মানুষকে তাদের সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে: মেনন


বিশেষ প্রতিনিধি , আপডেট করা হয়েছে : 26-06-2024

মানুষকে তাদের সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে: মেনন

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের অন্যতম শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, মূল্যস্ফিতির অভিঘাত সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হয়। এর ফলশ্রুতিতে যে বিষয়টি সাধারণ মানুষকে সর্বাপেক্ষা পিড়িত করছে তা হচ্ছে উচ্চ দ্রব্যমূল্য। তিনি বলেন, সংসদে কাউকে কাউকে ঢোক গিলে বলতে শুনেছি মানুষ কষ্টে আছে। মানুষ কষ্টে নেই কেবল, মানুষকে তাদের সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা কমিয়ে দিতে হচ্ছে।

গত ২৪ জুন জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি’র বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। রাশেদ খান মেনন এমপি’র পূর্ণাঙ্গ বক্তব্যের বিশেষ অংশ তুলে ধরা হলো দেশ পত্রিকার পাঠকদের জন্য। 

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, জন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল বর্তমান সময়ের জরুরি কর্তব্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বাজেটে কোন কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহারের কথা বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবনা তার থেকে যোজন যোজন দূরে, সাংঘর্ষিক। মেনন বলেন, অর্থমন্ত্রী এই বাস্তবতার আলোকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির ওপর কিছু শুল্ক ছাড় দিয়েছেন। এটা ইতিবাচক। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় এর প্রভাব বাজারে পড়বে না। সরকার নিজেই স্বীকার করেন বাজার সিন্ডিকেট এর জন্য দায়ী। কিন্তু সেই সিন্ডিকেট ভাঙার, তাদের বিচারের আওতায় আনার কোন ব্যবস্থা নেই। 

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি দেশের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বিএনপি আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। আমি সে সময় বিভিন্ন লেখায় দেখিয়েছিলাম দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলেই আমাদের প্রবৃদ্ধি ২.৫ ভাগ বৃদ্ধি পেত। বিএনপি আমলের দুর্নীতির বিশ্ব সূচকে আমাদের সেই কলংক দূর হলেও ঐ সূচকে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সম্প্রতি যে চিত্র বেরিয়ে আসছে। তা দেশের ভাবমূর্তি কেবল নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি করছে। এ কথা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে সাবেক পুলিশ প্রধান ও সেনা প্রধানের দুর্নীতির চিত্র হিমশৈলের ক্ষুদ্র উপরিভাগ মাত্র। এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। 

আমি জানি উন্নয়নের বেদনা আছে। সেই বেদনা যদি চোখের সামনে দেশের সম্পদ লুট করার কারণে হয় তবে সেটা গ্রহণ করা যায় না। ঐ লুটের টাকাকে যখন সাদা করার জন্য সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের চেয়ে অর্ধেক কর দিয়ে সাদা করার প্রস্তাব করা হয় তখন সেটা সততার জন্য তিরস্কার ও অসততার জন্য পুরস্কারের শামিল হয়ে দাঁড়ায়। এ সম্পর্কে যে সকল যুক্তি দেয়া হচ্ছে তা কেবল আসার নয়, এ প্রসঙ্গে সরকারের অতীত অবস্থানের বিপরীত। খালেদা জিয়ার জন্য যেটা অনৈতিক, বর্তমানেও সেটা অনৈতিক। আশা করি অর্থমন্ত্রী এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করে সংসদকে এর দায়ভার থেকে রেহাই দেবেন।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, এই বাজেট অধিবেশনের পূর্বেই আমরা একজন সংসদ সদস্যের নৃশংস খুনের ঘটনা জেনেছি। কিন্তু তার দেহাবশেষ না পাওয়ার শোক প্রস্তাব নিতে পারিনি। এই দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের স্বর্ণ-মাদক চোরাচালানি ও অপরাধ জগতের সাথে সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতার সংশ্লিষ্টতার যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে তাতে সংসদের ভাবমূর্তি তো বটেই, সংসদ সদস্য ও রাজনীতির ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তাই কেবল খুনের ঘটনা হিসাবে নয় এহেন বিপজ্জনক অপরাধের সাথে সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক ক্ষমতায় যোগের বিষয়টাও খতিয়ে দেখা দরকার। বিএনপি-জামায়াত আমলে অর্থনীতি-রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে যে লড়াই আমরা করেছি ও জিতেছি তা যেন ভুলে না যাই। নিজেদের আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির সাহস নিয়ে যদি আমরা এগুতে পারি তবেই কেবল প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া যাবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম অর্থপূর্ণ হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে ভারত তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার কথা বলেছে। একে স্বাগত জানাই। কিন্তু তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি না করে এই সহযোগিতা গাছের গোড়া কেটে উপর দিয়ে পানি ঢালার শামিল। ঐ সফরে গঙ্গা চুক্তির নবায়নের কথা এসেছে। তার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু ঐ চুক্তিতে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সংকোশ থেকে খাল কেটে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধির যে বিষয়টি ছিল তা ৩০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। বরং এখন ফারাক্কার ওপরে আরেকটি ব্যারেজ তৈরির কথা এসেছে। আমি আশা করি অভিন্ন নদীর পানি বন্টনে এই সরকারের আমলেই ভারতের সাথে একটি সমাধানে আসা সম্ভব হবে। প্রধানমন্ত্রী সংসদে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বলেছেন। কিন্তু বাজেটে তার জন্য কোন বরাদ্দ নেই।


প্রকাশক: মঞ্জুর হোসেন

সম্পাদক: মিজানুর রহমান

House : 29, Road : 01 Sector : 02, Block :F Aftabnagar, Dhaka:1212 (Opposite China Building) E-mail : deshusdhaka@gmail.com (Advertising & News For Bangladesh)