বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গাদের আরো সহায়তার আহবান


নিজস্ব প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 08-06-2024

বিশ্ববাসীকে রোহিঙ্গাদের আরো সহায়তার আহবান

কারিতাস ইন্টারন্যাশনালিজ এর সেক্রেটারী জেনারেল অ্যালিস্টার ডাটন রোহিঙ্গাদের জন্য শক্তিশালী মানবিক অবস্থান এবং চলমান সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি তিনি বিশ্ববাসীকে তাদের জন্য আরো সহায়তার আহবান জানান।


সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে অ্যালিস্টার ডাটন এসব কথা বলেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেণ।
অ্যালিস্টার ডাটন আরো বলেন, “গত সাত বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যে উদারতা দেখিয়েছে এবং যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, তাতে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত। বিশ্বের নজর যখন অন্য দিকে ধাবিত হয়েছে, তখনও রোহিঙ্গারা এই সব ভুলে যাওয়া শিবিরে টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্।ে কিন্ত বাংলাদেশ সরকার একাই তাদেরকে সহযোগিতা করবে এটা আশা করা উচিত নয়। অন্যান্য দেশগুলিকেও পূর্বের মতো প্রয়োজনীয় তহবিল নিয়ে এই সংকটকালীন সময়ে তাদের পাশে থাকা প্রয়োজন।


অ্যালিস্টার ডাটন কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ দৌজা নয়ন, ইন্টার সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপের প্রিন্সিপাল কোঅর্ডিনেটর, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি ও এনজিও প্লাটফরম প্রতিনিধিদের সাথে এবং কার্ডিনাল মহোদয় ও ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বর্তমান পরিস্থিতি এবং চ্যালেঞ্জ বিষয়ে ক্যাম্পের কর্মী এবং জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (এফডিএমএন) সাথে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের রোহিঙ্গা জনগণকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আজ বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত মানুষদের মধ্যে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোও রয়েছে, যারা কাজ করার কোন অধিকার ছাড়াই প্রান্তিক অব¯’ায় বসবাস করছে। এখন যারা কিশোর-কিশোরী, তারা তাদের জীবনের অর্ধেক সময়ই এই বসতিতে কাটিয়েছে। এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সকলকে আরও কিছু করতে হবে এবং তাদের ভবিষ্যতের সম্ভবনাগুলোও পরিকল্পনায় নিয়ে নিশ্চিত করতে হবে।”


২০১৭ সালে শরণার্থী সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে এই সাড়াদান কার্যক্রমের অর্থায়ন একদম কমে গেছে। তাদের খাদ্য সহায়তার জন্য প্রতি মাসে প্রতি জনের জন্য তহবিল ১০ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে, অন্যান্য খাতের তহবিলও উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক বেশি কমে গেছে এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ১১% হয়েছে। বসবাসের অব¯’ারও অবনতি ঘটছে, কারণ বসবাসের ঘরগুলো, পানি ও স্যানিটেশন সুবিধার ¯’ানগুলো নিয়মিত মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়।


২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের জন্য বাংলাদেশের নেতৃত্বে যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে, এই পরিকল্পনাটি ১.৩৫ মিলিয়ন মানুষকে রোহিঙ্গা এবং আশ্রয়দানকারী কমিউনিটিতে নিরাপদ আশ্রয়, শিক্ষা, পানি ও পয়:নিষ্কাষন, চিকিৎসা সেবা, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা এবং জীবিকা ও অবকাঠামোগত প্রকল্পে সহায়তা করবে। গত বছর সাড়াদান পরিকল্পনায় মাত্র ৬৫% তহবিল সংগৃহিত হয়েছে এবং পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হতে চলেছে।


