জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি সমর্থন না করলেও জ্ঞানচর্চায় তাদের কর্মপদ্ধতির প্রশংসা করলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, আমি জামায়াতে ইসলামের রাজনীতি সমর্থন করি না। গত ২ জুন রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে জিয়াউর রহমানের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানে জামায়াত ইসলামীর প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এরকম মন্তব্য করলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু স্লোগান দিয়ে রাজনীতি করলে হবে না, জেনেশুনে রাজনীতি করতে হবে। আমরা তো আসলে দুঃখজনকভাবে হলেও সত্য যে, আপনারা অন্য দলগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখবেন, আমি রেফারেন্সলি বলতে চাই, আমি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি সমর্থন করি না। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর যে কৌশল তাদের রাজনৈতিক যে প্রক্রিয়া তা অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত। ঠিক কমিউনিস্ট পার্টির মতো অনেকটাই-খেয়াল করে দেখবেন।’ এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তাদের (জামায়াত) স্টাডি সেল আছে, তাদের যে ছাত্রশিবির আছে তাদেরও প্রত্যেকটার সেল আছে। তাদের লেখাপড়া করতে হয়, বই পড়তে হয়, সেই বই পড়ে তাদের উত্তর দিতে হয়। সেটার জন্য তারা নিজেরা পড়ে, তারা পত্রিকা প্রকাশ করে, এগুলোর চর্চা যদি না থাকে, জ্ঞানের চর্চা ছাড়া, জ্ঞান ছাড়া আপনি কখনো সাকসেস অর্জন করতে পারবেন না।
‘সিপিবিসহ সমাজতন্ত্রীদের প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান যখন দায়িত্ব পেলেন, তখন তার প্রথম দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। সেজন্য তিনি গণতান্ত্রিক ইনস্টিটিউট ডেভেলপ করতে থাকলেন, বহু ইতিহাস-না পড়লে এগুলো জানতে পারবেন না। তিনি প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে কথা বলেছেন, ন্যাপের সঙ্গে বলেছেন, কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী তখন ছিল না, ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগের সঙ্গে কথা বলেছেন, মুসলিম লীগসহ অন্য দলের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার সঙ্গে কথা বলে সবার একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, আসলে সে (জিয়াউর রহমান) একজন দেশপ্রেমিক, সে কাজ করতে চায়, তাকে দিয়ে কাজ হবে। তিনি বলেন, শুনলে আপনারা অবাক হবেন যে, কমিউনিস্ট পার্টির মতো পার্টি যারা সব সময়ই সামরিক ব্যবস্থাকে সহ্য করতে পারে না, যারা সবচেয়ে ক্রিটিক ছিল সামরিক অভ্যুত্থানের, তারা প্রেসিডেন্ট জিয়ার ১৯ দফাকে সমর্থন দিয়ে দিলেন, মোজাফফর ন্যাপ তারা সমর্থন দিলো।
জিয়াউর রহমানের ওপর একটি লেখা বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সংবিধানে যখন ‘বিসমিল্লাহ’ সংযোজন করা হলো, প্রফেসর মোজাফফর আহমদ বলেছেন, অসুবিধাটা কোথায়। বিসমিল্লাহ দিয়ে যদি কাজ শুরু করা যায়, অসুবিধাটা কোথায়? বিসমিল্লাহ বলে যদি আমি ভালো কাজ করতে পারি, তাহলে সমস্যাটা কোথায়? মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আর আমি যদি সোশ্যালিজমের সামনে বিসমিল্লাহ বসাই, আমার সমস্যা কোথায়? এভাবেই বামপন্থীরা, সমাজতন্ত্রীরা জিয়াউর রহমানের প্রতি আকৃষ্ট হলেন, তারা তাকে সমর্থন দিয়ে দিলেন। এটা অনেকে জানে না যে, ১৯ দফা কর্মসূচিতে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি ও মোজাফফর ন্যাপ সমর্থন দিয়েছে। এগুলো আমাদের জানা দরকার। সেজন্য বলি শুধু চিৎকার চেঁচামেচি করে রাজনীতি হবে না, রাজনীতি করতে হলে আপনাদের জ্ঞানচর্চা করতে হবে।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। এই সংগঠনটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মির্জা ফখরুল বলেন, যে কারণে আমি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনকে অনুরোধ করেছি, আপনারা দয়া করে, আমি অনেক আগেও বারবার বলেছি যে, ইউ আর বিকাম এ থিংক ট্যাংক বিএনপি-বিএনপি হতে যাইয়েন না, থিংক ট্যাংক হন বিএনপির। আপনারা বইপত্র শুধু নয়, আপনারা সেমিনার করেন, আলোচনা সভা করে, ওয়ার্কশপ করে যাতে আমরা জিয়াউর রহমানকে আরো বেশি করে জানতে পারি, ছড়িয়ে দিতে পারি।
জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক শামসুল আলম লিটন ও ডা. আবু নাছের বক্তব্য রাখেন।