমিক জ্বালানির দিকে ঠেলে দিয়েছে। সরকার পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১০ বা ২০১৬, গ্যাস সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন করেনি। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন সীমিত সময়ের জন্য করে পুরো ১৫ বছর জারি রেখেছে। ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেটকে অযাচিত সুবিধা দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা, বিপিডিবি, বিপিসিকে পঙ্গু করে ফেলেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ রিজার্ভ মার্জিন থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সংকট এবং সঞ্চালন, বিতরণ সংকটের কারণে চাহিদা মোতাবেক বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। ডলার এবং টাকার সংকটে জ্বালানি কিনতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এ সেক্টরে মন্ত্রণালয়ের মূল দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী ছাড়াও একজন উপদেষ্টা, মাঝে মুখ্য সচিব নাক গলান, প্রতিমন্ত্রী আছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলো আমলানির্ভর। মাটির নিচে কয়লা সম্পদ, স্থলে।

জলে আছে গ্যাস, তেল আবিষ্কৃত, অনাবিষ্কৃত। অস্থির বিশ্ব জ্বালানি বাজার থেকে জ্বালানি কেনার সামর্থ সীমিত। জ্বালানি, বিদ্যুৎখাত জাতির পিতার স্বনির্ভর দর্শন থেকে সরে গাছে। কারিগরি নির্ভরতা থেকে আমলা নির্ভরতা মূল কারণ বলে অনেকে মনে করে। 

বর্তমান টার্মে জ্বালানি সঙ্গত মোকাবিলা সরকারের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। জানিনা সরকার জ্বালানি সেক্টর অপরিবর্তিত রেখে সঠিক কাজটি করলো কি না। আশা করি, ১৫ বছর একাধারে ক্ষমতায় থেকে সরকার শিক্ষা নিয়েছে। অনাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার সফল হোক সে প্রত্যাশা এখন সবার।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)