২০১৭-২০২৩ পর্যন্ত কারিতাস কক্সবাজার এবং ভাসানচরে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দানকারী কমিউনিটির সদস্যদের জন্য জরুরী সহায়তা হিসাবে ৪৫ মিলিয়ন ডলারের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এই সময়ে কারিতাস রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে সাড়া প্রদানে প্রায় এক লক্ষের মতো ব্যক্তিকে সহায়তা প্রদান করেছে যার মধ্যে রয়েছে আশ্রয় সহায়তা, সুরক্ষা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কার্যক্রম, শিক্ষা, পানি, স্যানিটেশন এবং স্বা¯’্যবিধি। কারিতাস ২০২৪ সালে রোহিঙ্গা ও হোষ্ট কমিউনিটির জন্যও ৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।


মিঃ ডাটন বলেন, “গত ছয় বছরে ক্যাম্পে ২০০,০০০ এরও বেশি শিশুর জন্ম হয়েছে। এই শিশুরা কখনই তাদের নিজ দেশ দেখেনি এবং তাদের কোন জাতীয়তা নেই। তারা রাষ্ট্রহীন। এই বিষয়ে নতুন করে আর্ন্তজাতিক মনোযোগ এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনসহ তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য মিয়ানমারের উপর চাপের পাশাপাশি এই অঞ্চল এবং এর বাইরের দেশগুলিকে সমানভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।”
সেক্রেটারী জেনারেল এর বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গাদের জন্য পোপ ফ্রান্সিসের সাম্প্রতিক নবায়নকৃত আবেদনকে প্রতিফলিত করে উদ্বাস্তত্মুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছে। পোপ ফ্রান্সিস ২০১৭ সালে বাংলদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গাদের একটি দলের সাথে দেখা করেছিলেন।


মিঃ ডাটন আরো বলেন, “বাংলাদেশ সরকার, কারিতাস বাংলাদেশ এবং ¯’ানীয় সম্প্রদায় রোহিঙ্গা পরিবারগুলির জন্য মানবতা, সমবেদনা এবং সংহতি দেখিয়েছে যা দেখে আমি গভীরভাবে অনুপ্রাণিত এবং এই অনুপ্রেরণা নিয়েই আমি বাংলাদেশ ত্যাগ করব। এই রোহিঙ্গা পরিবারগুলির জন্য আমাদের মনোযোগ, সহায়তা, ভালোবাসা এবং প্রার্থনা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজন। সম্মিলিতভাবে মানবতার জন্য আমি সকলের নিকট এই আহ¦ান জানাচ্ছি।”



ঢাকায় মিরপুরের আরামবাগে একটি ড্রপ ইন সেন্টার (কারিতাস বাংলাদেশ পরিচালিত পথশিশুদের সহায়তা প্রকল্প) পরিদর্শনের মাধ্যমে মিঃ ডাটনের বাংলাদেশ সফরের কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের সাথে জড়িত পরিবারের সাথে দেখা করতে রজনীগন্ধা বস্তিতেও যান।
সেক্রেটারী জেনারেল গুরুত্বের সাথে জানান যে, বহু বছর ধরেই কারিতাস বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে অভাবী মানুষকে সহায়তা করে যাচ্ছে। এই বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দেশের ১০৫,০০০ এরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই সময়ে কারিতাস বাংলাদেশের কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকেরা কমিউনিটির সাথে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরী এবং খাবার, প্রাথমিক চিকিৎসা সুবিধা, হাইজিন উপকরণ বিতরণের কাজ করেছে।


কারিতাস বাংলাদেশ, কারিতাস ইন্টারন্যাশনালিজের ১৬২ দেশের সদস্যদের মধ্যে একটি এবং অন্যতম কার্যকর সদস্য। অন্যান্য সদস্য সংস্থার মতো, কারিতাস বাংলাদেশ জাতীয় এবং কারিতাস ইন্টারন্যাশনালিজ উভয় কৌশলের সাথে সমন্বিতভাবে তার সাংগঠনিক কৌশলগুলি তৈরি করে।
কারিতাস বাংলাদেশ (সিবি) সামাজিক কল্যাণ এবং সার্বিক মানব উন্নয়নের জন্য ক্যাথলিক বিশপস্ কনফারেন্স অফ বাংলাদেশ (সিবিসিবি) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি অলাভজনক, বাংলাদেশী জাতীয় সংস্থা।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)