সেলিব্রেটি খায়েশ


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 07-02-2024

সেলিব্রেটি খায়েশ

সেলিব্রেটি হওয়ার বিড়ম্বনা ব্যাপক! সুস্থ্য ও স্বাভাবিক লাইফে যেতে পারেন না তারা প্রায়শই। চাইলেই বাংলাদেশের ঐতিহ্য লুঙ্গি,শাড়ী পরেই যেখানে সেখানে যেতে পারেন না, আবার সাধারণ অনুষ্ঠানাদিতে গেলে ভক্তকূলের অনুরোধ ও তাদের চাওয়া পাওয়ায় প্রচণ্ড বিরক্ত হতে হয়। কেউ রূপালী পর্দার স্বপ্নের মানুষ, কেউ বা মাঠে ময়দানের হিরো। ফলে এদেরকে বাস্তবতার আলোতে দেখা পেলে মানুষ একটু চিমটি (!) কেটে দেখতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শতভাগ সেলিব্রেটিরা সাধারণ মানুষের ওইরকম ভালবাসা, ভালবাসা এক মুহূর্তের জন্যও সহ্য করতে পারেন না। ভক্তকূলের অসহ্য জ্বালাতন প্রচণ্ডরকম পীড়া দেয় তাদের। 

এ জন্যই অনেক সেলিব্রেটি বডি গার্ড বা সিকিউরিটি সাথে রাখেন। সেটা এক বা একাধিকও। এরা তাকে প্রাণনাশের মত কঠিন কোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করবেন ঠিক সেটা নয়। ভক্তকূলের বিরক্তকর ঝামেলা থেকে রেহাই দিতেই ওই ব্যবস্থা। এটা যুগ যুগ ধরেই এমনটা হয়ে আসছে। কেউ কেউ চিন্তা করেন ক্যারিয়ারের অন্তিমলগ্নের আগেই বিদেশে যেয়ে স্যাটেল হয়ে যাওয়া। তাদের দেশে সাধারণ মানুষের কবল থেকে মুক্ত থাকা যাবে, সাচ্ছন্দে চলাফেরাও সম্ভব। করছেনও বেশিরভাগ সচেতন সেলিব্রেটি। কেউ আমেরিকা, কেউ কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপে পাড়ি জমান। 

কিন্তু সেসব সেলিব্রেটির জীবনের কিছু একটা সময় বের করে সেটা ব্যয় করতে চান রাজনীতিতে। তবে এটা যে জনগণের খেদমতের জন্য ঠিক এমনটা নয়। অনেকেই একজন সংসদ সদস্য হলে তার যে একটা প্রটকল, নামধাম সেটা সারাজীবন যাতে ভোগ করতে পারেন সে জন্যই নতুন করে রাজনীতিবিদ হওয়ার খায়েশ দেখান। বাস্তবে সেই যে ভক্তকূল বা সাধারণ মানুষ তাদের নেতা হতে চান। তাদের নেতৃত্ব দিতে চান। তাদের হাতে হাত রাখতে চান। তাদের অসহায় সময় পাশে দাঁড়াতে চান। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে চান। কিন্তু ক্যারিয়ারের পুরা সময় অনেকটাই বক্সবন্দি থেকেছে যারা, জনসমৃক্ততার ধারকাছ দিয়েও যায়নি যারা তাদের জননেতা হয়ে ওইসব কাজ করা কি সম্ভবপর হবে? নাকি খায়েশ পূরন। স্বার্থ উদ্ধার। আর এতে করে রাজনীতির মাঠের অনেকের নেতা হওয়ার খায়েশ অর্থাৎ সাধারণ রাজনীতিবিদদের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন এসব সেলিব্রেটিরা!

অথচ একেকটি পদ পদবী লাভে সাধারণ নেতাকর্মীদের বহু পরীক্ষা নীরিক্ষা দিয়ে আসতে হয় ওই পর্যায়ে। যেমনটা ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনেও আন্দলোন, অর্থ খরচা করে কর্মীবাহিনী তৈরি, মানুষের সুখ-দুঃখে তাদের পাশে থাকা, এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখা, আর্থ সামাজিক কর্মের সঙ্গে জড়িত থাকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের নয়নের মনি হিসেবে কৃতিত্ব লাভের পর বড় কোনো পদের জন্য চিন্তামগ্ন হওয়া। যেমনটা সংসদ সদস্য। যে পদে যেতে বহু লড়াই, বহু পথপরিক্রমা পার হয়েই ওই স্থানে যেতে হয়। কিন্তু ইদানিং কতিপয় সেলিব্রেটি সহজেই সরাসরি সংসদ সদস্য হওয়ার দৌড়ে নেমে পড়ছেন। অনেকটা এক হাজার কিলোমিটার ম্যারাথন দৌড়ের সবটা না দৌড়ে ফিনিশিং টাচের একটু আগে নেমে রঙিন ফিনিশিং টাচের ফিতা স্পর্শ করে ফেলার মত। সারাজীবন পলিটিক্স সে বিষয় থেকে দূরে থেকে এখন এসেছেন তারা রাজনীতিবিদ হতে। সংসদে আইনপ্রণেতা হতে। এটা কিভাবে সম্ভব? 

