দিলশাদ নাহার কনা। দেশের নতুন প্রজন্মের জনপ্রিয় শিল্পী। গত ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তুফান’ সিনেমায় ব্যবহৃত ‘দুষ্টু কোকিল’ গান গেয়ে তিনি নতুন করে আলোচনায়। অথচ চলতি বছরের শুরুতে তিনি প্রকাশ করেছিলেন একটি রবীন্দ্র সংগীত। ওই গান নিয়ে তিনি অনেক আশা করলেও সেভাবে সাড়া পাননি। অথচ দুষ্টু কোকিলের বেলায় ঘটেছে অন্য ঘটনা। এ নিয়ে কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আলমগীর কবির
প্রশ্ন: চলতি বছর ভালোবাসা দিবসে আপনার কণ্ঠে একটি রবীন্দ্রসংগীত প্রকাশ হয়েছিল। সাড়া কেমন পেয়েছিলেন?
দিলশান নাহার কনা: রবী ঠাকুরের গান গাওয়া অনেক কঠিন। তাও সাহস করে ওনার চিরায়ত প্রেমের গান ‘ভালোবেসে সখী’ গানে কণ্ঠ দিয়েছিলাম। এ ধরনের অনেক চেনা গান গাইতে নার্ভাসনেস কাজ করে। এ গানগুলো এতো বেশি শোনা মানুষের যে একটু-আধটু ভুলও মার্জনীয় নয়। যারা সংগীতপ্রেমী আছেন, তাদের লিস্টে একেবারেই ঊর্ধ্ব সারিতেই এ গানটি থাকে বলে আমার মনে হয়। পাভেল আরিনের সংগীত পরিচালনায় আগেও কাজ করেছি, কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা সত্যিই অন্যরকম ছিল।
প্রশ্ন: কিন্তু দর্শক সারা কেমন ছিল?
দিলশান নাহার কনা: স্রোতাদের কাছ থেকে ভালোই সাড়া পেয়েছি। তবে প্রত্যাশার সমান না।
প্রশ্ন: অথচ দুষ্টু কোকিল মাস না পেরোতেই ১০০ মিলিয়ন ভিউ। এমনটা হতে পারে আগে ভেবেছিলেন?
দিলশাদ নাহার কনা: প্রথম থেকে এই গান নিয়ে যেভাবে সাড়া পাচ্ছিলাম, তাতে প্রত্যাশা করছিলাম দ্রুতই ১০০ মিলিয়ন ভিউ হবে। রিলিজের পরপর সবচেয়ে কম সময়ে ১ মিলিয়ন ভিউ হয়। এবার ১০০ মিলিয়ন ভিউয়ের মাইলফলক। দুই চ্যানেল মিলিয়ে এই মাইলফলক হয়েছে। এখন অপেক্ষায় আছি দুটি চ্যানেলে আলাদাভাবে এ অর্জনের।
প্রশ্ন: পশ্চিমবঙ্গেও গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কতটা উপভোগ করছেন?
দিলশাদ নাহার কনা: আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে গানটি পছন্দ করেছে, দেশের বাইরেও তেমন। মুম্বাই থেকে আমাকে একজন বলল, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের বাইরেও অনেকে গানটি শুনছে, যেটা সাধারণত দেখা যায় না। বিভিন্ন হোটেলে, রেস্টুরেন্টে বাজছে। এই বিষয়টি ভীষণ ভালো লাগার। এছাড়া শ্রদ্ধেয় রুনা লায়লা ম্যাম প্রশংসা করেছেন। এ ধরনের গানের এক্সপ্রেশনগুলো ওনার কাছ থেকে শেখা। তিনি যখন প্রশংসা করেন, সেটার ভালো লাগা অন্য রকম। সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ করছি।
প্রশ্ন: গানের পেছনের গল্পটা জানতে চাই।
দিলশাদ নাহার কনা: ২০১৬ সাল থেকে আকাশ সেনের সঙ্গে আমার কাজ হচ্ছে। তার সুরে ‘রেশমি চুড়ি’, ‘ও ডিজে’, ‘বৈশাখের বিকেল বেলায়’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গান গেয়েছি। দ্বৈতগানও আছে আমাদের। তুফান টিম প্রথমে আকাশ সেনের সঙ্গে আলোচনা করেছিল। এরপর তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
প্রশ্ন: রেকর্ডিংয়ের সময় আঁচ করতে পেরেছিলেন গানটি এতো জনপ্রিয়তা পাবে?
