শিলিগুড়ি করিডোরে ‘রেললাইন নেটওয়ার্ক’ : বিএনপির উদ্বেগ


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 19-06-2024

শিলিগুড়ি করিডোরে ‘রেললাইন নেটওয়ার্ক’ : বিএনপির উদ্বেগ

বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পণ্য পরিবহনে ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরে ‘রেললাইন নেটওয়ার্ক’ গড়ে তোলার উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। গত ১৮ জুন মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, ২২ কিলোমিটার সংর্কীণ রুট যার উত্তরে নেপাল এবং দক্ষিণে বাংলাদেশ অর্থাৎ শিলিগুড়ি করিডোর যেটিকে চিকেন নেক বলা হয়- যেটিকে বাইপাস করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় রেলপথ বাকি অংশ ভারতের উত্তর-পূর্ব দিকে সংযোগ করা হবে এই ধরনের একটি সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের সামরিক এবং বেসামরিক পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে রেললাইন নেটওয়ার্ক তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের ডামি সরকারের যে প্রধান মন্ত্রী তার অনুমতিক্রমে তার ইচ্ছাধীনে এসব হচ্ছে। এটা উদ্বেগজনক। আমরা এধরণের উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। রিজভী বলেন, প্রতিদিন যেখানে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশীদের জীবন যাচ্ছে, যারা বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার ও মানবতার তোয়াক্কা করে না তারাই যদি বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে সামরিক ও বেসামরিক পরিবহন উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে ধাবিত করে তাহলে বাংলাদেশের দূর্বল সার্বভৌমত্বের বাকি অংশটাও নিঃশেষ হয়ে যাবে... এমনিতেই তো দূর্বল করছে আমাদের সার্বভৌমত্বকে শেখ হাসিনা।যতটুকু আছে সেটাও নিঃশেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, যারা বাংলাশের জনগণের বিরুদ্ধে গণহিংসার মনোভাব পোষণ করে.... ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন বাংলাদেশের মানুষদের উল্লেখ করে যে, উঁইপোকার মতো.... ভারতে যে সমস্ত মুসলমানরা আছে এরা বাংলাদেশের লোক... এদেরকে উঁই পোঁকার সাথে তুলনা করেছেন.... এরকম নানা ধরনের হিংসার প্রতিফলন দেখা যায়। যেখানে গণহিংসা বাংলাদেশের মানুষদের প্রতি সেখানে তারাই (ভারত) যদি আমাদের বুকের ওপর দিয়ে অর্থাৎ শিলিগুড়ি কোরিডর যাকে চিকেন নেক বলে সেখান থেকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত বিভিন্ন সমস্যা আছে... ওদিক দিয়ে যে তেল যায়, পরিবহন যায়... এটাকে সহজতর করা এবং রুটটাকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য তারা এখন বাংলাদেশের একেবারে বুকের ওপর দিয়ে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে। অর্থাৎ যারা বাংলাশের জনগণের বিরুদ্ধে গণহিংসার মনোভাব পোষণ করে তাদের কাছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের চাবি তুলে দেয়া হবে এই স্থাপনার মাধ্যমে। এতে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব দেশের ‘ইন্টিলিজেন্স’ ব্যবস্থা সেটি ভেঙ্গে পড়বে। দেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নতজানু সরকার যদি এই রেললাইন নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন করে তাতে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্বকে ক্রমাগতভাবে মিলিয়ে দেওয়া হবে বলে আমরা মনে করি।

ভারতের বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, বহুত্ববাদী প্রকাশকে অগ্রাহ্য করে ভারত এখন এক শৈলিক রাষ্ট্র। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থানের চেতনায় এক সাম্প্রদায়িক আগ্রাসি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে ভারত। অথচ তাদের সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা সন্নিবেশিত থাকলেও বাস্তবে প্রবল আকারে চর্চিত হয় সাম্প্রদায়িক ভেদ্বুদ্ধি। রাজনৈতিক বহুত্বের কণ্ঠস্বর সেখানে ক্রমান্বয়ে স্থিমিত হচ্ছে। দেশের মানুষ জানে যে, শেখ হাসিনা অনেক গোপন চুক্তি করেছেন, এখন সেই চুক্তিগুলির স্বরুপ প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। আর সেজন্যই বাংলাদেশের বুকের উপর দিয়ে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে দিয়ে শেখ হাসিনা গোপন চুক্তিকেই এখন দিনের আলোতে নিয়ে আসছেন। জনগণের মতামত ছাড়াই শেখ হাসিনা নিজের অহংকে বাস্তবায়িত করতে দেশের ভেতর দিয়ে রেলপথ নির্মানে অনুমোতি দিচ্ছেন শুধুমাত্র নিজের অবৈধ ক্ষমতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। কারণ তিনি ভোটারবিহীন ডামি নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দখলদার সরকার জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিক্রি শুরু করেছে। বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ককে ডামি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূস্বামী-প্রজাভৃত্যের সম্পর্কে পরিণত করেছেন। যারা রক্তোন্মাদগ্রস্ত প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে আমাদের লোক হত্যা করছে। তাদেরকে সব উজাড় করে দেয়ার পরিণতি হবে ভয়াবহ। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণকে হতভাগ্য শৃগালের সান্ত্বনার মতো পরিস্থিতিতে দিনকাটাতে সবক দিচ্ছেন।

‘বাকস্বাধীনতা রুখতেই সাইবার সিকিউরিটি বিধিমালা’

রিজভী বলেন, মানুষের মতপ্রকাশ ও বাক স্বাধীনতায় আরো বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন অভিমত প্রকাশ করেছেন। টিআইবি, আর্টিক্যাল নাইনটিন তারা এই সমস্ত অভিমত ব্যক্ত করছেন। আন্তর্জাতিক অধিকার গ্রুপগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো বাতিলের দাবি জানিয়েছিলো, সেই ধারাগুলো দিয়েই সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। সাইবার বিধিমালার যে আইন করেছেন, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট কেনো? এটা তো একটা চরম ধাপ্পাবাজী। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আরেক নাম হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট। অর্থা একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। শুধু জনগণের সাথে ধাপ্পাবাজী করার জন্য তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটাকে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট হিসেবে গণ্য করেছেন। এখন সেই ধারাগুলো সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিধিমালার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিধিমালায় মতপ্রকাশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার হরণমূলক ধারা সংযোজিত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কফিনে ঢুকে আছে। এখন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের যে বিধিমালা তৈরি করা হচ্ছে এটা পাস হয়ে গেলে এটাই হবে সর্বশেষ পেরেক। সাইবার নিরাপত্তার আইনের কার্যক্রমে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ধারার উল্লেখ নেই। এরফলে ব্যক্তির গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হবে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাসহ ইচ্ছাধীন কার্যক্রম পরিচালনার ঝুঁকি থাকবে বলে অংশীজনেরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এই বিধিমালা অনুমোদিত হলে গোটা দেশটাকেই বাকরুদ্ধ করে তুলবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা চান তার ক্ষমতার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। সেজন্য একের পর ‘এক ড্রাকনিয়ান’ আইন তৈরি করে তিনি একদলীয় শাসনের জয়পতাকা উড্ডিন রাখতে চান। কিন্তু এইসমস্ত গণবিরোধী আইনের দ্বারাই আওয়ামী সরকার নিজেদের কবর নিজেরাই খুঁড়বে। আমরা সরকারের এরকম উদ্যোগে তীব্র নিন্দা জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)