ছোট-বড় সব চোর এক পাল্লায় বিচার করা ঠিক নয়


সালেক সুফী , আপডেট করা হয়েছে : 05-06-2024

ছোট-বড় সব চোর এক পাল্লায় বিচার করা ঠিক নয়

সাগর চুরির অভিযোগ নিয়ে বেনজীর আহমেদ পার পেয়ে যাবে নাতো? মিডিয়া এবং সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমনের উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিদ্রা ভেঙে দুর্নীতি দমন কমিশন জেগে ওঠায় প্রাক্তন পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের ব্যাপক দুর্নীতির খতিয়ান সবাইকে বিস্মিত করছে। আলোড়ন সৃষ্টি করেছে জনমনে। ব্যাপক আলোচনা দেশের প্রান্তিক জনপদে।

কিন্তু তদন্ত শুরুর সূচনায় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে নেওয়া এবং পরিবারসহ বিদেশে চলে যাওয়ার খবর প্রমাণ করে সরষের মধ্যে ভূত আছে। দেশের দুটি প্রধান সংস্থার (পুলিশ এবং র‌্যাব) প্রধান হিসেবে আলোচিত, বিতর্কিত চৌকস কর্মকর্তার দুর্নীতি এবং চারিত্রিক স্খলন নিয়ে নানা মুখরোচক খবর দীর্ঘদিন ধরেই বাতাসে ভেসে বেড়াতো। বিনোদন জগতের কয়েকজন মক্ষ্মীরানির সঙ্গে সংযুক্তির বিষয়েও গুজব ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে যথাসময়ে এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন সংস্থাসহ সরকারের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কোনো ভূমিকাই রাখেনি।

এখন যে দুর্নীতি দমন সংস্থা তৎপর হলো, কী জবাব আছে সংস্থাটির প্রাক্তন প্রধানদের? নিশ্চয় বেনজীর আহমেদ একদিন, দুইদিন বা এক মাস, দুই মাসে এতো বিপুল সম্পদের অধিকারী হননি। সরকারের উঁচু পর্যায়ের আশীর্বাদ ছাড়া এধরনের বেপরোয়া প্রতাপে দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান থাকা সম্ভব নয়। 

যাহোক দেরিতে হলেও দুর্নীতির তিমি মাছদের বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠা শুভ লক্ষণ। ধারণা করতে পারি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই নড়েচড়ে বসেছে সরকারের সংস্থাগুলো। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন হলে নেটওয়ার্কে জড়িত আরো অনেক দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্তদের মুখোশ খুলে যাবে। বিশেষত বাংলাদেশ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থপাচারকারী সিন্ডিকেটদের নাম উঠে আসার সম্ভাবনা থাকবে। সৎ প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠনগুলোর উচিত হবে দেশের সাধারণ মানুষের কষ্টের অর্থ চুরি করে সম্পদের পাহাড় গড়ে আবার সুযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা দুর্নীতিবাজ বাংলাদেশিদের সামাজিকভাবে বয়কট করার এবং প্রয়োজনে ওদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগকে সহায়তা করা।

একটি দেশের প্রাক্তন পুলিশপ্রধান বা সেনাপ্রধান বিষয়ে বিলম্বে হলেও তদন্ত শুরু করা সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ লুটেরা, ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান এখন সময়ের দাবি। প্রান্তিকে কান পাতলেই শোনা যায়, বেনজীর-আজিজের মতো প্রভাবশালীদের ধরতে যদি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ, ভূমিদস্যু, লুটেরাদের ধরা যাবে না কেন? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবারই একটা কথা উচ্চারণ করেন-তিনি ভয় পান না কাউকে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশসমূহকে উদ্দেশ্য করেই এমন সাহসী উচ্চারণ তার এটা আর বুঝতে বাকি নেই। তিনি এটাও বলেন, জনগণ চাইলে আমি থাকবো, নতুবা নয় এবং জনগণ চাইছে বলেই আমি ক্ষমতায়। জনগণ আমার সঙ্গে রয়েছে। তার এ জাতীয় কথা তার অবস্থানের দৃঢ়তা ঘোষণা করে। লুটেরা, ব্যাংকের অর্থলুটকারীদের দয়ায় তিনি ক্ষমতায় নেই। ফলে এসব লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকন্যা যদি তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ কার্যকরভাবে শুরু হয়, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হবে। জনপ্রিয়তা বেড়ে যাবে শুধু আওয়ামী লীগেই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও। 

ফলে এমনি মুহূর্তে ছোট চোর, বড় চোরদের একই পাল্লায় বিচার করা সঠিক হবে না। জাল ছিঁড়ে যেন রুই-কাতলারা পালিয়ে না যায়, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। উদ্যোগ নিতে হবে দুদকসহ অন্য সংস্থার লোকদেরও।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)