নতুবা যেসব চিত্রনায়ক নায়িকা বা খেলোয়াড় বিগত সময়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন তারা কী জনসম্পৃক্ত ছিলেন? শতকরা ৯৫% থাকতেন বাক্সবন্দি। এখন জননেতা বনে গেছেন ম্যারাথন দৌড়ে থাকা অনেক ত্যাগী নেতাদের আশা ভরসা স্বপ্ন সাগরের পানিতে ভাসিয়ে দিয়ে। ত্যাগীরা শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের না পারেন কিছু বলতে, না পারেন সহ্য করতে। এ যেন অসহ্য এক যন্ত্রণা। যে পদের জন্য রাজপথে মার খাওয়া, মামলা মকদ্দমা হজম করন, পুলিশের পিটুনি, প্রতিপক্ষের মাইর, অর্থ খরচ, লেখাপড়া বা ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে ওই পর্যায়ে। তারা বঞ্চিত সেলিব্রেটিদের জন্য।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মাগুড়ায় সাকিব আল হাসান, ঢাকায় নায়ক ফেরদৌস এদের অন্যতম। এছাড়াও এ তালিকায় আরো আছেন, যাদের নাম উচ্চারণ না করলেও পাঠক কর গুণে বলে দিতে পারবেন। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে ওই তালিকা বড় ছিল। আগের সব নির্বাচনেও এ জাতীয় নামগুলো রয়েছে। তবে এ ইতিহাস পূর্বেও ছিল। তবে তাদের অনেকে মাঠের রাজনীতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। মেজর অব: হাফিজ। সেনাবাহিনী, ফুটবল মাঠ মাতিয়ে রাজনীতির মাঠেও সফল। এর বাইরে দেওয়ান শফিউল আলম টুটুলসহ বেশ কয়েকজন সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও আগেও রাজনীতি না করেও এমপি হয়েছেন এমনও আছেন অনেক সেলিব্রেটি। এবার নতুন তালিকা দেখা যাচ্ছে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ক্ষেত্রেও। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। আর প্রথম দিনেই মনোনয়নপত্র কিনেছেন চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তার ও সোহানা সাবা। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পর্যায়ক্রমে তারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এসব অভিনেত্রী। জানা যায়, অপু বিশ্বাস বগুড়ার, নিপুণ আক্তার চট্টগ্রামের, সোহানা সাবা ঢাকার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। 

মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস বলেন, ‘আমি সব সময় জনগণের সঙ্গে ছিলাম। আমি বরাবরই নারীদের উন্নয়ন করতে চাই। সেই জায়গা থেকেই যদি আমাকে সুযোগ করে দেওয়া হয় তাহলে আমি মানুষের জন্য কাজ করব। আপনারা সবাই দোয়া করবেন, আশীর্বাদ করবেন আমি যেন লক্ষ্য পূরণ করতে পারি।’ মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আপনি আশাবাদী কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক বিষয়। তবে আমি প্রত্যাশা করি আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’ 

সোহানা সাবা বলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি শুধুমাত্র আওয়ামী লীগপন্থীই ছিলেন না, বরং অনেক বড় দেশপ্রেমিকও ছিলেন। আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, টানা ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে আছে। সেজন্য আমি অবশ্যই আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে চাই।’ এর আগে রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমে সরাসরি যুক্ত ছিলেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কার্যত আমি সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। তবে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছি। কিন্তু কখনও আমি এভাবে ভাবিনি যে, সরাসরি রাজনীতিতে অংশ নিব। আমার বাবা রাজনীতি করতেন কিন্তু আমি কখনও ভাবিনি আমিও রাজনীতি করব।’ 

জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০টি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র নির্বাচিত ৬২ জন সংসদ সদস্য তাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নিজ দলের এবং স্বতন্ত্রদের মিলে মোট ৪৮ জন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে। বাকি দুটি আসনে নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে জাতীয় পার্টি (জাপা)।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)