দিলশাদ নাহার কনা: ভয়েস দেওয়ার সময় গানের হুক লাইনটা খুব ক্যাচি মনে হয়েছিল। এরপর যখন জানতে পারলাম, গানটিতে মিমি চক্রবর্তী ও শাকিব খান অভিনয় করবেন, তখন প্রত্যাশা আরো বেড়ে গিয়েছিল। ট্রেলারে ১০ সেকেন্ড ছিল গানটি। এই ছোট্ট ক্লিপ দিয়েই সবাই রিলস, টিকটক বানাচ্ছিল। সাড়াটা তখন থেকেই পাচ্ছিলাম। আর সিনেমা রিলিজের পর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়লো। সে সময় কিন্তু পুরো গানটি আলাদা করে প্রকাশ করা হয়নি। তবে এতো দ্রুত এতো রেকর্ড করে ফেলবে, সেটা ভাবিনি।
প্রশ্ন: সিনেমার সাফল্যের ক্ষেত্রে গান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে?
দিলশাদ নাহার কনা: সিনেমা ও গান একে অপরের পরিপূরক। গানের জনপ্রিয়তা যেমন একটি সিনেমার সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে, তেমনি অনেক সময় সিনেমার কারণে গান জনপ্রিয়তা পায়। সিনেমার গানের সঙ্গে এর চিত্রায়ণ, কোরিওগ্রাফি, শিল্পীদের অভিনয়-সবকিছু দেখেন দর্শক।
প্রশ্ন: সিনেমায় আপনার অনেক জনপ্রিয় গান আছে। তবে গত কয়েক বছরে প্লেব্যাকে কম পাওয়া গেছে আপনাকে। এর কারণ কী?
দিলশাদ নাহার কনা: এটার কারণ তো আমি বলতে পারব না। হয়তো আমার টাইপ গান কম হয়েছে, তাই আমাকে ডাকা হয়নি। আবার হয়তো হবে। তবে মাঝেমধ্যে গ্যাপ থাকাটাও কিন্তু ভালো। নতুন কিছুর জন্য প্রস্তুত হওয়া যায়।
প্রশ্ন: অনেকে অভিযোগ করেন, সিনেমায় প্লেব্যাকের ক্ষেত্রে একধরনের সিন্ডিকেট কাজ করে এখানে। নির্দিষ্ট শিল্পীরাই ঘুরেফিরে সুযোগ পান। এ বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য?
দিলশাদ নাহার কনা: আমার কাছে এসব কিছু মনে হয় না। আমি যেহেতু সিন্ডিকেট মেইনটেইন করি না, তাই এসবের কিছু বুঝিও না। গান হচ্ছে শান্তির বিষয়। এর মধ্যে যদি কোনো ধরনের পলিটিকস আসে, সেটি নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি, যেটা আমার কাছে আসার কথা, সেটা আমি পেয়েছি। আর যেটা আসার কথা নয়, সেটা আসেনি। নিজের অবস্থান নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।
প্রশ্ন: আপনি বিভিন্ন ধরনের গান করেন। কখনো রোমান্টিক, কখনো স্যাড, কখনো আইটেম ঘরানার, আবার রবীন্দ্রসংগীতও করেন। আপনার পছন্দের ক্ষেত্র কোনটি?
দিলশাদ নাহার কনা: আমার কমফোর্ট জোনের জায়গা হচ্ছে গান গাওয়া। যে কোনো গান ওই গানের মতো করে গাওয়ার চেষ্টা করি। অভিনয়শিল্পীরা অভিনয়ের সময় যেমন চরিত্র পরিবর্তন করেন। একেক সিনেমা বা নাটকে একেক রকম চরিত্র। তেমনি শিল্পী হিসেবে আমাকেও বিভিন্ন প্রয়োজনে কণ্ঠ পরিবর্তন করতে হবে, এক্সপ্রেশন পরিবর্তন হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। গান গাওয়ার সময় সেটাই করি। আমি ছোট থেকেই ভার্সেটাইল শিল্পী হতে চেয়েছি, এখনো সেটাই হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: কনসার্টের ব্যস্ততা কেমন চলছে?
দিলশাদ নাহার কনা: এখন তো অফসিজন। এই সময়ে কনসার্ট কম হয়। এরপরও টুকটাক ব্যস্ততা আছে। আগামীকাল ঢাকায় একটি কনসার্ট আছে। ২৬ জুলাই আরেকটি প্রোগ্রামে গাওয়ার কথা। বৃষ্টির কারণে এই সময়ে ওপেন এয়ার কনসার্ট সাধারণত হয় না। শোয়ের সিজন শুরু হবে আগামী নভেম্বর থেকে।
প্রশ্ন: এর মধ্যে নতুন কী কী গানে কণ্ঠ দিলেন?
দিলশাদ নাহার কনা: কয়েকটি সিনেমায় গেয়েছি। সামনেই সেগুলো মুক্তি পাওয়ার কথা। দুটি একক গান রেকর্ড করেছি। এ বছরই একটি গানের মিউজিক ভিডিও করার ইচ্ছা আছে। এছাড়া নিয়মিত নাটকের গানে কণ্ঠ দিচ্ছি। আমি তো আসলে স্টুডিও আর্টিস্ট। নানা ধরনের টাইটেল সং, প্রজেক্টের গান গাইতেই থাকি।