ঢাকায় কেন ইসরায়েলের দুই বিমান?


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 17-04-2024

ঢাকায় কেন ইসরায়েলের দুই বিমান?

দেশের প্রায় সর্বত্রই কানাঘুষা! কেন ইসরায়েল থেকে দুই দুটি বিমান ঢাকায় এলো এবং সরাসরি তেল আবিব থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে? কার বিমান কেন এসেছে এটা নিয়ে গভীরে যেতে চায় না অনেকেই। সবারই জানতে ইচ্ছে যে, বিষয় সেটা হলো ইসরায়েলের বিমান কি না? তেল আবিব থেকে কী নিয়ে এলো? কী নিয়ে গেল। কেনই-বা এলো। 

বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ কেন গোটা বিশ্বজুড়েই ইসরায়েল, গাজা, ফিলিস্তিন, হামাস এসব নামে তটস্ত। গত ৬ মাসের অধিক সময় ধরে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে নারী শিশুসহ বেসমারিক লোকদের হত্যা করছে ইসরায়েলিরা। ধ্বংসস্তূপে পরিণত বেসামরিক মানুষের বাড়িঘর। মৃত্যুর সংখ্যা ৩৫ হাজারের মতো। হামলা এখনো অব্যাহত। ফিলিস্তিনের মুসলামানদের ওপর এমন নির্যাতন নিয়ে মুসলিম বিশ্ব খুবই উদ্বিগ্ন। এমন এক মুহূর্তে তেল আবিব থেকে দুটি বিমান ঢাকায় একটু বিস্মিত হওয়ারই কথা।

ইতিমধ্যে বিষয়টি আমলেও নেওয়া হয়েছে। কেননা ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব থেকে দুটি সরাসরি ফ্লাইটের ঢাকায় অবতরণ নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ধরনের আলোচনা চলছে, তাতে ‘বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বেবিচক। এর একটা ব্যাখ্যাও তারা দিয়েছে। 

কী ঘটেছিল 

ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে একটি ফ্লাইট ঈদের দিন (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে অবতরণ করেছে। ইসরায়েল থেকে কেন সরাসরি ফ্লাইটটি ঢাকায় এলো, এই প্রশ্ন সবার মনে। ফ্লাইটের অবতরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। 

বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলের তেল আবিব থেকে যে ফ্লাইট এসেছিল, সেটি অপারেট করেছে ন্যাশনাল এয়ারলাইনস। বোয়িং ৭৪৭-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি তেল আবিব থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টায় উড়ে ঢাকায় আসে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি মহল বিষয়টি নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন, তারা একে ‘ইসারয়েলি ফ্লাইট’ বললেও আসলে উড়োজাহাজ দুটি ছিল যুক্তরষ্ট্রের একটি এয়ারলাইনসের, ইসরায়েলি কোনো কোম্পানির নয়। ইসরায়েল থেকে কোনো কার্গোও আসেনি ওই উড়োজাহাজে।

এর পরপরই গত ১৩ এপ্রিল শনিবার এক বিবৃতিতে বেবিচক বলেছে, ‘এ ধরনের বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশনা অনাকাঙ্ক্ষিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে বিবেচ্য। এ ধরনের সংবাদ পরিবেশনা হতে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হলো।’ 

আসলে ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ স্বীকৃতিই দেয়নি ইসরায়েলকে। তাছাড়া ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার প্রশ্নে বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামেও সরব। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে হাজারো ফিলিস্তিনির মৃত্যুকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে বারবার আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চাওয়া হচ্ছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে তেল আবিব থেকে আসা দুটি উড়োজাহাজের ঢাকায় অবতরণের বিষয়টি একাধারে কৌতুহল ও নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। 

কখন নেমেছিল ফ্লাইট দুটি 

বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ এপ্রিল একটি উড়োজাহাজ তেল আবিব থেকে এসে সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করে এবং বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়ে সেদিন রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রওনা হয়। দ্বিতীয় উড়োজাহাজটি আসে গত ১১ এপ্রিল, ঈদের দিন। সেদিন সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে ঢাকায় অবতরণ করার পর উড়োজাহাজটি রাত ১২টা ২৯ মিনিটে সেটি কার্গো নিয়ে ঢাকা ছেড়ে যায়। বোয়িং ৭৪৭-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজগুলো কার্গো এয়ারক্রাফট, প্রতিটি প্রায় ১০৮ টন মালামাল বহন করতে পারে। দুটি উড়োজাহাজই যুক্তরাষ্ট্রের বিমান পরিবহন সংস্থা ন্যাশনাল এয়ারলাইনসের এবং সেখানেই নিবন্ধিত। ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করা ন্যাশনাল এয়ারলাইনস অন-ডিমান্ড কার্গো এবং চার্টার্ড যাত্রীদের জন্য ফ্লাইট পরিচালনা করে। 

বেবিচকের বিবৃতি 

বেবিচকের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। বিমান চলাচল চুক্তি অনুযায়ী কার্গো ফ্লাইট দুটি ঢাকা এসেছিল। ঢাকা থেকে তৈরি পোশাক নিয়ে ফ্লাইট দুটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ এবং ইউরোপের একটি গন্তব্যে গিয়েছে। ‘বাংলাদেশ ও ইসরায়েলের মধ্যে কোনো বিমান চলাচল চুক্তি নেই এবং ইসরায়েলের কোনো বিমান বাংলাদেশে অবতরণের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’

উল্লেখ্য, কিছুদিন আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের পাসপোর্টে সব দেশ ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট বৈধ শুধু ইসরায়েল ছাড়া এমন একটি লেখা থাকলেও সেটা সম্প্রতি তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে। এরপরও ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। 

আসলে কী 

এর আগেও বাংলাদেশে ন্যাশনাল এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এসেছিল। বিভিন্ন সময়ে কার্গো পণ্য নিতে এয়ারলাইনসটির ফ্লাইট বাংলাদেশ আসে। মূলত, ইসরায়েলে পণ্য নামিয়ে খালি বিমান এসেছিল বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে, যা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে নিয়ে যাবে এয়ারলাইনসটি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের গাজায় হামলার কারণে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতিদের আক্রমণ এখন সমুদ্রে। এতে করে বিভিন্ন দেশের পণ্য পরিবহনে নানা সংকট তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েক মাস যাবৎ বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন পণ্যের শিপমেন্ট এলোমেলো। ফলে বাধ্য হয়ে উড়োজাহাজের কার্গো ব্যবহার করছে অনেক বায়ার। সে সূত্র ধরে এমন পণ্য ওই উড়োজাহাজে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর এটা নতুন কিছু নয়। আগেও হয়েছে, ইদানীং এটা হচ্ছে অহরহ। তাছাড়া জানা গেছে, ন্যাশনাল এয়ারলাইনসের ফ্লাইট মূলত ফেরি ফ্লাইট ছিল। আমেরিকান এই এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটি আমেরিকায় নিবন্ধিত। ইসরায়েল থেকে ফ্লাইটটি এলেও কোনো পণ্য বা যাত্রী ঢাকায় আসেনি। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক নিতে এসেছিল কার্গো ফ্লাইটটি। 

তাছাড়া এ সংক্রান্ত চুক্তিও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। এর আওতায় দুই দেশ তাদের দুই দেশেই পণ্য পরিবহন করতে পারবে। তবে সমস্যা হয়েছে উড়োজাহাজ সরাসরি তেল আবিব থেকে আসার কারণে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য তেল আবিব খালাস করে সে বিমান পণ্য পরিবহনে ঢাকায় এসেছে, এখানে অন্যায় কিছু নেই। তবুও সন্দেহের দোলাচল। ইসরায়েল কী কিছু পাঠালো কি না বাংলাদেশে? হইচই হচ্ছে এ কারণেই।

তবে অনেকেই মনে করছেন ওই উড়োজাহাজ চলে যাওয়ার পর সংবাদ বেরিয়েছে। এমনটা তো হতে পারে আরো পরেও অনুসন্ধান চালিয়ে আসলেই কী কারণে ওই দুই ফ্লাইটের আগমন ঘটেছিল সেটা উদঘাটিত হয়েছে! 


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)